কেন বেছে নেবেন ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারের চাকরি? জেনে নিন সমস্ত খুঁটিনাটি…

কেন বেছে নেবেন ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারের চাকরি? জেনে নিন সমস্ত খুঁটিনাটি…

#নয়াদিল্লি: বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনই (Software Applications) হল চালিকা শক্তি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন হাজার হাজার সফটওয়্যার ডেভেলপার (Developer)। তাঁরাই অগণিত ডিভাইস (Device), মেশিনারি (Machinery), অপারেটিং সিস্টেম (Operating Systems) এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের (Web Application) নেপথ্যের মূল শক্তি। যা আদতে সাহায্য করছে মানুষের জীবনচর্যাকে উন্নত করতে।

আমরা যখনই সফটওয়্যার নিয়ে ভাবি, তখন মূলত দৃশ্যসুখের কথাই ভাবি। সুন্দর লে-আউট, সহজ ব্যবহার্য ফিচার এবং কাজের স্বাচ্ছন্দ্যই আমাদের মূল প্রতিপাদ্য। কিন্তু এর বাইরে কখনও কি আমরা সফটওয়্যারে মগজটা নিয়ে ভাবি! সফটওয়্যারের ব্রেন আসলে তিনটি জটিল বোর্ড পার্ট-এ গড়া। ব্যাক-এন্ড অ্যালগোরিদম (Back-end Algorithm), ডেটা প্রস্তুতকরণ এবং যে ভাবে তারা Ul-এর সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে। আগে একে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (Graphical User Interface) বলে চিহ্নিত করা হত।

কিন্তু এ সব নিয়ে কাজ করেন কারা? সফটওয়্যারের গভীরে গিয়ে জেনে নেওয়া যাক এর পশ্চাদপটে থেকে যাওয়া (Back-end Developer) কর্মীরা কী ভাবে মাথা খাটিয়ে তাঁদের পরিশ্রমের ফসল তুলে ধরেন আমাদের সামনে।

ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে ব্যাক-এন্ড ডেভেলপাররা ফাংশনালিটি কোড লেখেন এবং ইউজারদের অদেখা প্রযুক্তিতে যুক্তি প্রদান করেন। যেমন ধরা যাক, তাঁরাই স্ক্রিনে একটি বোতাম আছে কি না এবং ট্রিগার হলে এই বোতাম কী করতে পারবে তা নির্ধারণ করেন।

প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে সার বিশ্ব অনলাইন হয়ে গিয়েছে। আর তারই সঙ্গে ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের চাহিদা শীর্ষে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী অন্যতম কাঙ্ক্ষিত চাকরি হিসেবে উঠে এসেছে এই কাজ। ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট হল এমন এক কাজ যেখানে প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বেশির ভাগ চাকরি রয়েছে। ভবিষ্যৎ আরও বেশি করে এই দিকে ঝুঁকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার হলে কী লাভ?

অতিমারী পরবর্তী বিশ্ব এক নতুন সময়ের মুখোমুখি। এ সময় সমস্ত শিল্প সংস্থাগুলি প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকেই ঝুঁকছে। উপভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা পূরণ এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের অভ্যন্তরীণ কার্যপদ্ধতি সম্পন্ন করার জন্যই সফটওয়্যার ডেভেলপারদের খুব চাহিদা রয়েছে৷ ব্যাক-এন্ড ডেভেলপাররা কোড লেখা থেকে শুরু করে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস (এপিআই) পরিচালনা করা বা ব্যাকএন্ড অ্যাপ্লিকেশনগুলি নিশ্ছিদ্র (Debug) করা পর্যন্ত পুরো সফটওয়্যার ফ্রেমওয়ার্কের কাজ করে থাকেন। তাঁরা ব্যাক-এন্ড কোড তৈরি করতে জাভা, পাইথন এবং পিএইচপি-এর মতো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করেন এবং ব্যবহারকারী যখন কোনও নির্দিষ্ট কাজ করতে চান, তখন ওয়েব বা অ্যাপ কী ভাবে কাজ করবে, সেটাও নির্ধারণ করেন ব্যাক-এন্ড ডেভেলপাররা। তাঁদের ছাড়া, ওয়েব এবং সফটওয়্যার ডেভেলপের জগতের অস্তিত্ব নেই।

কোথায় ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?

মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যাপলের মতো আইটি জায়ান্ট থেকে শুরু করে ছোট এবং মাঝারি আকারের সংস্থাগুলিতেও রয়েছে কাজের সুযোগ। আসলে যে কোনও সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলির জন্য ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ যে হেতু ওয়েব এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আমাদের ডিজিটাল জগতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, তাই ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের সর্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে, এবং তা সমস্ত ধরনের শিল্পের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলস্বরূপ, তথ্য প্রযুক্তি, অর্থ, স্বাস্থ্যসেবা, খুচরো শিল্প ইত্যাদিতে তাঁদের যথেষ্ট পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রচলন ঘটছে।

ভারতে, দুই বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের গড় বেতন ৬ লক্ষ টাকা হতে পারে। এ ছাড়া চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়া, ভারত এবং ফ্রান্সের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি দেশগুলিতে ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের চাহিদা রয়েছে। সমগ্র আইটি স্টাফিং ইন্ডাস্ট্রি এবং আইটিইএস ফার্ম, যেগুলো কম খরচে নানা দেশে প্রযুক্তি আউটসোর্স করে, তা শুধুমাত্র খরচ-সুবিধার জন্য নয়, ভারতে প্রতিভার ভাল সরবরাহের জন্যও এ দেশে কাজ করতে আগ্রহী হয়।

ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার হওয়ার যোগ্যতা:

কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা এবং প্রযুক্তির প্রতি অনুরাগ থাকলেই এই দিকে কাজ করা যেতে পারে। অন্তত সেটাই প্রাথমিক চাহিদা। প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহীদের জন্য ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট একটি চমৎকার কেরিয়ারের পথ হতে পারে। তবুও, যে কেউ আগ্রহী হলে এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

একজন ভালো ব্যাক-এন্ড প্রোগ্রামারকে অবশ্যই কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ, ডেটাবেস এবং ডেটাবেস ক্যাশিংয়ে পারদর্শী হতে হবে। এ ছাড়া, একজন ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার হিসাবে অবশ্যই প্রোডাকশন ওয়েব সার্ভার প্রযুক্তি এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসগুলো জানতে হবে। পেশাদার ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার হওয়ার জন্য অ্যালগরিদম এবং ডেটা স্ট্রাকচারের জ্ঞানও অপরিহার্য। ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট কাজের জন্য যোগ্যতা অর্জনের জন্য, প্রার্থীরা ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট শেখার জন্য কোর্সও করতে পারেন এবং বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের জন্য অনলাইনেও প্রচুর সংস্থান পাওয়া যায়। এই ধরনের একটি বা দুটি ব্যাক-এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ, যেমন জাভা ফ্রেমওয়ার্ক যেমন স্প্রিং, পাইথন ফ্রেমওয়ার্ক যেমন জ্যাঙ্গো, ASP.NET ফ্রেমওয়ার্ক, রুবি অন রেল ইত্যাদি শিখে রাখা ভাল।

প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা:

একজন সফল ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারের তিনটি প্রয়োজনীতা থাকে- প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের যে কোনও একটিতে দক্ষতা: জাভা, পাইথন এবং পিএইচপি। একবার ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারের এই ভাষাগুলোর উপর দক্ষতা তৈরি হয়ে গেলে তাঁদের প্রাথমিক ফ্রন্ট-এন্ড ভাষা যেমন HTML, CSS এবং JavaScript শিখতে হবে। একটি ব্যাক-এন্ড ফ্রেমওয়ার্ক হল একটি প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনও ভাষার মেরুদণ্ড এবং ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের অবশ্যই সেখানে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। NodeJs, ExpressJs এবং Django হল কিছু মূল্যবান এবং জনপ্রিয় ফ্রেমওয়ার্ক যেখানে ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের তাঁদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা অর্জন করা উচিত।

GitHub এবং GitLab-এর পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান বিভিন্ন ডেটাবেসে কোডের পরিবর্তনগুলো ট্র্যাক করার জন্য প্রয়োজনীয়। তার উপর একটি প্রকল্পে কাজ করার সময়, একজন ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারের অবশ্যই ডেটাবেস, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) এবং সার্ভার পরিচালনার জ্ঞান থাকতে হবে। ব্যাক-এন্ড ডেভেলপারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু API হল JSON, SOAP, REST এবং GSON। এই প্রযুক্তি এবং কাঠামোর এক্সপোজার প্রার্থীদের সফটওয়্যার বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের লক্ষ্যগুলো বুঝতে এবং তার কার্যকর সমাধান তৈরি করতে সহায়তা করবে।

ভবিষ্যৎ:

যেহেতু সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তি সমস্ত শিল্প ক্ষেত্রগুলোতে কাজে লাগছে তাই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং ডেভেলপারদের ভবিষ্যৎ খুব আশাব্যঞ্জক। অনলাইন টুল, টিউটোরিয়াল এবং শেখার ক্লাসের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। ফলে প্রার্থীরা অভিজ্ঞ পেশাদারদের কাছ থেকে শিখতে পারেন এবং তাঁদের দক্ষতা বাড়াতে পারেন। তা ছাড়া, চুক্তিভিত্তিক চাকরি এবং রিমোট স্টাফিং বিশ্ব জুড়ে সংস্থাগুলির মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে। ব্যাক-এন্ড ডেভেলপাররা তাঁদের দক্ষতা সরাসরি রিমোট জবের মাধ্যমেও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলোতে সরবরাহ করতে পারেন।

Published by:Shubhagata Dey

(Source: news18.com)