
১৯৩৩ সালে পরাধীন ভারতে জন্ম বেদ রাম নাগরের। ২৭ বছর বয়সেই দুধের ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লিটার দুধই বিক্রি হত। তার বেশি নয়। ব্যবসা বাড়ে না কিছুতেই। কী করা যায়? দুগ্ধশিল্প নিয়ে শুরু করলেন পড়াশোনা। বুঝতে পারলেন, ব্যবসা বাড়াতে চাইলে প্রসেসিং এবং ডিস্ট্রিবিউশনে মনোযোগ দিতে হবে।
১৯৮০ সালে প্রথম কোম্পানি খুললেন বেদ রাম নাগর। ৮৪-তে চালু করলেন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট। দু’বছর পর ‘ভিআরএস ফুডস’ নামের কোম্পানি খুললেন তিনি। ব্যস, আর পিছনে তাকাতে হয়নি।
১৯৮৭ সালে সাহিবাবাদে প্রথম বড় দুগ্ধপ্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন করেন বেদ রাম নাগর। দুধ প্রসেসিং ও ডিস্ট্রিবিউশনে জোয়ার আসে। ১৯৯২ সালে গুলাওঠিতে আরেকটি প্লান্ট চালু করেন। কোম্পানি ততদিনে গ্রাহকদের মন জয় করে নিয়েছে। ২০০৪ সালে পারস মিল্ক দিল্লি-এনসিআরের গণ্ডি পেরিয়ে পা রাখে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে। চালু হয় নতুন প্লান্ট। ব্যবসা বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যান বেদ রাম নাগর।
২০০৫ সালে বেদ রাম নাগরের মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর ছেলেরা ব্যবসার দায়িত্ব নেন। কোম্পানিকে আরও বড় করেন। ২০০৮ সালে কোম্পানির নাম বদলে ‘বেদরাম অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড’ রাখা হয়। এরপর পারস ব্র্যান্ড আরও জনপ্রিয় হয়। দুধ ছাড়াও বিভিন্ন নতুন দুগ্ধজাত পণ্য বাজারে আনে। এখন শুধু দুধ নয়, বেদ রাম নাগরের ছেলেরা স্বাস্থ্যসেবা, রিয়েল এস্টেট, শিক্ষা ও ওষুধ শিল্পেও চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। কোম্পানির আয় বেড়েছে।
বেদ রাম নাগরের পাঁচ ছেলে। এঁদের মধ্যে সুরেন্দ্র সিং নাগর রাজ্যসভার সংসদ সদস্য। বাকি ছেলেরা ব্যবসা সামলাচ্ছেন। ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবাতেও যুক্ত। চৌধুরি বেদ রাম চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে তাঁরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে নানা সাহায্য করেন।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবসা রয়েছে পারস মিল্ক-এর। বিশেষ করে হরিয়ানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশে। ৫,৪০০ গ্রামের হাজার হাজার কৃষক দুধ উৎপাদন ও পশুপালন করেন শুধু দুধ কেনাই নয়, কোম্পানি কৃষকদের অর্থ সহ নানা সাহায্যও দেয়।
বর্তমানে পারস মিল্ক প্রতিদিন প্রায় ৩৬ লাখ লিটার দুধ বিক্রি করে। দিল্লি-এনসিআর সহ ভারতের বড় শহরগুলোতেই এর বাজার। কোম্পানির ঘি, মাখন, পনির, দই ও ফ্লেভার্ড মিল্ক-এর মতো নানা পণ্যও ব্যাপক জনপ্রিয়।