নয়াদিল্লি: টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ গাড়িতে তুলছে বলে শেষ বার দেখা মিলেছিল। সেই থেকে ‘নিখোঁজ’ ইরানের বিবসনা কলেজ পড়ুয়া আহিু দরিয়াই (Ahoo Daryaei). তিনি কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে, সেই নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা পৃথিবী। এবার সেই নিয়ে মুখ খুলল দেশের সরকার। আহুকে ‘অস্থিরমতি’ বলে উল্লেখ করল তারা। তাঁর ‘চিকিৎসা’ চলছে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী চিকিৎসা চলছে, তা খোলসা করা হয়নি। (Ahoo Daryaei)
ইরানের রাজধানী তেহরানের ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া আহু। হিজাব না পরা নিয়ে নীতি পুলিশের খবরদারিতে শনিবার জামা-কাপড় খুলে প্রতিবাদ জানান তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও-য় দেখা যায়, অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসের বাইরে কখনও বসে রয়েছেন তিনি, কখনও আবার পায়চারি করছেন। এর পর পুলিশ পৌঁছে তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, এমন ভিডিও-ও সামনে আসে। কিন্তু তার পর থেকে আর খোঁজ মিলছিল না আহুর। (Iran Protests)
সেই নিয়ে উদ্বেগ এবং জল্পনার মধ্যেই এবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন ইরান সরকারের মুখপাত্র ফতেমা মহাজেরানি। আহুকে তিনি ‘অস্থিরমতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। আহুকে শাস্তিপ্রদানের পরিবর্তে বিষয়টিকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “অস্থিরমতি ওই তরুণীর সমস্যা রয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” ফতেমা জানিয়েছেন, পুলিশি হেফাজত থেকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আহুকে। কিন্তু কোন চিকিৎসাকেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে আহুকে, কী চিকিৎসা হচ্ছে তাঁর, তা খোলসা করেননি তিনি।
Reports in Iranian state media that the university student was taken to an unnamed psychiatric hospital are very alarming, Amnesty International has previously documented how Iran’s authorities equate defying compulsory veiling with “mental disorders” that need “treatment”. https://t.co/MxNwiCMOzW
— Amnesty Iran (@AmnestyIran) November 5, 2024
ফের কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন আহু, ইউনিভার্সিটিতে কি ফের দেখা যাবে তাঁকে? জবাব দিতে গিয়ে ফতেমা বলেন, “ইউনিভার্সিটিতে ওঁর ফেরা নিয়ে এত শীঘ্র কিছু বলা সম্ভব নয়। ওঁর স্বামী যে ভিডিও দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট যে, পরবর্তী পদক্ষেপের আগে ওঁর চিকিৎসার প্রয়োজন।” যে ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া আহু, তাদের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মানসিক ভাবে অসুস্থ আহু। মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তাঁকে চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আহুর দুই সন্তান রয়েছে, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করা হয় ইউনিভার্সিটির এক আধিকারিকের তরফে।
যদিও ইরানের বিশিষ্ট সমাজকর্মী মাসিহ্ আলিনেজাদ অন্য দাবি করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘ইউনিভার্সিটির নীতি পুলিশ হিজাব পরার রীতিনীতি নিয়ে হেনস্থা করছিল এক পড়ুয়াকে। কিন্তু ওই পড়ুয়া মাথা নোয়াননি, বরং নিজের শরীরকেই প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসে পায়চারি করে কট্টর শাসকের বিরোধিতা করেছেন, যে শাসক মেয়েদের শরীরের উপরও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়। ওঁর (আহু) এই তীব্র প্রতিবাদ ইরানের মেয়েদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে উদ্বু্দ্ধ করবে। হ্যাঁ, যে সরকার মাথার চুল দেখা যাওয়ার জন্য মেয়েদের হত্যা করে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজেদের শরীরকেই ব্যবহার করি আমরা’।
ইরান সরকার এবং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন অনেকেই। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন আহুর পরিচিতরা। জানিয়েছেন, একেবারেই মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন না আহু। টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আহুকে মারধর করে বলেও অভিযোগ এমন পরিস্থিতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তরফে অবিলম্বে আহুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ প্রতিনিধি মেই সাতো জানিয়েছেন, তিনিও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। ইরানের সাধারণ মানুষও আহুর মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন। কিন্তু আহুর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকেই। ইরানে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কড়া বিধি বলবৎ রয়েছে। জনসমক্ষে মাথা ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক তাঁদের। এর আগে, ২০২২ সালে হিজাব ‘সঠিক ভাবে না পরার’ জন্য মাহসা আমিনি নামের এক তরুণীকে হেফাজতে নিয়ে যায় নীতি পুলিশের দল। এর পর তাঁর দেহ পাওয়া যায়। সেই নিয়েও দীর্ঘ প্রতিবাদ, আন্দোলনের সাক্ষী হয় ইরান। মাথার চুল কেটেও প্রতিবাদ জানান ইরানের মেয়েরা। সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে আহুকে নিয়েও আশঙ্কিত সকলে।
(Feed Source: abplive.com)