
প্রশ্ন- প্রতি বছরই নাকি এই রোগ প্রকোপ দেখা দেয়, তাহলে এবার এতটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে কেন?
উত্তর- প্রতি বছর এই রোগের প্রকোপ দেখা যায় এবং কিছুটা সিজনাল বা মরশুমি৷ শীতকালে, এই রকম সময়ে এই রোগ বাড়ে। এ বছর বাড়াবাড়ি হচ্ছে কারণ পুনে এবং মুম্বইয়ে এই রোগটি ছড়িয়েছে। বেশ কিছু মৃত্যু হয়েছে সেইজন্য আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এই মুহূর্তে প্যানিক করার মতো কিছু হয়নি৷।
প্রশ্ন- কী এই গুলেন বারি সিনড্রোম?
উত্তর- গুলেন বারি সিনড্রোম হচ্ছে একটি রোগ যাতে শরীরে নিজের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং পেরিফেরাল নার্ভের এগেনস্টে অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্রে দুর্বল করে এবং তার জন্য হাত পা অবশ থেকে আরম্ভ করে ধীরে ধীরে আমাদের শ্বাসনালী পর্যন্ত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে ।
প্রশ্ন- সাধারণ জ্বর-সর্দি থেকে কী সূত্রপাত? শরীরে বাসা বাঁধতে কতটা সময় নেয়?
উত্তর- সাধারণ জ্বর, সর্দি অথবা পেট খারাপ বা পাকযন্ত্রের কোনও গণ্ডগোল থেকে এই সিনড্রোমে সূত্রপাত হতে পারে। কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ইনফেকশন হলে বিশেষ করে ডায়রিয়া হলে তার ১০ দিন বা সপ্তাহ দু’য়েকের পর থেকে এই রোগটি হতে পারে। কারণ যেহেতু এটি রোগ প্রতিরোধ এবং স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল করে, তার জন্য কিছুটা সময় লাগে। তাই সাধারণ ভাবে আমরা দেখি যে জ্বর সর্দি মানে লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন অথবা পাক যন্ত্রের সমস্যার সপ্তাহ দুয়েকের পর এই রোগটি দেখা যায়।প্রশ্ন- প্রাথমিক কোন লক্ষণগুলো জানান দেবে এই রোগ?
উত্তর- প্রাথমিক লক্ষণগুলো হচ্ছে হাত পা ঝিনঝিন করা, অবশ হয়ে যাওয়া, হাত অবশ হয়ে যাওয়া, জল তুলতে অসুবিধা হওয়া, খাবার চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হওয়া৷ তারপর কোমর অবশ হয়ে যাওয়া, পায়ের তলা অবশ হয়ে যাওয়া, জুতো পরতে গিয়ে অসুবিধা হতে পারে বা বসে থাকলে উঠতে অসুবিধা হতে পারে, কোনও জিনিস হাত দিয়ে ধরতে অসুবিধা হতে পারে।
প্রশ্ন- কারা এই রোগের শিকার হতে পারে? মানে কারা এক্ষেত্রে স্পর্শকাতর?
উত্তর- এই রোগের শিকার যে কোনও বয়সের মানুষ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে কিছু জেনেটিক প্রিডিসপোজিশন অর্থাৎ কিছুই HLA-র সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে৷ বাচ্চা এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা মানতে হবে। কারণ ধরুন যদি কখনও বাড়াবাড়ি হয় এবং আইসিইউ পর্যন্ত রোগীকে নিয়ে যেতে হয়, তখন এদের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হওয়ার চান্সটা অনেক বেশি।
প্রশ্ন- কত ছোট বাচ্চাদের হতে পারে?
উত্তর- ছোটদের ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া হওয়ার পরে একটু খেয়াল রাখতে হবে৷ বিশেষ করে যারা অনেকটা ছোট, কথা বলতে পারে না, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে মা-বাবাকে৷ তাদের হাত পা নাড়াতে অসুবিধা হচ্ছে কি না, হাঁটতে চলতে গেলে বারবার পড়ে যাচ্ছে কিনা, বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে অসুবিধা হচ্ছে কি না, এগুলো হচ্ছে প্রাথমিক লক্ষণ। ফলেই এগুলো আছে কী না, সেটা দেখতে হবে।
প্রশ্ন- ছোটদের ক্ষেত্রে কী ভাবে সাবধানতা নিতে হবে?
উত্তর- এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়, একজন মানুষের থেকে আরেকজনের ছড়ায় না। কিন্তু সংক্রমণ হতে পারে জল বা খাবার থেকে৷ কিছু ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে এবং এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে সবারই যে গুলেন বেরি সিনড্রোম হবে তার কিন্তু কোন কথা নেই। খুব কমসংখ্যক মানুষেরই হবে। কারণ এই রোগটি বিরল রোগ। ইদানীং আতঙ্ক ছড়িয়েছে কারণ মুম্বই এবং পুণেতে এই রোগে মৃত্যু হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু আমাদের রাজ্যে এখনও এটা এপিডেমিক আকারে হয়নি।
প্রশ্ন- এটা তো ছোঁয়াচে নয়? তাহলে ছড়ানোর কারণ কী হতে পারে? এই রোগের মৃত্যুর কেন হয়?
উত্তর- রোগে মৃত্যু হতে পারে শ্বাসকষ্ট হয়ে মানে রেসপিরেটরি সিস্টেম যদি কাজ না করে। কারণ স্নায়ুতন্ত্র আমাদের চলাফেরা থেকে আরম্ভ করে শ্বাসযন্ত্রের গতিবিধি সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে স্নায়ুর সমস্যা যদি বাড়তে বাড়তে শ্বাস মানে রেসপিরেটরি সিস্টেম পর্যন্ত আসে ডায়াফ্রামেটিক প্যারালিসিস হয় তাহলে রোগীকে ভেন্টিলেশনে যেতে হয় এবং ভেন্টিলেশনের অভাব যদি হয় তাহলে মৃত্যু হতে পারে। আর একটি কারণ হয় অটোনোমিক ডিসফাংশন অর্থাৎ হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া অত্যধিক ঘাম হওয়া৷ সেরকম যদি উপসর্গ আসতে থাকে তাহলে মৃত্যু হতে পারে৷ মোটামুটিভাবে দেখা গেছে তিন সপ্তাহ পরে এই রোগটি আর বাড়ে না এবং তিনসপ্তাহ এবং তার আগে যদি চিকিৎসা হয় ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে তাহলে কিন্তু অনেক অংশে রোগটি বাড়বাড়ন্ত রোধ করা সম্ভব।
প্রশ্ন- যেহেতু দেশে এবং এ রাজ্যেও মৃত্যু হচ্ছ, ফলে আতঙ্ক তো ছড়াচ্ছে৷ সাধারণভাবে কী ব্যবস্থা নিতে হবে?
উত্তর- সাধারণ ভাবে কোনও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের থেকে বাঁচতে যে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়, যমন বারবার হাত ধোয়া, পরিষ্কার জল খাওয়া, পরিষ্কার খাবার খাওয়া, বাইরের খোলা খাবার না খাওয়া সেগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে।
