ঢাকা : জলের কাছে এসেও নিভল না আগুন। অভিযোগ, বাংলাদেশের ঢাকার অভিজাত অঞ্চল ধানমণ্ডিতে হিংসার আগুনে ভস্মীভূত জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘জলের গান’-এর প্রধান মুখ রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি। এই অভিযোগ ফেসবুকে তাদের পেজে পোস্ট করেছে ‘জলের গান’। মাটির সোঁদা গন্ধমাখা এই গানের দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ৩২, ধানমণ্ডি ঠিকানার বাড়িটি নিছক রাহুল আনন্দের বাসস্থানই ছিল না। ছিল তাঁদের দলের কাছে স্বপ্ন ও আনন্দের ঠিকানা।
পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এই বাড়িতেই তৈরি হয়েছে অসংখ্য গান, সুর। জন্ম নিয়েছে রাহুলের মস্তিষ্কপ্রসূত অগণিত বাদ্যযন্ত্র। এই বাড়িই ছিল জলের গান-এর অফিশিয়াল স্টুডিও। রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং-এর সব মুহূর্ত আজ ভস্মীভূত।
পোস্টে আরও জানানো হয়েছে, রাহুল এবং ঊর্মিলা শুক্লার সেই বাড়ির সাদা রঙের মূল ফটক ছিল আক্ষরিক অর্থেই অবারিত দ্বার। যাতে যে কেউ যে কোনও প্রয়োজনে রাহুলের কাছে পৌঁছতে পারেন। সেই বাড়িকেই ক্ষোভের আগুন গ্রাস করেছে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে। বাড়ির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই ধ্বংস হয়েছে দলের সব বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র থেকে শুরু করে পারিবারিক ব্যবহার্য আসবাবপত্র।
ভাগ্যক্রমে প্রাণরক্ষা হয়েছে রাহুল আনন্দ এবং তাঁর পরিবারের। তাঁদের চোখের সামনে ক্রোধ ও প্রতিহিংসার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলেছে তিলে তিলে তৈরি করা স্বপ্নের সংসার। এককাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে রাহুল এবং তাঁর পরিবারকে। এই দগ্ধ স্মৃতি গভীর ক্ষত তৈরি করেছে রাহুলের কিশোর পুত্রের মনে-এই আক্ষেপ স্পষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে।
এই প্রতিহিংসার আগুন কেন? তার উত্তর খুঁজে চলেছে জলের গান-এর শৈল্পিক সত্তা। তাঁদের পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারবো। কিন্তু, এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাবো কিভাবে! কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই
স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে…’।
সবকিছুর শেষেও সকল প্রাণের ভাল থাকার কামনা করেছে এই গানের দল। তাদের বার্তা, ‘ নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু, নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারো স্বপ্ন ভেঙে না দেই!’ ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই পোস্টের সঙ্গে রয়েছে ধানমণ্ডির ওই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গানের ভিডিও। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে এই ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তাঁদের কথায়, উত্তাল সময়ের সঙ্গে তাঁরাও একাত্ম ছিলেন গানে গানে। তাই শেষ কাজটিই সকলের জন্য আনন্দ উপহার।
কিন্তু কবে শান্ত হবে পরিস্থিতি? আবার কবে পাখির মতো সারা ক্ষণ উড়ে উড়ে বেড়াবে জলের গানের সুর? সেই প্রশ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে এই বাংলা ব্যান্ডের শ্রোতাদের। মনখারাপের বৃক্ষতলে তাঁদের চোখে ঘুম আসে না, ঘুমও স্বার্থপর।
(Feed Source: news18.com)