সুস্থ জীবনের টানে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে, হল না শেষরক্ষা, মেক্সিকো সীমান্তে দেহভর্তি কন্টেনার

সুস্থ জীবনের টানে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে, হল না শেষরক্ষা, মেক্সিকো সীমান্তে দেহভর্তি কন্টেনার

টেক্সাস: নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যায় একরত্তি আয়লান কুর্দি। বালিয়াড়িতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা তার নিথর দেহে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায় ঢেউ। টিভির পর্দায় সেই দৃশ্য দেশে দু’দিন চোখের জলে ভাসে বিশ্ব। যুদ্ধ, হানাহানি বন্ধের দাবিতে, অভিবাসী, শরণার্থীদের দের আশ্রয় দেওয়ার আর্তি শোনা যায় কয়েক দিন। তার পর আবার ক্ষমতা, কাঁটাতারের চোখরাঙানির আবার সয়ে যায় গায়ে। সেই সয়ে যাওয়া জীবনকেই ফের নাড়া দিল  ৪৬টি নিথর দেহ। রক্ত-মাংসের বাজারদর সম্পর্কে অজ্ঞাত প্রাণগুলি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঢুকে পড়েছিল দমবন্ধ করা লোহার কন্টেনারে। কিন্তু প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়া আর হল না (Migrant Issue)।

আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তের কাছে কন্টেনার থেকে উদ্ধার দেহ

পূর্বতন ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের আমলে অভিবাসী এবং শরণার্থী বিবাদ চরমে উঠেছিল (US Migrant Crisis)। বিশেষ করে মেক্সিকো  (US-Mexico Border) থেকে আমেরিকায় প্রবেশে নৈব নৈব চ ভাবভঙ্গি নিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর কংক্রিটের দেওয়াল তুলে দেওয়ার কাজেও হাত দেন তিনি। বছর দেড়েক আগে সরকার পাল্টে গিয়েছে আমেরিকায়। ট্রাম্পের জায়গায় এখন ক্ষমতায় জো বাইডেন। তবে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বিবাদ আজও মেটেনি। বরং সাম্প্রতিক কালে আমেরিকায় শরণার্থী এবং অভিবাসী প্রবেশ যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে পূর্বসূরি ট্রাম্পের কঠোর নীতিই বজায় রাখার পক্ষে বাইডেন সরকার।

সেই পরিস্থিতিতেই সোমবার আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তের কাছে, আমেরিকার টেক্সাসের সান আন্তোনিয়ো শহরের প্রত্যন্ত এলাকায়, রেললাইনের ধারে একটি কন্টেনারের ভিতর থেকে উদ্ধার হল ৪৬টি ঝরে যাওয়া তরতাজা প্রাণ। মরণাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ১৬ জনকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁরা। যে কয়েক জনের শরীরে প্রাণ রয়েছে, উদ্ধারের সময় তাঁদের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল, হিট স্ট্রোকে তাঁদের প্রাণ যায় যায় অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার পাওয়াদের মধ্যে চার শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, কন্টেনারের ভিতর থরে থরে দেহ উদ্ধার হলেও, এক বিন্দু পানীয় জল চোখে পড়েনি (Dead Bodies)।

সান আন্তোনিয়োর পুলিশ প্রধান চার্লস হুড সংবাদমাধ্যমে বলেন, “যাঁরা বেঁচেছিলেন, সকলের গা পুড়ে যাচ্ছিল জ্বরে। হিট স্ট্রোকে নেতিয়ে পড়েছিলেন। ওই কন্টেনারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কাজ করছিল না।”

মেক্সিকো সীমান্ত থেকে প্রায় ২ ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সান আন্তোনিয়ো। সোমবার সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও ছিল অত্যধিক বেশি। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় একটি বহুতলে নির্মাণকার্য চলছিল। পরিত্যক্ত অবস্থায় কন্টেনারটি দেখেও, গুরুত্ব দেননি কেউ। কিন্তু কন্টেনারের ভিতর থেকে কান্নার সুর শুনে কৌতূহল জাগে এক ব্যক্তির। কাছে এসে দেখেন কন্টেনারের দরজাটি ঈষৎ ফাঁকা। সেখানে চোখ রেখে ভিতরে দেখতে চাইলে থরে থরে দেহ দেখতে পান। তাতেই খবর দেন পুলিশে।

এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের অনুমান, মানব পাচারের উদ্দেশেই কন্টেনারের ভিতর সকলকে ঢোকানো হয়েছিল। মৃত ৪৬ জন এবং জীবিত ১৬ জনের প্রত্যেকেই অভিবাসী বলে সন্দেহ। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে ইতিমধ্যেই গুয়াতেমালার নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা গিয়েছে। মেক্সিকো হয়ে বেআইনি ভাবে তাঁরা আমেরিকায় ঢুকেছিলেন বলে অনুমান। আশেপাশের দেশ থেকে এ ভাবেই দলে দলে অভিবাসী এবং শরণার্থী দালাল মারফত আমেরিকায় প্রবেশ করেন। কিন্তু আমেরিকার ঢোকার স্বপ্ন নিয়ে বেরনো মানুষেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়েন বলে দাবি পুলিশের।

বেআইনি অভিবাসী প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক চরমে

এর আগে, ২০১৭ সালে ওই সান আন্তোনিয়ো শহরেই একটি ট্র্যাক্টর ট্রেলারে লুকিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করতে গিয়ে মৃত্য়ু হয় ১০ অভিবাসীর। বেআইনি ভাবে অভিবাসী প্রবেশ করানোয়, মানব পাচার চক্ররে সঙ্গে যুক্ত থাকায়, ওই ট্রেলারের চালকের জেলও হয়।

(Source: abplive.com)