স্থায়ী সৈনিকের মেধা তালিকায় নামের জন্য ৪ বছর ক্রমাগত মূল্যায়ন হবে অগ্নিবীরদের

স্থায়ী সৈনিকের মেধা তালিকায় নামের জন্য ৪ বছর ক্রমাগত মূল্যায়ন হবে অগ্নিবীরদের

#নয়াদিল্লি: সদ্য চালু হয়েছে ‘অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্প’। দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন নীতি গ্রহণ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু তারপর থেকেই প্রতিবাদে উত্তাল দেশ। যদিও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বরাবরই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার বিষয়েও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

নতুন নিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানকারী অগ্নিবীরদের স্থায়ী সৈনিক হিসাবে নির্বাচনের জন্য একটি চূড়ান্ত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু তার আগে পরীক্ষা করে দেখা হবে তাঁদের। আর সেই পরীক্ষা এককালীন নয়। বরং একাধিক উদ্দেশ্যমূলক এবং বিষয়গত ধ্রুবকে ক্রমাগত মূল্যায়ন করা হবে চার বছর ধরে। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর ভাইস চিফ (Vice Chief of Army Staff) লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিএস রাজু (Lt Gen B.S Raju) News18-কে এমনটাই জানিয়েছেন।

ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যতে ভারতের সৈন্যবল কেমন হতে চলেছে, সে বিষয়ে সেনা আধিকারিক এই নিয়োগ স্বচ্ছতার কথা জানিয়ে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন। তাঁর দাবি, ২৫ শতাংশের জন্য যে সংরক্ষণ করা হবে তাতে কোনও ভাবেই অস্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার আশঙ্কা থাকবে না। যাঁরা চার বছরেরও বেশি সময় সেনাবাহিনীতে চাকরি করার জন্য নির্বাচিত হবেন, তাঁদের সামগ্রিক মূল্যায়নের বিচারেই নির্বাচিত করা হবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টা বুঝতে পারছি, চার বছরের মেয়াদ শেষে সমস্ত অগ্নিবীরকে অবশ্যই এই আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে তিনি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন এতদিন। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি অস্ত্র এবং পরিষেবার জন্য অগ্নিবীরের যোগ্যতা পরীক্ষা করা হবে। আর তার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান স্থির করা হয়েছে। চার বছর ধরে ক্রমাগত মূল্যায়ন হবে।’’

কিন্তু কী ভাবে সেনাবাহিনী নিশ্চিত করবে যে অগ্নিবীরদের স্থায়ী নিয়োগের জন্য বাছাই করা হবে কোনও রকম পক্ষপাতিত্ব এবং অসম প্রতিযোগিতা ছাড়াই? লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু জানান, এ জন্যই একজন অগ্নিবীরের প্রথম মূল্যায়ন হবে তার প্রথম ছয় মাসের প্রশিক্ষণের মেয়াদ শেষে। তারপর প্রতি বছরের শেষে, অগ্নিবীরের শারীরিক সুস্থতা, ফায়ারিংয়ের দক্ষতা এবং অন্য অনুশীলনগুলির ভিত্তিতে তাঁকে মূল্যায়ন করা হবে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত মূল্যায়ন করা হবে আগ্নিবীরের মনোভাব এবং তৎপরতারও। এই মূল্যায়ন করবেন প্লাটুন কমান্ডার (platoon commander), কোম্পানি কমান্ডার (company commander) এবং কমান্ডিং অফিসাররা (commanding officer), যাঁদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে অগ্নিবীরদের।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজুর দাবি, আসলে সেনাবাহিনীও চায় সেরা সৈনিককে বেছে নিতে। তাই একেবারে সেরা পদ্ধতিতেই তাঁরা ভবিষ্যতের সেনানি নির্বাচন করতে চাইছেন। তিনি জানান, অগ্নিবীরদের মূল্যায়নের ধাপে ধাপে হলেও তা এক সঙ্গে সংগ্রহ করে রাখা হবে। বছরের শেষে মূল্যায়নের যাবতীয় তথ্য আপলোড করে রাখা হবে কেন্দ্রীয় ভাবে। একবার তা আপলোড হয়ে গেলে আর কোনও ভাবেই সেখানে মানুষের পক্ষে কোনও বদল করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বছরের শেষে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। চতুর্থ বছরের শেষে, সম্পূর্ণ ডেটা একত্রিত করা হবে। একত্রিত তথ্য থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বেরিয়ে আসবে ফলাফল, তার ভিত্তিতেই মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। এতে বাইরে থেকে কারও হস্তক্ষেপের কোনও জায়গা থাকবে না বলে দাবি।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলেন, প্রশিক্ষণের সময়কালে একজন অগ্নিবীরের পারফরম্যান্সের মূল্যায়নই করা হবে- তা নয়। একই সঙ্গে চলতে থাকবে কাউন্সেলিং। পুরো পরিকল্পনাটি চার বছর ধরে ক্রমাগত চলবে। প্রশিক্ষণের সময়কাল এবং তার পরের বছরগুলির জন্যও পৃথক মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে, যা অবশ্যই সময়োপগী হবে।

অগ্নিবীর হিসাবে সেনাবাহিনীতে মহিলা সৈনিকদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলেন, অগ্নিপথ স্কিমের মাধ্যমে মহিলারা কর্পস অফ মিলিটারি পুলিশ (CMP)-এ যোগদান করতে পারবেন। ঘটনা হল অন্য সব নিয়োগের মতোই, প্রাথমিক ব্যাচের পর দুই বছর ধরে CMP-তে আর কোনও মহিলাকে নিযুক্ত করাই হয়নি।

‘পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের জন্য চার বছরই যথেষ্ট’

সৈনিক হিসেবে অগ্নিবীরদের প্রশিক্ষণের কথা বলতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলেন, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য চার বছর একটা দীর্ঘ সময়। তিনি বলেন যে, অগ্নিবীরদের ছয় মাসের তীব্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে, ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার প্রতিটি ব্যক্তিকে বিভিন্ন দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন।

রাজু বলেন, ‘একজন অগ্নিবীরকে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত করা হবে যাতে তিনি ব্যাটালিয়নের অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারেন এবং আমরা ভবিষ্যতে ওই বীরের সঙ্গেই যুদ্ধে যেতে পারি।’ তবে তিনিও এ-ও বলেন, পরবর্তী কালে আরও বেশি কাজের জন্য আরও বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। অগ্নিবীর চার বছর পর সে গুলো শিখবেন।

রাজুর দাবি, এই চার বছরের মধ্যেই অগ্নিবীর উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। তবে যুদ্ধ বিশারদ হওয়ার জন্য যে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তা আরও পরবর্তীকালে তাঁকে দেওয়া হবে।

‘নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে প্রকল্প চালু করা হচ্ছে’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলেন, অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পটি ‘সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে’ চালু করা হচ্ছে এবং এই কারণেই এটি একটি পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

রাজুর দাবি, ‘প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্প আমাদের বিষয়টিকে আরও ভাল ভাবে মূল্যায়ন করার এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে সময় দেবে। অবিলম্বে কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে এই পথ ধরে, যদি কিছু ছোটখাট বদল দরকার হলে তা করা যেতে পারে।’ এই পরিবর্তন করার জন্য কোনও কিছু বদলানোর ক্ষমতা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর হাতে। তিনি চাইলে যে কোনও সময় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে পারেন।

ব্যয়ের বিষয়ে প্রভাব

স্কিমটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে আগুন জ্বলে উঠেছে। সাধারণ জনগণের কঠোর প্রতিরোধ সত্ত্বেও Vice Chief of Army Staff লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলছেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে সব সময়ের মতো সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের জন্য যুবকের অভাব হবে না। প্রচুর মানুষ আসবেন এই কাজে যোগ দিতে।

তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, পুরো কর্মসূচিতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে ব্যয় এবং সঞ্চয় সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, তিনি বলেন, এর পরিবর্তে যে বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল তা হ’ল মানব পুঁজির ব্যবস্থাপনা এবং কম বয়সী প্রোফাইল পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, নির্বাচন এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার প্যারামিটার প্রভৃতি। কিন্তু এই প্রকল্পের অধীনে কোনও তাৎক্ষণিক রাজস্ব ব্যয় করা হবে না, কারণ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্ষমতা নিয়োগকৃত সংখ্যার চেয়ে বেশি। তাঁর দাবি, ‘ষষ্ঠ বা সপ্তম বছরের পরে প্রশিক্ষণের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে এবং তখনকার পরিস্থিতির মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরিকাঠামো বাড়ানো যেতে পারে।’

জনবল কমানোর বিষয়ে

লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজু বলেন, সেনাবাহিনী এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনবলের ঘাটতি পূরণ করবে। ‘গত দুই বছরে কোনও নিয়োগ হয়নি। এই প্রকল্প বরং কিছুটা শক্তি নিয়ে এসেছে। এখন, আমরা বহির্গমন নীতির সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা নিয়োগ করছি। এটি সামগ্রিক শক্তির উপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে, তবে আমরা যতই এগিয়ে যাব, ততই সৈন্য সংখ্যা বাড়বে। যাতে সেনাবাহিনীর শক্তি কাঙ্খিত স্তরে থাকে’, দাবি করেন সেনা আধিকারিক।

অগ্নিবীর দক্ষতা শংসাপত্র

ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা বলেন, যারা ডিপ্লোমা নিয়ে বাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন, তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ চলাকালীন অতিরিক্ত দক্ষতার যোগ্যতা অর্জন তাদের ডিগ্রি কোর্সের জন্য যোগ্য করে তুলবে। তিনি বলেন, অগ্নিবীররা তাদের সামরিক শাসনকালে ‘ক্রেডিট পয়েন্ট’ সংগ্রহ করবে, যা পরবর্তীতে কয়েক বছরের মধ্যে তাদের স্নাতক শেষ করার জন্য রিলিজ করা যেতে পারে।

সেনাবাহিনী কী ভাবে একজন ভারতীয় গ্রামীণ যুবককে স্থায়ী চাকরি এবং পেনশনের গ্যারান্টি ছাড়াই বাহিনীতে যোগ দিতে রাজি করাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুবকদের চার বছরের জন্য সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে সেবা করার কঠোরতার মধ্য দিয়ে, এবং জাতির সেবা করার আনন্দ উপভোগ করুন।

রাজু বলেন, ‘তাঁদের এই মেয়াদে আর্থিক ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মেয়াদের শেষে সেবা নিধি প্যাকেজ থেকে এককালীন টাকা পাবেন অগ্নিবীর। তারপরেও তিনি নিজের পেশা বেছে নেওয়ার নানা রকম সুযোগ পাবেন।’

Published by:Siddhartha Sarkar

(Source: news18.com)