১৯৬৯ সালে কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করেছিল ব্রিটেন। এখন ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল এটির। কিন্তু হল ঠিক উল্টোটা। অজান্তেই অন্য দেশে পৌঁছে গেল এটি। কেন, তার উত্তর অজানা।
সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা
ব্রিটেনের প্রাচীনতম কৃত্রিম উপগ্রহ স্কাইনেট ১এ নিয়ে বড় খবর সামনে এসেছে। আচমকাই পথ হারিয়ে ফেলেছে ১৯৬৯ সালে উৎক্ষেপণ করা ইউকে স্যাটেলাইটটি। ভারতের ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, পৌঁছে গিয়েছে আমেরিকায়। ব্রিটিশ সৈন্যদের সামরিক যোগাযোগের সুবিধার জন্য, স্কাইনেট ১এ পূর্ব আফ্রিকায় মোতায়েন করা হয়েছিল। এর ওজন ছিল আধা টন। কিন্তু এখন এটি আর কাজ করছে না বলেই জানিয়েছেন স্পেস কনসালট্যান্ট ডক্টর স্টুয়ার্ট। এমন পরিস্থিতিতে সবথেকে আতঙ্কের বিষয় হল, অন্য কোনও স্যাটেলাইট ও মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে স্কাইনেট ১এ-র ধাক্কা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কৃত্রিম উপগ্রহ কবে তার পথ ভুলেছে
উল্লেখ্য, পুরনো ব্রিটিশ স্যাটেলাইট স্কাইনেট ১এ কবে তার পথ পাল্টেছে, তার কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। কে তার পথ পরিবর্তন করেছে, তাও সম্পূর্ণ অজানা। কারণ প্রমাণ দেখায় যে এটি ১৯৭০ এর দশকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পশ্চিমে সরানো হয়েছিল, তবে কে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, এটি পূর্ব দিকে এবং ভারত মহাসাগরের দিকে চলে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ মহাকর্ষীয় শক্তির কারণে ওইদিকেই টান অনুভব করার কথা ছিল এটির। কিন্তু তার পরিবর্তে, নিজের আসল অবস্থান থেকে অনেক দূরে, ১এ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরে ২২,৫৩৯ মাইল অর্থাৎ ৩৬০০০ কিমি উচ্চতায় ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা এটি ঠিক কোথায় আছে, তা জানতে পারেননি।
আমেরিকানরা প্রাথমিকভাবে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করত
উল্লেখ্য, আমেরিকার ফিলকো ফোর্ড অ্যারোস্পেস কোম্পানি স্কাইনেট তৈরি করেছিল, সেই কোম্পানিও এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তৎকালীন সময়েও মার্কিন বিমান বাহিনীর ডেল্টা রকেটের মাধ্যমে ১এ-কে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। স্কাইনেট প্রোগ্রাম নিয়ে ডক্টর অ্যারন বেটম্যানের গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে, স্কাইনেট ১এ ব্রিটিশদের চেয়ে বেশি আমেরিকান, কারণ এটি তৈরি এবং উৎক্ষেপণের পিছনে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকাই।
৮০ বছরের গ্রাহাম ডেভিসন জানান, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে হ্যাম্পশায়ারের আরএএফ ওখানগার থেকে স্কাইনেট ১এ পরিচালনা করেছিলেন তিনি। এই স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আরও বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, আগে আমেরিকানরাই মূলত কক্ষপথে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করত। আমাদের কোনও সফ্টওয়্যার তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করেই একমাত্র আরএএফ-এর কাছে নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করত। তাই, সেখানে নিয়ন্ত্রণ ভাগ করা হয়েছিল। কিন্তু আমার এটা মনে নেই যে স্কাইনেট ১এ-কে কখন বা কেন আমেরিকানদের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যদিও ইউসিআই থেকে পিএইচডি গবেষক রাচেল হিল ব্যাখ্যা করেছেন যে ওখানগার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে আমেরিকানরা সাময়িকভাবে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। তিনি আরও বলেন যে স্যাটেলাইটের অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হতে পারে এটাও।
বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে স্কাইনেট ১এ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃত্রিম উপগ্রহ স্কাইনেট ১এ-র ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে যে কোনও উপগ্রহ প্রতিদিন ৪ বার সংঘর্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পথ হারানো এই কৃত্রিম উপগ্রহ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপার্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মরিবা জাহ সতর্ক করে বলেছেন, খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে স্কাইনেট ১এ স্যাটেলাইট। কারণ, মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের টুকরোগুলো অনেকটা টিকিং টাইম বোমার মতো। এটি বিস্ফোরিত হলে বা আরও কিছুতে আঘাত করলে তখন এটি হাজার হাজার ধধ্বংসাবশেষ তৈরি করে। এটি তখন অন্য বড় কিছুর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যা আমাদের এটি যে করেই এড়াতে হবে।
(Feed Source: hindustantimes.com)