HT Bangla Exclusive: ‘২০২৩ সালের আগস্ট মাস। ইনস্টিটিউটের একটি সার্ভের কাজে গিয়েছিলাম সিকিমের বার্সে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারিতে। পরিচিত গাছপালার মধ্যে হঠাৎ দেখি এই বেমানান অর্কিড। প্রথমে ঠাহর করা মুশকিল ছিল জিনিসটা কী! কারণ গ্যাস্ট্রোডিয়া গোষ্ঠীর (বিজ্ঞানের পরিভাষায় জেনাস) যে অর্কিডগুলো ভারতে পাওয়া যায়, তার সঙ্গে এর মিল নেই। পুরনো গবেষণাপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে জানতে পারি অর্কিডটি গ্যাস্ট্রোডিয়া ফ্ল্যাভিলাবেলা। এখনও পর্যন্ত যেটা পাওয়া গিয়েছে বিশ্বের দুটি মাত্র স্থানে! ফরেস্টের ভিতর সেদিন ঘুরতে ঘুরতে মাত্র বারোটা খুঁজে পেয়েছিলাম ওই অর্কিড। হয়তো সারা ভারতে মাত্র বারোটাই রয়েছে!’ বিরল প্রজাতির এই অর্কিড নিয়ে আন্তর্জাতিক জার্নাল ফেডেস রেপেরটোরিয়ামে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণা। প্রধান গবেষক রিজিওনাল আয়ুর্বেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বাঙালি উদ্ভিদবিজ্ঞানী কিংশুক সরকার। কেন এই অর্কিড বিরল ও দামি? সে কথাই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানালেন কিংশুক।
ভারতে খোঁজ মিলল প্রথম
গত দেড় বছর ধরে আটজন গবেষকের এক দল বিরল অর্কিডটির তত্ত্বতালাশে যুক্ত ছিলেন। প্রধান গবেষক কিংশুক জানাচ্ছেন, ‘গ্যাস্ট্রোডিয়া গোষ্ঠীর বেশ কিছু অর্কিড এখন বিরল প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে অন্যতম গ্যাস্ট্রোডিয়া ফ্ল্যাভিলাবেলা। প্রথম পাওয়া গিয়েছিল তাইওয়ানে। তারপর তিব্বতে। এবার পাওয়া গেল সিকিমে। ঘটনাচক্রে ভারতে এই প্রথম খোঁজ মিলল অর্কিডটির।’
‘১০০ গ্রামের দাম ৩০ হাজার টাকা’
কিন্তু গ্যাস্ট্রোডিয়া গোষ্ঠীর অর্কিড কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ? ‘সোনার থেকেও দামি তাই!’ বলে উঠলেন কিংশুক। ‘গ্যাস্ট্রোডিয়া গোষ্ঠীর একটি পরিচিত ও বিখ্যাত অর্কিড গ্যাস্ট্রোডিয়া ইলাটা। চিনের ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনে এর বহুল ব্যবহার ছিল। এখনও ওই দেশে তুঙ্গে এর চাহিদা। মাত্র ১০০ গ্রামের দাম ৩০ হাজার টাকা!’
কী গুণ এই অর্কিডের?
কী কাজে ব্যবহার করা হয় এই অর্কিড? কিংশুকের কথায়, ‘গ্যাস্ট্রোডিয়া গোষ্ঠীর সব অর্কিডের মধ্যেই গ্যাস্ট্রোডিন নামের একটি বিশেষ কেমিকাল থাকে। গ্যাস্ট্রোডিয়া ইলাটার মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। খিঁচুনি, মাথা ধরা, মাথার যন্ত্রণাসহ নানা সমস্যার সুরাহা করে গ্যাস্ট্রোডিন। এছাড়াও ব্যথা কমায়, ব্রেনে রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। তবে অন্যতম বড় গুণ এর অ্যান্টিএজিং প্রপার্টি (অর্থাৎ বার্ধক্যজনিত রোগের সুরাহা করা)। এছাড়াও, এই অর্কিড অ্যাফ্রোডিসিয়াক (যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে)। ফলে বুঝতেই পারছেন!’
কেন সংরক্ষণ দরকার
ন্যাশনাল মেডিকাল প্ল্যান্টস বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় করা এই গবেষণায় গ্যাস্ট্রোডিয়া ফ্ল্যাভিলাবেলাকে বিপন্ন বলা হয়েছে। কিংশুকের যুক্তি, ‘সাধারণত যেকোনও প্রজাতির পপুলেশনের উপর নির্ভর করে সেটি বিরল কি না ঠিক করা হয়। তার পর IUCN (International Union For Conservation Of Nature)-এর শর্তের সঙ্গে মিললে তবেই রেড লিস্ট বা লাল তালিকাভুক্ত করা হয় প্রজাতিকে। এক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। তাইওয়ান ও তিব্বতে আগে পাওয়া গেলেও এই কাজটি এর আগে কেউ করেননি।’ সংরক্ষণ জরুরি শুধু বিরল বলে নয়। এর ওষধি গুণের জন্যও। গবেষকের কথায়, ‘এই অর্কিড অ্যাক্লোরোফিলাস। অর্থাৎ ক্লোরোফিল নেই। ফলে সূর্যের আলো থেকে নিজেরা খাবার তৈরি করতে পারে না। নির্ভর করতে হয় ছত্রাকের উপর। এক অর্থে পরজীবী। তাই বিরল অর্কিডটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিশেষ সংরক্ষণ পদ্ধতির দরকার। নয়তো অবিলম্বে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।’
(Feed Source: hindustantimes.com)