#নয়াদিল্লি: ১৯৯০ সাল থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং হাব হয়ে উঠেছে ভারত। কম খরচ, উচ্চমানের সম্পদের সহজলভ্যতা এবং ক্লায়েন্টের অর্ডার পেতে কোম্পানিগুলোর সমস্ত ধরনের অর্ডার গ্রহণের নমনীয়তাই এর মূল কারণ।
যাই হোক, গত কয়েক বছর ধরে ভারতকে আবার সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টের ফিল্ড হিসেবে পুনরুত্থিত হতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইটি ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে। করোনা-মহামারীর জেরে অর্থনীতি ধ্বসে গিয়েছে। সমস্ত কোম্পানিই বাধ্য হয়ে যোগাযোগ থেকে লেনদেন, নিজেদের ভার্চুয়ালি গড়ে তুলেছে। এর ফলস্বরূপ নতুন ডেলিভারি মডেল বিকশিত হয়েছে-সে ওয়ার্ক ফ্রম হোম থেকে হাইব্রিড মডেল পর্যন্ত। নিয়োগকর্তারাও কর্মক্ষেত্রে অনেক নমনীয় হয়েছেন, এমনটা আগে কখনও দেখা যায়নি। আইটি ডেভেলপার্স বিশেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, অপারেশনস, ক্লাউড গাইজ, ডাটা ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সারা দেশে নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের চাহিদা শীর্ষে পৌঁছেছে। প্রতিভা থাকলে প্রতিদিন চাকরিপ্রার্থীর জন্য অগণিত সুযোগ অপেক্ষা করে আছে। আর এখন ঘরের স্টাডি টেবিল থেকেই চাকরি পাওয়া এবং কাজের ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব। সঠিক প্রার্থীর জন্য বেতনের কোনও উর্ধসীমা নেই।
প্রবন্ধের এই সিরিজে আমরা সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করব, আইটি দুনিয়ায় কোন ধরনের চাকরি পাওয়া যায় এবং সে জন্য কীভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট আসলে কিছু সহজ প্রক্রিয়ার সমাহার:
· চাহিদা খুঁজে বের করা (বিএ)
· সফটওয়্যারের কার্যকারীতা সম্পর্কে চিন্তা করা (পিএম)
· ব্যবহার এবং এনগেজমেন্ট(ইউআই/ইউএক্স)
· কীভাবে এটা তৈরি করা যায় তার পরিকল্পনা করা (আর্কিটেকচার)
· বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করা (ডেলিভারি)
· ধারাবাহিকতা বজায় রাখা (ডিইভিওপিএস)
· সময়ে সময়ে আপডেট করা (সিআই/সিডি/সিএম)
সফটওয়্যারটি শুধুমাত্র ইনস্টল করা সিস্টেমে কাজ করবে না কি ওয়েবের মাধ্যমে যে কেউ এর ব্যবহার করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন সফটওয়্যার ডেভেলপার। কীভাবে ডেটা পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সেটাও বেছে নিতে পারেন তিনি। এটাকে নিরাপদে রাখতে কিছু সুরক্ষা বৈশিষ্ট পরিকল্পনা করতে পারেন। এবং সফটওয়্যার কীভাবে অন্যান্য সফটওয়্যারের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করবে সেটাও তাঁকে তৈরি করে দিতে হবে। ডেটা, ব্যবহারকারী এবং ব্যবহারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে সফটওয়্যারটির শক্তিশালী ক্লাউড এবং বিগ ডেটা প্রযুক্তি সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে। আজকাল কোম্পানিগুলো ডাউনলোডযোগ্য সফটওয়্যার বিক্রি করতে পছন্দ করে না বরং এসএএএস মডিউলে অ্যাকসেস দিয়ে ডাউনলোড না করে সরাসরি অনলাইনে সফ্টওয়্যারটি ব্যবহার করতে দিতে চায়৷
সকলের শেখার মতো ৪টি প্রয়োজনীয় কাজ:
· ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সফটওয়্যারটি কীভাবে সবার কাছে প্রদর্শিত হবে সেটা তৈরি করা)
· ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সফটওয়্যার কীভাবে কাজ করে সেটা তৈরি করা)
· ডেটাবেস ডেভেলপমেন্ট (যেখানে ফ্রন্ট এন্ড এবং ব্যাকএন্ড ডেটা প্রসেসিং এবং স্টোরেজের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে)
· এপিআই এবং ডিইভিওপিএস (অন্যান্য সফটওয়্যারগুলির সঙ্গে আপনার সফটওয়্যারটিকে প্লাগ এবং সংহত করতে বা ক্লাউডে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা)
লেটেস্ট ট্রেন্ড অনুযায়ী সফটওয়্যার একবার ইনস্টল করার পর সিআই/সিডি/সিএম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর আপডেট হতে থাকে। স্মার্টফোনে অ্যাপ আপডেটের সময় এটা আমরা লক্ষ্য করেছি, এজন্য ক্লাউড প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ। শুধু কয়েক সেকেন্ডের ডাউনলোড, ব্যস, তৎক্ষণাৎ আপডেট হয়ে যায় অ্যাপ। প্রযুক্তির যেমন অভূতপূর্ব উন্নতি হচ্ছে সেখানে সফটওয়্যার বিভিন্ন ডিভাইস, যন্ত্রপাতি এবং বিস্তৃত এন্টারপ্রাইজ সিস্টেমে কাজ করার জন্য প্রয়োজন। এসব নেহাতই তাৎক্ষনিক সময়ের চাহিদা নয়, বেশিরভাগ চাকরিই আগামী ২৫ বছরের জন্য ফোকাস করে গড়ে উঠছে।
সুতরাং যদি আইটি দুনিয়ার একটা কাজের কথা বিশেষ করে বলতে হয়, তাহলে সেটা হল ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট। এই কারণে এটার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে:
ক) কেন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার? আজকাল সবাই অনলাইনে। প্রতিটা অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনই ব্যবহারকারীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। যখন কেউ কোনও ওয়েবসাইটে লগ ইন করেন তখন ওয়েলকাম পেজ, মেনু, সাইট ম্যাপ এবং অন্যান্য জিনিস তাঁর কাজটাকে সহজ করে দেয়। এই সমস্ত উপাদানকে ‘ফ্রন্ট এন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
একজন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপারকে ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপার নামেও ডাকা হয়। যিনি ইন্টারফেসের ডিজাইন এবং সম্পাদনার দায়িত্বে থাকেন। ব্যবহারকারীদের অ্যাপ্লিকেশন অ্যাকসেস করতে এই ইন্টারফেসের প্রয়োজন। ওয়েব ডিজাইনার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ওয়েবসাইটের লুক তৈরি করেন এবং প্রয়োজনীয় অনুভূতি এনে দেন। ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার সিএসএস, এইচটিএমএল এবং জাভাস্ক্রিপ্টের মতো কোডিং ভাষা ব্যবহার করে এটা নিশ্চিত করেন যাতে সেই ডিজাইনটা অনলাইনে কাজ করে।
খ) কারা ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপারদের নিয়োগ করে? সফটওয়্যার সংক্রান্ত সমস্ত কোম্পানিরই ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার প্রয়োজন। সেটা জুনিয়র, মিডল বা সিনিয়র লেভেলের জন্য হতে পারে। ওয়েব অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, আইটি সংস্থা, কনসাল্টিং কোম্পানি এবং স্বাস্থ্য, অর্থ, খুচরো ইত্যাদি সেক্টরের সংস্থা – সকলেরই ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপারদের প্রয়োজন৷
গ) কোথাকার নিয়োগকর্তা? এই ধরনের সংস্থাগুলি ভারত, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ব্রাজিল প্রভৃতি প্রযুক্তিক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেশগুলিতে অবস্থিত। ভারতের টায়ার টু এবং টায়ার থ্রি শহরগুলি ছাড়াও আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাও নতুন ট্যালেন্ট সেন্টার হিসেবে উঠে আসছে।
ঘ) কত উপার্জন করা সম্ভব? অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার স্তরের উপর ভিত্তি করে বার্ষিক ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা রোজগার করা সম্ভব।
ঙ) কাজ পেতে কী জানতে হবে?
*সফটওয়্যার বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের কোন জিনিসটা থেকে আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে কাজ করে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে (গবেষণা করতে হবে, ডায়নামিক হয়ে উঠতে হবে)
*সমস্ত ডিভাইসে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ভালোভাবে ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে ভালো মানের ওয়েব ডিজাইন ব্যবহার করতে হবে।
*অ্যাপ্লিকেশনগুলি ডেভেলপের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যা কোম্পানি এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা ছুঁয়ে যাবে।
*ব্যবহারকারীদের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার আরও সহজ এবং কার্যকর করে তুলতে হবে।
*ওয়েবসাইটের কার্যকারিতার নিরীক্ষণ করতে হবে, ট্রাফিক হ্রাসের উপর নজর রাখতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
* অ্যাপ এবং ফিচার কোডের মাধ্যমে ডেভেলপমেন্ট টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখ তে হবেএবং আগামীদিনে কীভাবে ওয়েবসাইটের উন্নতি করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
* ওয়েবসাইটের অ্যাপ এবং ফিচার তৈরি করতে অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপে সহায়তা করতে হবে।
চ) আর যা প্রয়োজন
* কম্পিউটার সায়েন্স বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি অথবা এই বিষয়ে ইউটিউব ভিডিও থেকে জ্ঞান সঞ্চয়।
* এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট এবং জেকোয়ারি-সহ কোডিং-এর ভাষার সঙ্গে পরিচিত হতে হবে।
* সার্ভার সাইড সিএসএস বুঝতে হবে।
* গ্রাফিক ডিজাইন সফটওয়্যার (যেমন, অ্যাডব ইলাস্ট্রেটর)-এর সঙ্গে পরিচিত থাকতে হবে।
* এসইও-র মৌলিক বিষয়গুলো জানতে হবে।
* সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা থাকতে হবে। সঙ্গে চাই সহকর্মী, ম্যানেজার এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার দক্ষতা।
* দক্ষ টিম প্লেয়ার হতে হবে।
ছ) কীভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে?
* সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট এবং এইচটিএমএল শিখতে হবে। রিঅ্যাক্ট, ভ্যু বা অ্যাঙ্গুলারের মতো ফ্রেম ওয়ার্ক অনুসরণ করতে হবে।
* অনলাইনে/বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোনা এবং গবেষণার মাধ্যমে এই ভূমিকায় নিজেকে তৈরি করতে হবে।
* নিজের দক্ষতাগুলোকে ঝালিয়ে নি।তে হবে ডামি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে হবে। নিজের পোর্টফোলিওকে উন্নত করতে হবে।
* কম্যান্ড লাইন এবং ভার্সান কন্ট্রোল শিখতে হবে।
জ) ফ্রন্ট এন্ড স্কিলের জন্য আর কিছু কি দরকার?
* টিউটোরিয়াল, টুলস এবং ওপেন সোর্স প্রোজেক্টগুলো দেখতে হবে।
* ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার ক্লাসে ভর্তি হতে হবে। অভিজ্ঞদের থেকে শেখার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।
* জুনিয়র ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার হিসেবে কাজ করতে হবে। প্রফেশনালের অধীনে কাজ করা দক্ষতা আয়ত্তের সবচেয়ে ভালো উপায়।