Footballer Robi Hansda | Bengal : বাবা-মা হতদরিদ্র জনমজুর, তাঁদের ঘাম-রক্তেই পুষ্ট রবি বাংলাকে করলেন ভারতসেরা…

Footballer Robi Hansda | Bengal : বাবা-মা হতদরিদ্র জনমজুর, তাঁদের ঘাম-রক্তেই পুষ্ট রবি বাংলাকে করলেন ভারতসেরা…

অরূপ লাহা: খেত মজুরি করে উপার্জন করা অর্থ মা তুলসী হাঁসদা তুলে দিতেন মস্ত ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলে রবি হাঁসদার (Robi Hansda) হাতে । বাবা সুলতান হাঁসদার স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন অনেক বড় ফুটবলার হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। অবশেষে হল স্বপ্নপূরণ। দীর্ঘ ৬ বছর পর কেরালার মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ৭৮ তম সন্তোষ ট্রফি (Santosh Trophy) জিতেছে বাংলা (Bengal)। আর ফাইনালে বাংলার এই জয় এসেছে রবি হাঁসদার করা গোল থেকেই। রবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন গোটা বাংলা।

হৃদরোগের কারণে শেষের দিকে আর জনমজুরি করতে যেতে না পারায় ঋণ নিয়ে একটি টোটো কিনে ভাড়া খাটাতেন সুলতান। মা তুলসী হাঁসদা জনমজুরি করে সংসারটা কোনওরকমে সামলে রেখেছেন। তবুও তুলসীদেবী ছেলেকে মাঠে কাজ করতে পাঠাননি যাতে রবির অনুশীলনে ঘাটতি না হয়। কিন্তু ছেলের সাফল্য চোখে দেখে যাওয়া হয়নি সুলতান হাঁসদার। কারণ এবছর জুন মাসে হৃদরোগে মারা গিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ৬ বছর পর কেরালার মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ৭৮ তম সন্তোষ ট্রফি জিতেছে বাংলা। আর ফাইনালে বাংলার এই জয় এসেছে রবি হাঁসদার করা গোল থেকেই। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার মুশারু গ্রামের আদিবাসীপাড়ায় একতলা মাটির বাড়ির বারান্দায় বসে ছেলের বাড়ি ফেরারগ অপেক্ষা করছেন তুলসী হাঁসদা।  তাঁর আক্ষেপ,” ওর বাবা আজকের দিনটা দেখে যেতে পারলেন না। মারা যাওয়ার আগে বারবার বলেছিলেন,’তুমি দেখো, রবি একদিন অনেক বড় হবে।”

বর্ধমান কাটোয়া রাজ্যসড়কে সাঁওতা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি মুশারু আদিবাসীপড়া। শ খানেক পরিবারের বসবাস। এই পাড়াতেই বাড়ি বছর ছাব্বিশের তরুণ রবি হাঁসদার। এবছর বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ের নায়ক মুশারু আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা এই তরুণ।
মা একদিন জনমজুরি করতে না গেলে বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। তুলসীদেবীর এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে রাসমণির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সাঁওতা বাসস্ট্যাণ্ডের কাছাকাছি খেলার মাঠ। মুশারু আদিবাসীপাড়া মিলন সংঘ ক্লাব এই মাঠেই ফুটবলচর্চা করে। ক্লাবের এক কর্মকর্তা রবির সম্পর্কে কাকা তাম্বর মুর্মু বলেন,”রবির যখন ৬-৭ বছর বয়স তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে এই মাঠে ফুটবল খেলতে আসত। ১২ বছর বয়সে ওকে ভাতারে একাদশ অ্যাথালেটিক্স ক্লাবের ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করে দিয়ে আসা হয়। সেখান থেকেই প্রশিক্ষণের শুরু।”

ভাতার একাদশ অ্যাথালেটিক্স ক্লাবের এক ফুটবল প্রশিক্ষক মুদ্রাস সেডেন বলেন,” প্রথম থেকেই রবির মধ্যে সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। এখন রবি তা প্রমাণ করেছে।” উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে  অনুর্ধ ১৯ বাংলা দলের ট্রায়ালে সুযোগ পেয়ে নির্বাচিত হন রবি। সেবার অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন। ২০২২ সালে ন্যাশানাল গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা। সেই প্রতিযোগিতায় পাঁচ গোল করেছিলেন রবি। আর এবারের সন্তোষ ট্রফিতে সর্বোচ্চ গোলদাতাও সেই রবি। ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত তাঁর করা গোলের সংখ্যা ১২।
মুশারু আদিবাসীপাড়ায় প্রতিবেশীরাও উৎসুক হয়ে রয়েছেন,কখন তাঁদের রবি বাড়ি ফিরবেন।

প্রসঙ্গত, সাত বছর পরে আবার সন্তোষ ট্রফি এসেছে বাংলার ঘরে। বাংলার এই সাফল্যে খুশি রাজ্য সরকার । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন সভাঘরে বাংলা দলের সকল সদস্যদের ডেকে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলা ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেছেন মমতা। বাংলা দলের সদস্যদের উৎসাহিত করতে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণাও করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব সকল সদস্যদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অনুষ্ঠানে আইএফএর পক্ষ থেকে সচিব অনির্বাণ দত্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে উপহার তুলে দেন।

(Feed Source: zeenews.com)