গ্যাংস্টার লরেন্সের ভাই আনমোলকে আমেরিকায় গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাকে ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সালমান খানের বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ আনমোলের বিরুদ্ধে। গায়ক সিধু মুসেওয়ালা খুনের ঘটনায়ও উঠে আসে আনমোলের নাম।
দিল্লি এবং মুম্বাই পুলিশ এখনও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, তবে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই সপ্তাহ আগে আনমোল বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।
বলিউড অভিনেতা সালমান খানের বাড়িতে গুলি চালানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন আনমোল। এর সঙ্গে পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালা ও বাবা সিদ্দিকীর হত্যা মামলায়ও তার নাম উঠে এসেছে।
এনআইএ 10 লক্ষ টাকা পুরস্কার রেখেছিল সম্প্রতি, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) গ্যাংস্টার লরেন্সের ভাই আনমোল বিষ্ণোইকে 10 লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়েছে। সংস্থাটি 2022 সালে নথিভুক্ত 2টি মামলায় আনমোলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। এনআইএ-র মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়ও রয়েছে আনমোলের নাম।
২০১২ সালে আনমোলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় লরেন্স গ্যাংয়ে ভানু নামে পরিচিত আনমোল, প্রথমবার 2012 সালে পাঞ্জাবের আবোহারে হামলা, ব্যাটারি এবং অস্ত্র আইনের ধারায় মামলা করা হয়েছিল। 2015 সাল নাগাদ, পাঞ্জাবে আনমোলের বিরুদ্ধে 6টিরও বেশি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে সারা দেশে আনমোলের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে। যেখানে হত্যা, টার্গেট কিলিং, মুক্তিপণ, অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন ধারা জড়িত রয়েছে।
আনমোল বিষ্ণোইকে নাচতে দেখা যায়।
সালমানকে হত্যার জন্য পাকিস্তান থেকে AK-47 এনেছিল মুম্বাই পুলিশের তদন্তে সম্প্রতি জানা গেছে যে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চালানোর পর লরেন্স গ্যাং আবার সালমান খানকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিল। গত ১ জুন এই মামলায় লরেন্স গ্যাংয়ের চারজনকে গ্রেফতার করেছিল নবি মুম্বই পুলিশ। তারা সবাই পানভেলে সালমানের গাড়িতে হামলার পরিকল্পনা করছিল।
এ জন্য তিনি পাকিস্তান থেকে একে-৪৭সহ অনেক অস্ত্র আমদানির পরিকল্পনা করেছিলেন। তুর্কি তৈরি জিগানা পিস্তল দিয়ে সালমানকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিল লরেন্স গ্যাং। পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকেও একই পিস্তল দিয়ে খুন করা হয়েছে। গোরেগাঁও ফিল্ম সিটি সহ সালমানের ফার্ম হাউস এবং বেশ কয়েকটি শুটিং স্পটেও রেকি করা হয়েছিল। আসলে, তারা সবাই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিল। এই গ্রুপ থেকেই সালমানকে হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।
সালমান খানের বান্দ্রার বাড়ি গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চালানো হয়।
৬ মাসে ২টি মামলার পর সালমানের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়
12 অক্টোবর: সালমানের ঘনিষ্ঠ বাবা সিদ্দিকীর হত্যা। সালমান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকী তার ছেলে জিশানের অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি চালানো হয়। দুটি গুলি সিদ্দিকীর পেটে ও একটি বুকে লাগে। তাকে অবিলম্বে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে রাত 11.27 টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। লরেন্স গ্যাং এই হামলার দায় স্বীকার করে।
14 এপ্রিল: সালমানের অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চালানো সালমান খানের বান্দ্রার বাড়ি গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চালানো হয়। লরেন্স গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার দুই মাস পর মুম্বাই পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন সালমান। তিনি বলেছিলেন, ‘বারবার বিভিন্ন লোকের টার্গেট হয়ে আমি ক্লান্ত। এর আগেও একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে, জরিমানাও করা হয়েছে। আমি অনেক ক্ষেত্রেই আটকে আছি।
সালমানের সাথে লরেন্সের শত্রুতার কারণ 1998 সালে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিং চলাকালীন রাজস্থানের জঙ্গলে কৃষ্ণসার শিকারের অভিযোগ রয়েছে সালমানের বিরুদ্ধে। সালমান ছাড়াও অভিযুক্ত ছিলেন সাইফ আলি খান, সোনালি বেন্দ্রে, টাবু এবং নীলম কোঠারি।
বিষ্ণোই সম্প্রদায়ও সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল। এর জন্য যোধপুর আদালত সালমানকে পাঁচ বছরের সাজাও দিয়েছে। যদিও পরে এই মামলায় তিনি জামিন পান। এ কারণে সালমান খানকে হত্যা করতে চায় গ্যাংস্টার লরেন্স। এমনকি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে তিনি এমন হুমকিও দিয়েছেন।
সালমান খানের বাড়িতে গুলি চালানোর পরিকল্পনা করার জন্য দিল্লি এবং মুম্বাই পুলিশ লরেন্সের অনেককে গ্রেফতার করেছে, কিন্তু তারপরও লরেন্স তার অনুগামীদের সালমানের পরেই রেখেছে।
গোল্ডি ব্রারকে সঙ্গে নিয়ে মুসেওয়ালাকে খুন করেছিল আনমোল। পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালা খুনের পর প্রথম আলোয় আসেন আনমোল ওরফে ভানু। পাঞ্জাব পুলিশের তদন্তে জানা গেছে যে লরেন্স তিহার জেল থেকেই সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এরপর তার ভাই আনমোল ও ভাগ্নে শচীন কানাডিয়ান গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারকে নিয়ে পুরো ষড়যন্ত্র চালায়। তিনি মুসেওয়ালার রেকসেস করেছিলেন। এরপর তার জন্য শুটার ও অস্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়।
হত্যার আগে লরেন্স তাকে ভারতের বাইরে পাঠিয়ে দেন লরেন্স চেয়েছিলেন মুসেওয়ালা হত্যার পর এই মামলায় শচীন ও আনমোলের নাম না আসা বা পুলিশ যেন তাদের গ্রেপ্তার না করে। তাই হত্যার আগে লরেন্স তাদের দুজনের জাল পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। এরপর ২৯ মে খুন হন মুসওয়ালা।
কেনিয়া হয়ে আমেরিকা পৌঁছেছেন আনমোল থাপন ও শচীন নেপালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে আসা শচীন থাপন আজারবাইজানে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও দুবাই থেকে কেনিয়া ও পরে আমেরিকায় পৌঁছে যায় আনমোল। প্রায় ২ বছর আগে আমেরিকায় পাঞ্জাবি গায়ক করণ আউজলা ও শারি মান-এর শোতে দেখা গিয়েছিল আনমোলকে। ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ডে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে সেলফি তুলতে দেখা গেছে আনমোলকে।