দু’সপ্তাহে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ৪ গণ্ডার শাবক, নতুন সমস্যা জলদাপাড়ায়

দু’সপ্তাহে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ৪ গণ্ডার শাবক, নতুন সমস্যা জলদাপাড়ায়

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের একশৃঙ্গ গণ্ডারের সংসারে দেখা গেল নতুন সমস্যা। গত দু সপ্তাহে পর পর ৪টি গণ্ডার শাবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে। তবে মনে করা হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ কী হলো যার ফলে এইভাবে পরপর গণ্ডারের মৃত্যু হচ্ছে জলদাপাড়া অরণ্যে?

দুদিন আগেই জলাভূমিতে আটকে থাকা একটি অসুস্থ গণ্ডার শাবককে বাঁশের মাচায় করে উদ্ধার করেছে বনদপ্তর। ওই অসুস্থ গণ্ডারটিকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করার পর ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, ‘গণ্ডার শাবকটি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। বাঁচার সম্ভাবনা একদমই নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করে চলেছি।’

এই প্রসঙ্গে বন দপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে, অসুস্থ গণ্ডারটির মধ্যে যে উপসর্গ দেখতে পাওয়া গেছে, ঠিক একই উপসর্গ ছিল বাকি মৃত গণ্ডারগুলির মধ্যেও। হঠাৎ করে ওই গণ্ডারগুলির পেছনের পা দুটি প্যারালাইজড হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর কারণ অ্যানথ্রাক্স বলে আশঙ্কা করা হলেও, মৃত গণ্ডারগুলির দেহের বিভিন্ন অংশের নমুনা পরীক্ষার পর সেই তথ্য খারিজ করে দিয়েছে বেলগাছিয়া ল্যাবরেটরি।

বেলগাছিয়া ল্যাবরেটরির তরফ থেকে অ্যানথ্রাক্স বিষয়টিকে খারিজ করে দেওয়ার পর নতুন আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রাথমিক ময়নাতদন্ত থেকে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তাতে দেখা গেছে, ওই গণ্ডারগুলির অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে টেপ ওয়ার্ম অথবা ফিতা কৃমি জমা হয়েছিল। এই ফিতা কৃমির কারণেই গণ্ডারগুলি প্যারালাইজড হয়েছে কিনা, সেটাই এখন জানার চেষ্টা করছেন বন্যপ্রাণী চিকিৎসক এবং বনকর্তারা।

২০২৪ সালের আগে ২০১৮ সালে জলদাপাড়ায় পরপর ছটি গণ্ডারের মৃত্যুর পর সেই নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, গণ্ডারগুলি অ্যানথ্রাক্স- এ আক্রান্ত ছিল। রাজ্যের তৎকালীন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কথা স্বীকারও করে নিয়েছিলেন। সম্প্রতি জলদাপাড়ায় পরপর গণ্ডারের মৃত্যুর পরে তাই প্রাথমিকভাবে অ্যানথ্রাক্স – এর আশঙ্কাই করা হয়েছিল, যদিও তা এখন পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণী শাখার বন্যপ্রাণ ভাস্কর জেডি বলেন, ‘২০১৮ সালের ঘটনা মাথায় রেখে এই মৃত গণ্ডারগুলির দেহের নমুনা বেলগাছিয়া পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স – এর কোনও নমুনা পাওয়া যায়নি। গণ্ডারগুলির মৃত্যুর কারণ ঠিক কী, সেটাই এখন খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

জলদাপাড়ার বন্যপ্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা বলেন, ‘গৃহপালিত শুয়োরের মাধ্যমে কোনওভাবে এই গণ্ডারগুলির শরীরে টেপ ওয়ার্ম ছড়িয়ে পড়েছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবাদি পশুর সঙ্গে শুয়োরের পাল প্রায়ই জঙ্গলে ঢুকে পড়ে, সেখান থেকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই সমস্যা। তবে কৃমি নাশক কোনও প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, তাই এই রোগ মুক্তির একমাত্র উপায় হল গণ্ডারগুলিকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো, যদিও সেই কাজটি একপ্রকার অসম্ভব। ওষুধ খাওয়াতে গেলেই গণ্ডার তেড়ে যায়, তাই আমরা চেষ্টা করছি ইনজেকশনের মাধ্যমে যদি কোনও ভাবে ওষুধ গণ্ডারদের শরীরে প্রবেশ করানো যায় কি না।’

(Feed Source: hindustantimes.com)