হাওয়ায় ভাসে কোভিড ভাইরাস, তত্ত্বে সিলমোহর নয়া গবেষণায়

নয়াদিল্লি: কীভাবে ছড়ায় কোভিড সংক্রমণ? বিশ্বে সংক্রমণ ধরা পড়ার গোড়ার সময় থেকেই বারবার এই নিয়ে গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে। তার মধ্যে একটি কারণ ছিল কোভিড ভাইরাসের বায়ুবাহিত হওয়া। ফের একবার ওই আশঙ্কার দিকেই দিক নির্দেশ করল নতুন একটি গবেষণা।  

কাদের গবেষণা:
হায়দ্রাবাদ এবং মোহালির হাসপাতালগুলিতে সঙ্গে হায়দ্রাবাদের CSIR-CCM এবং চন্ডীগড়ের  CSIR-IMTech-এর একদল বিজ্ঞানীর দীর্ঘ যৌথ গবেষণায় সার্স কোভি়ডের (SARS-CoV-2) এর বায়ুবাহিত সংক্রমণ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। জার্নাল অফ অ্যারোসল সায়েন্সে (Journal of Aerosol Science) প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি।

যদিও কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে এখনও একেবারে ঠিকঠাক ধারণা পাওয়া যায়নি। আগে মনে করা হতো পৃষ্ঠতলের (Surface) মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে কোভিড ভাইরাস। পরে মহামারি বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে যে দেশগুলিতে লোকেরা কোভিডের সময়ে নিয়মিত মাস্ক পরেছিল সেই এলাকা তুলনায় কম মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। পরে কোয়ান্টিটেটিভ সমীক্ষা দেখায় যে বাতাসে সংক্রামক করোনভাইরাসের উপস্থিতি কম ছিল।

কীভাবে গবেষণা:
কোনও এলাকায় সেখানকার পরিবেশে, বিশেষ করে বায়ুতে ঠিক কত পরিমাণ কোভিড ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে তা নিয়ে কোভিড ভাইরাসের জিনোমের তথ্য নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। কোভিড সংক্রমিতরা রয়েছেন এমন বিভিন্ন স্থান থেকে স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হয়। হাসপাতাল, কোভিড রোগীরা রয়েছেন এমন ঘর, বাড়িতে কোয়রান্টিন ছিলেন এমন ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। 

কী খোঁজ:
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড সংক্রমিতদের আশেপাশে বাতাসে ঘন ঘন ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়। যেখানে যত বেশি পরিমাণ কোভিড রোগীরা রয়েছেন, সেখানে এর পরিমাণের সংখ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। সংক্রমণের তীব্রতা নির্বিশেষে সব সময়েই  বাতাসে ভাইরাস ছড়ান রোগীরা। এর থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়। যদিও বায়ুবাহিত হলেও কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের উপরই ভরসা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।  

গবেষক দলের সদস্য বিজ্ঞানী ড. শিবরঞ্জনী মোহারির (Shivranjani Moharir) বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি যে বন্ধ স্থানে বায়ুচলাচল না হলে বেশ কিছুক্ষণ বায়ুতে উপস্থিত থাকতে পারে করোনভাইরাস। আমরা দেখেছি যখন একটি ঘরে দুই বা তার বেশি কোভিড -19 রোগী উপস্থিত ছিলেন তখন বাতাসে ভাইরাস খুঁজে পাওয়ার হার ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে যখন ঘরে কোনও কোভিড রোগী নেই তখন এই হার নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫.৮ শতাংশে।  তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণায় যা দেখা গিয়েছে, তা পূর্ববর্তী গবেষণাগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সার্স কোভিডের RNA-এর ঘনত্ব বাইরের বাতাসের তুলনায় ঘরের ভিতরের বাতাসে বেশি। সাধারণ কমিউনিটি সেন্টারের তুলনায় হাসপাতালের অন্দরে বেশি দেখা গিয়েছে।’

গবেষক দলের প্রধান, CSIR-এর এমিরেটাস অধ্যাপক এবং টাটা ইনস্টিটিউট ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটির পরিচালক  ডাঃ রাকেশ মিশ্র বলেন, ‘ক্লাসরুম, মিটিং হলের মতো স্থানগুলিতে সংক্রমণের সম্ভাবনার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বায়ু নজরদারি একটি কার্যকর মাধ্যম। এটি সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশল নিতে সাহায্য করতে পারে।’

(Source: abplive.com)