কেমন হল মাধ্যমিকে পাঠভবনের ফল? কলকাতার নামী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী বলছেন

কেমন হল মাধ্যমিকে পাঠভবনের ফল? কলকাতার নামী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী বলছেন

কলকাতার নামী স্কুল পাঠভবন। এই বছরের মাধ্যমিকেও ভালো ফল করেছে এই স্কুল। এখান থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে ১৯০ জন। তার মধ্যে ১১২ জন ছেলে, মেয়ে ৭৮ জন। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে দু’জন। অনিরুদ্ধ শীল এবং ঋদ্ধিজিৎ রায়। দু’জনই ৬৮১ নম্বর পেয়েছে। অনীক দাস অধিকারী ৬৮০, স্বস্তিকা পাল ৬৭৬ নম্বর পেয়েছে। স্বস্তিকা ছাত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক নম্বর পেয়েছে। এর পরে শ্রুবা দত্ত পেয়েছে ৬৬৯ নম্বর।

পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা ভারতী চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘স্কুলের বহু পরীক্ষার্থীই বহু বিষয়ে ১০০-তে ১০০ পেয়েছে। অনীক দাস অধিকারী বাংলায় ৯৭ পেয়েছে। যা খুবই ভালো নম্বর। অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান,জীবনবিজ্ঞান, ভূগোলের মতো বিষয়েও বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থী ১০০-র মধ্যে ১০০ পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই বছরের স্কুলের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাশের হার ৯৯ শতাংশ মতো।’ তিনি এর পাশাপাশি জানিয়েছেন, এই বছর পাঠভবন থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষম কয়েক জন পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছিল। তারাও সফলভাবে পাশ করেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকশিক্ষিকাদের আশা পূরণ করতে পেরেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘পাঠভবন শুধুমাত্র নম্বরের দৌড়ের কথা ভাবে না। একটি শিশুর সার্বিক উন্নয়নের কথা ভাবে। আগামী দিনেও সেই ভাবনা, সেই শিক্ষাদর্শন মাথায় রেখেই এই স্কুল এবং তার ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে যাবে বলে আশা।’

পাঠভবন স্কুলের বাংলার শিক্ষক সপ্তর্ষি রায়ের কথায়, ‘প্রথমেই আমার নিজের বিষয়ের কথা বলব। এবার স্কুল থেকে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯৭। এটি বিরাট নম্বর। সাহিত্যের মতো বিষয়ে এই নম্বর পাওয়া মুখের কথা নয়। সেটি পেয়েছে অনীক দাস অধিকারী। ইংরেজিতেও ১০০-র মধ্যে ১০০ উঠেছে। অনিরুদ্ধ শীল সেটি পেয়েছে।’ সপ্তর্ষি রায় এর পরে বলেন, ‘যেহেতু আমি সাহিত্যের শিক্ষক, তাই সাহিত্য বিভাগের এই অভূতপূর্ব ফলাফল আমাকে তো আনন্দ দিয়েছেই, পাশাপাশি আমাদের স্কুলের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের কলাবিভাগে পড়াশোনায় উৎসাহ জোগাবে এই নম্বর। পাঠভবনের একাদশ শ্রেণীর কলাবিভাগ একটি বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন বিভাগ। প্রতি বছর এই বিভাগে বহু ভালো ছাত্রছাত্রীদের পাই। আমরা নম্বরে বিশ্বাস করি না। তবু নম্বর তো একটা মাপকাঠি বটেই। তার নিরিখে অনেকেই বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, এখানকার ছাত্রছাত্রীরা সাহিত্য, সংস্কৃতি, সৃষ্টি এবং কৃষ্টি বজায় রেখে আমাদের প্রতি বছর এই ভালো নম্বর এনে দেয়। সেটিই আমাদের আরও ভালো করে পড়ানোই উৎসাহ দেয়।’

রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এবারের মাধ্যমিকে স্কুলের ফলাফল বেশ ভালো। ভৌতবিজ্ঞানে ১০০-র মধ্যে সর্বোচ্চ ১০০ উঠেছে। পেয়েছে যাজ্ঞসেনী মুখোপাধ্যায়। ৯০-এর উপরে তো বটেই ৯৫-এর উপরেও নম্বর পেয়েছে বহু ছাত্রছাত্রী। স্কুলে যেভাবে সবাইকে পড়ানো হয়, সেটি ওদের কাজে লেগেছে বলেই আমার বিশ্বাস।’

স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকদের একজন অনিরুদ্ধ শীল। সে পেয়েছে ৬৮১। তার কথায়, ‘আমার এই সাফল্যের জন্য বাবা-মার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমি নিজে পড়াশোনাটাকে বোঝা হিসাবে না নিয়ে সেটি উপভোগ করার চেষ্টা করেছি। পরের ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের সেই পরামর্শই দেব। তাহলে তারাও হয়তো ভালো নম্বর পাবে।’

৬৮১ নম্বর পেয়ে স্কুলের আর এক সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক ছাত্র ঋদ্ধিজিৎ রায়ের কথায়, ‘স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, গৃহশিক্ষক এবং বাবা-মায়ের অবদান এর পিছনে সবচেয়ে বেশি। আর পরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বলব, ৬৮০ বা তার বেশি নম্বর পেতে খুঁটিয়ে পাঠ্যবই পড়তে, পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন আসে, তার ধরন বুঝে নিজেকে প্রস্তুত করতে। এর কোনও ব্যতিক্রম নেই। এভাবেই শুধু সাফল্য পাওয়া যেতে পারে।’

৬৮০ নম্বর পেয়ে স্কুল থেকে মাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থানাধিকারি অনীক দাস অধিকারী জানিয়েছে, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিরন্তর পরিশ্রম করে যেভাবে তাদের সাহায্য করেছে, সেটিই এই নম্বর পাওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি করে কাজ করেছে। তার কথায়, ‘প্রত্যেক বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই আমাদের বুঝিয়ে দিতেন কীভাব ওই ওই বিষয়ে ভালো নম্বর পেতে হবে। অঙ্ক আমার প্রিয় বিষয়। ওটি নিয়ে আগামী দিনে পড়াশোনা করতে চাই। বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষাকারা সেই বিষয়ে পরামর্শও দিচ্ছেন।’ ভালো ফল করার জন্য পরের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তার পরামর্শ, ‘রুটিন মেনে পড়াশোনা করতে হবে। বিজ্ঞানের বিষয় লিখে লিখে পড়তে হবে। অঙ্ক রোজ অনুশীলন করতে হবে। সব বই খুঁটিয়ে পড়তে হবে। এবং বইয়ের গোড়ায় লেখা সিলেবাসটাও ভালো করে দেখে নিতে হবে।’

ভৌতবিজ্ঞানে ১০০ এবং মোট ৬৩৫ পাওয়া যাজ্ঞসেনী মুখোপাধ্যায় জানিয়েছে এই নম্বর তোলার রহস্য। তার কথায়, ‘মাধ্যমিকের আগে রোজ যদি ১৬ ঘণ্টা পড়তাম, তাহলে তার মধ্যে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ভৌতবিজ্ঞান নিয়ে বসতাম। বিষয়টি আমার এতটাই প্রিয়। যখন আমার কোনও কিছু ভালো লাগত না, তখনও এটি পড়তে ভালো লাগত। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গৃহশিক্ষকরা আমায় নানা বই সাজেস্ট করে সাহায্য করেছেন। বইয়ের প্রতিটি লাইন পড়েছি। অনুশীলনগুলি ভালো করে করেছি। এতেই ভালো নম্বর উঠেছে।’

স্কুলের আর এক ছাত্র শ্রেয়ান ঘোষ মাধ্যমিকে ৬৬৭ নম্বর পেয়েছে। সে জানিয়েছে, ক্লাস নাইন থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। অঙ্ক এবং ভৌতবিজ্ঞান তার প্রিয় বিষয়। তার কথায়, ‘এই সাফল্যের জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরাট অবদান। তাঁরা সাক্ষাতে এবং ফোনে সব সময় সাহায্য করতেন। তার ফলই এই নম্বর।’

(Feed Source: hindustantimes.com)