মাছির মস্তিষ্কের ম্যাপ দেখে মানবদের মাথায় কী চলে, বোঝার চেষ্টা বিজ্ঞানীদের

মাছির মস্তিষ্কের ম্যাপ দেখে মানবদের মাথায় কী চলে, বোঝার চেষ্টা বিজ্ঞানীদের

 

মাছিকে সাধারণত ঘৃণার চোখে দেখা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মাত্র এক মিলিমিটার চওড়া এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির মস্তিষ্কে সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন। এই একটি সামান্য মাছির ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক যে কীভাবে মানুষের মস্তিষ্কের অচেনা জগতের খোঁজ দিতে পারে, তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

নিউরোবায়োলজিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বিজ্ঞান। একটি মাছির (ফ্রুট ফ্লাই) পুরো মস্তিষ্কের একটি সুক্ষ মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, এই মানচিত্র দেখে মানুষ সহ প্রত্যেকটি প্রাণীর মস্তিষ্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এটি অন্যান্য প্রজাতির মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরির পথও খুলতে পারে।

তবে, মাছির মস্তিষ্কের এই মানচিত্রে, বিজ্ঞানীরা ১,৩৯,০০০-এরও বেশি নিউরনের (মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ) বিবরণ দিয়েছেন। এই মাছির বৈজ্ঞানিক নাম ‘ড্রোসোফিলা মেলানোগাস্টার’। এটি প্রায়শই নিউরোবায়োলজি গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতার পিছনে কী সংকেত রয়েছে, তা বোঝার জন্যই এই গবেষণা করা হয়েছে।

শুধু মাছির মস্তিষ্কই কেন

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্স এবং কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান সিউং বলেন, হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে আমরা কেন শুধু ফ্রুট ফ্লাই ব্রেইন নিয়ে এত যত্নশীল। মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, আমরা যদি এর মাধ্যমেই বুঝতে পারি, তবে এটি আমাদের সমস্ত জীবের মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক কিছু জানিয়ে দেবে।

গবেষকরা যে মানচিত্রটি তৈরি করেছেন তা একটি তারের ডায়াগ্রাম, এটি একটি কানেক্টোম নামে পরিচিত। এর আগে এই ধরনের গবেষণা সাধারণ জীবের উপর করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিকভাবেই ফ্লাইওয়্যার কনসোর্টিয়াম নামক বিজ্ঞানীদের একটি দল এই গবেষণাটি করেছিলেন। প্রিন্সটনের স্নায়ুবিজ্ঞানী মালা মূর্তিও এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।

মানুষের মস্তিষ্কের খোঁজখবর একটি মাছির মস্তিষ্কের মাধ্যমে কীভাবে পাওয়া সম্ভব

মূর্তি বলেন, ‘মাছি হল স্নায়ুবিজ্ঞানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল সিস্টেম। তাদের মস্তিষ্ক আমাদের মস্তিষ্কের মতো একই সমস্যার সমাধান করে। তারা হাঁটা এবং উড়ে যাওয়া, কিছু শেখার ইচ্ছা এবং স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত আচরণ, পথ খুঁজে নেওয়া, খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদির মতো জটিল কাজও করে। এমনকি এই সামান্য পোকা সামাজিক মিথস্ক্রিয়াগুলির মতো আচরণেও সক্ষম, যা প্রিন্সটনে আমার ল্যাবে দেখা গিয়েছিল।’

মাছির মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরির কাজে, একজন গবেষক মাছির হাঁটার সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের সার্কিট বিশ্লেষণ করেছেন। আবিষ্কার করেছেন কীভাবে হাঁটতে হাঁটতে থেমে যায় মাছি। আরও একটি গবেষণায় মাছির স্বাদ এবং স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে যুক্ত সার্কিট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ থেকে জানা গিয়েছে, মাছি তার অ্যান্টেনা থেকে ময়লা অপসারণ করতে নিজের পা ব্যবহার করে। আরও একটি গবেষণায় এর ভিজ্যুয়াল সিস্টেম অধ্যয়ন করা হয়েছে। এ থেকে আবার জানা গিয়েছে যে কীভাবে মাছির চোখ গতি এবং রং থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।

(Feed Source: hindustantimes.com)