জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এ কী চলছে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে? কী চলছে ভারতীয় উপমহাদেশে? প্রথমে শ্রীলঙ্কা, পরে বাংলাদেশ, এবার পাকিস্তান। এমনিতেই পাকিস্তানের পরিস্থিতি বেশ কিছু দিন ধরেই খুব নড়বড়ে হয়ে আছে। তবে, পাকিস্তানে এতদিন ঠিক শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের ভঙ্গিতে কোনও অভ্যুত্থান হয়নি। এবার কি সেটাও হতে শুরু করল? না হলে কেন সহসা বালুচিস্তানের একটা গোষ্ঠী পাকিস্তানকে আক্রমণ করে বসবে?
আর এর জেরে মাত্র ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের একটা গোটা প্রদেশই সেই দেশের থেকে হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এমন আক্রমণ শানিয়েছিল বালুচিস্তান। একবার নয়, একাধিকবার। পাকিস্তানের মধ্যেই অবশ্য রয়েছে আর এক পাকিস্তান। এর নাম, সবাই জানে, ‘পাক-অধিকৃত বালুচিস্তান’। স্বাধীন পাকিস্তানের গত ৭৮ বছরে ইতিহাসে যা সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রথমে বালুচিস্তান-পাক পঞ্জাব সীমানায় যাত্রীবাহী বাস থামায় জঙ্গিরা। যাত্রীদের পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে ২৩ জনকে গুলি করে খুন করা হয়। সবাই পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা। দ্বিতীয় ঘটনা বালুচিস্তানের কালাত জেলায়। পরপর থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়। প্রায় ২৫টি থানায় হামলা চলে। পাক সেনার এক অস্থায়ী ক্যাম্পও উড়িয়ে দেয় এই জঙ্গিরা। কোয়েট্টায় সেনা ক্যাম্পে দীর্ঘক্ষণ গুলির লড়াইয়ে ১৪ জন সেনাকর্মীর মৃত্যুর কথাও জানিয়েছে পাক সেনা। এর পরের ঘটনা বালুচিস্তানের সীমান্ত এলাকায়। সেখানে পরপর রেললাইন উড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা। সব ঘটনার দায় নিয়েছে বালুচ লিবারেশন আর্মি-সহ তিনটি সংগঠন।
কিন্তু কেন পাক-বালুচ সংঘর্ষ, লড়াই?
আসলে বালুচিস্তান কোনওদিন পাকিস্তানের অংশ ছিল না। হয়তো স্বাভাবিক ভাবেই একদিন স্বাধীনও হত বালুচিস্তান, তৈরি হত বালুচদের নিজের দেশ, স্বভূমি। কিন্তু ঘটনাচক্রে তা হয়নি। তারা পাকিস্তানে জুড়ে গিয়েছে। আর পাকিস্তানের সঙ্গে এই জুড়ে যাওয়াটাই বালুচেরা কোনওদিনই মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। প্রায় ৮০ বছরের মাথাতেও তাই পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। পাকিস্তানের হাত থেকে কি স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পারবেন বালুচরা? সময়ই তা বলবে। তবে আপাতত রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু, মৃত্যু ঘটছে, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
সরকারি ভাবে পাকিস্তানের বক্তব্য মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ৬২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এঁদের মধ্যে ১৮ জনই পাক সেনাসদস্য। ২১ জন পুলিস, বাকিরা সাধারণ মানুষ। তবে আক্রমণকারী জঙ্গিদেরও মৃত্যু হয়েছে। গুলির লড়াইয়ে অন্ততত ২২ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। বালুচ লিবারেশন আর্মি-সহ বাকি হামলাকারী গোষ্ঠীদের সম্মিলিত বক্তব্য মোতাবেক, তাদের হামলায় একশোরও বেশি সেনা ও পুলিসের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে বালুচিস্তানের এই সহিংস আচরণের পরেই জরুরি বৈঠকে বসে শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভা। সিদ্ধান্ত হয় বালুচিস্তানের নিরাপত্তা পাক সেনার স্পেশাল স্কোয়াডের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, ধোয়া তুলসীপাতা নয় শাহবাজ সরকারও। মঙ্গলবার বালুচ নেতা আকবর বুগতির মৃত্যুদিবস ছিল। এদিকে ওই দিনই বালুচিস্তানে সব রকমের জমায়েত নিষিদ্ধ করে পাক প্রশাসন। বালুচদের বিভিন্ন সংগঠন তখনই জানিয়ে দিয়েছিল, পাক প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত তাদের (বালুচদের) নিজস্ব সংস্কৃতি ও মানবাধিকারের উপর আঘাত। ঘটনাচক্রে সেইদিনই বালুচিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী হামলা হল।
(Feed Source: zeenews.com)