ইউক্রেনে হামলা এবং পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও পুতিনের দেশের কাছ থেকে লাগাতার ‘সস্তায় তেল’ কিনেছে ভারত। এবং সেই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। শনিবার এই সমালোচনারই কড়া জবাব দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
এই ইস্যুতে প্রশ্ন উঠলে ভারতের বিদেশমন্ত্রী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেন, যুদ্ধ কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে মেটে না।
কাতারে আয়োজিত ২২তম ‘দোহা ফোরাম’-এর মঞ্চে ‘কনফ্লিক্ট রেজোলিউশন ইন আ নিউ এরা’ শীর্ষক একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। সেখানেই তিনি বলেন, ‘আমি তেল নিচ্ছি, হ্যাঁ। এটা এমনিই সস্তা নয়। আপনাদের কাছে কোনও বেটার ডিল রয়েছে?’
এই মঞ্চে জয়শঙ্কর অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি খানিকটা অভিযোগ এবং আক্ষেপের সুরেই বলেন, আন্তর্জাতিক মহল যতটা না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে চাইছে, তার থেকে অনেক বেশি এটাকে জিইয়ে রাখতে চাইছে।
জয়শঙ্কর এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার আজকে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি ক্রমশ ক্রমাগত হয়ে চলা যুদ্ধের বদলে, আলোচনা ও বোঝাপড়ার বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। আমরা মস্কো যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলছি। কিভে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। অন্য়ান্য জায়গাতেও তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করছি।…’
‘…আমরা লাগাতার সেই সূক্ষ সুতোটার খোঁজ করে যাচ্ছি, যার সাহায্যে দুই পক্ষকেই কোনওভাবে একত্রে আনা সম্ভব হবে। যখন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই কাজ করা হবে।…’
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘আমরা কোনও শান্তি আলোচনা করার উদ্যোগ নিচ্ছি না। আমরা সেই অর্থে কোনও মধ্যস্থতাও করছি না। আমরা তাঁদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলছি। এবং প্রত্যেকবারই আলোচনার শেষে আমরা তাদের অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে অন্য পক্ষকে আমরা কী বলতে চলেছি। আমাদের মনে হয়, এই মুহূর্তে এই ঘটনার ক্ষেত্রে এটাই হল সবথেকে সেরা কূটনীতি।’
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের উপর হামলা করার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ বড় দেশই কার্যত রাশিয়াকে বয়কট করে চলেছে। তারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে। সেখানে ভারত লাগাতার রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। ভারত কেন এই অবস্থান নিয়েছে, সেই সম্পর্কে গত মাসেই বিস্তারিত ব্যাখ্য়া দিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী।
তিনি বলেছিলেন, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে ভারত আসলে সারা পৃথিবীর জন্য একটা উপকার করছে। কারণ, ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কিনত, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আকাশ ছুঁয়ে যেত। তা প্রতি ব্যারেলে প্রায় ২০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছে যেত। রুশ তেলকে কখনই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কেবলমাত্র তার দামের ক্ষেত্রে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। যা ভারতও মেনে চলছে।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে একটি সরকারি সফরে কাতার-বাহারিনে রয়েছেন জয়শঙ্কর। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া তাঁর এই সফর চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাহারিনে তিনি চতুর্থতম ভারত-বাহারিন হাই জয়েন্ট কমিশনে যোগ দেবেন। সেই কর্মসূচিতে বাহারিনের তরফে উপস্থিত থাকবেন সেদেশের বিদেশমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিন রশিদ আল জায়ানি।
(Feed Source: hindustantimes.com)