দায় কার? হরিদেবপুরে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে রাজ্যবিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞসহ তদন্তকারী দল

দায় কার? হরিদেবপুরে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে রাজ্যবিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞসহ তদন্তকারী দল

#কলকাতা: দিনভর দফায় দফায় বৈঠক। ঘটনাস্থলে বারবার পরিদর্শন। বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন। কার্যত চাপান-উতোরেই কেটে গেল গোটা একটা দিন। বেহালার হরিদেবপুরকান্ডের উৎস কোথায়? দায় কার? হরিদেবপুরে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে এবার রাজ্য বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞসহ তদন্তকারী দল পাঠানো হল ঘটনাস্থলে।

কলকাতা পুরসভা থেকে প্রাথমিকভাবে বিএসএনএলের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। কলকাতা টেলিফোনের কর্তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ওই পোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি তাদের।কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষ আঙুল তোলে সিইএসসির  দিকেও। পুরসভার প্রাথমিক রিপোর্টে বিতর্কিত পোস্টের পাশে সিইএসসি কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ি তথ্য সামনে আনা হয়। সিইএসসি কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে আলো বিভাগও প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়ে দেয় ওই বিদ্যুৎ সংযোগ কে বা কারা করেছিল তা তদন্ত সাপেক্ষ। বিতর্কিত পোস্টের উল্টো দিকে নির্মীয়মান বাড়ির দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। ওই বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে থাকত বলেও প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুরসভার আলো বিভাগের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে। পুরসভার আলো বিভাগের প্রাথমিক রিপোর্টে মেয়ের পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তদন্তে যে-বা যিনিই দোষী সাব্যস্ত হবেন। পুরসভার আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হরিদেবপুরে ৪১ পল্লীর কাছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে ১২ বছরের কিশোরের। তাঁর নাম নীতিশ যাদব। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কিশোরকে বাঁচানো যায়নি। শিক্ষকের বাড়িতে প্রসাদ দিতে যাওয়ার কথা ছিল নীতিশের। কিন্তু তা আর সারা হল না। শিক্ষকের বাড়ির সামনেই রাস্তায় জল জমে ছিল। সেখানে ল্যাম্পপোস্টে হাত দেওয়া মাত্রই জমা জলে লুটিয়ে পড়ে ছেলেটি। বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনার পরই বিতর্ক দেখা দিয়েছে ফের। এবার সেই বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।

এদিন তিনি বলেন, ”হরিদেবপুরের এই মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই ঘটনায় মর্মাহত আমরা। সব রকম ভাবে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াব। আজ পুরসভার গাড়ি থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করব। কার দায়, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। তবে যারাই এই ঘটনায় দায়ী, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

দিনভর এই দায় চাপানোর পর্ব শেষে তৃতীয় পক্ষকে মাঠে নামাল কলকাতা পুরসভা। পুরসভার বিভাগীয় তদন্ত এবং পুলিশি তদন্ত পৃথকভাবে হলেও একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট নেওয়া হবে। কমিটিতে কলকাতা পুরসভা, সিএসই এবং হরিদেবপুর থানার আধিকারিকরা থাকবেন। দুদিনের মধ্যে এই কমিটির রিপোর্ট দেবে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সীর বক্তব্য,  ওই এলাকায় আলো জ্বালানোর জন্য লাইনে বিদ্যুৎ আসে সন্ধ্যা ৬টার পরে। ঘটনা তার আগে ঘটেছে। সিইএসসি আধিকারিকেরা সাফ জানিয়েছেন, তাদের লাইন মাটির নীচ দিয়ে গেছে। এই জন্য পোস্টে বিদ্যুৎ  যাওয়ার দায় তাদের নয়।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে? উত্তর খুঁজতে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দায় ঠেলাঠেলির পাশেই উঠে আসছে হুকিংয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তদন্তে যাদবপুরকেও যুক্ত করা হয়েছে। আগামিকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন ডিরেক্টর অব ইলেকট্রিসিটি গভ ওয়েস্ট বেঙ্গল  একে গঙ্গোপাধ্যায়, যাদবপুর ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক নীলাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে পারেন পুরসভার আলো বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সী।

Published by:Rachana Majumder

(Source: news18.com)