‘উদ্ধবই আমাদের নেতা’, বিক্ষুব্ধ বিধায়কের গলায় উল্টো সুর, শিবসেনার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে!

‘উদ্ধবই আমাদের নেতা’, বিক্ষুব্ধ বিধায়কের গলায় উল্টো সুর, শিবসেনার  নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে!

মুম্বই: পালা করে আড়াই বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়েই গোল বেঁধেছিল বিজেপি-র সঙ্গে। বিদ্রোহের আগুনে সেই আড়াই বছরই মহারাষ্ট্রের (Maharashtra Political Crisis) মসনদে থাকতে পারলেন উদ্ধব ঠাকরে (Uddhav Thackeray)। দু’সপ্তাহব্যাপী টানাপোড়েনের পর বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। ছেড়ে দেন বিধান পরিষদের সদস্যতাও। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি, বরং শিবসেনার দফতরেই আগামী দিনগুলি কাটিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে শিবসেনার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণই প্রশ্নের মুখে। তাই শিবসেনার রাশও তিনি শেষ অবধি ধরে রাখতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ধন্দ দেখা দিয়েছে।  উদ্ধবের দাবি, তাঁর থেকে শিবসেনা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কিন্তু বিদ্রোহী একনাথ শিন্ডের (Eknath Shinde) দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে তাঁর হাতেই আসল শিবসেনা (Shiv Sena)। তাতেই উত্তরাধিকার সূত্রে বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনার দায়িত্ব পাওয়া উদ্ধব দলের রাশ আদৌ ধরে রাখতে পারবেন কিনা, প্রশ্ন উঠছে।

শিবসেনার রাশ হাতে রাখতে পারবেন উদ্ধব!

বিগত কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে একই প্রশ্ন উঠে আসছে বার বার,  শিবসেনার রাশ কার হাতে থাকবে? বালাসাহেব ঠাকরের তৈরি দল কি তাঁর ছেলে ধরে রাখতে পারবেন? নাকি বিক্ষুব্ধদের সমর্থনে সেই অধিকার পাবেন বিদ্রোহী একনাথ শিন্ডে? সেই আবহেই বৃহস্পতিবার সকালে আস্থাভোটের আগে, বুধবার রাতেই নাটকীয়ভাবে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন উদ্ধব ঠাকরে।  নিজে গাড়ি চালিয়ে, রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা পত্র জমা দেন রাজ্যপালের কাছে। সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে আদিত্য এবং তেজস।

মুম্বইয়ে মুম্বইয়ে পর পর এই নাটকীয় ঘটনাক্রম যখন এগিয়ে চলেছে, সেই সময় রাতেই গুয়াহাটি থেকে গোয়ার হোটেলে পৌঁছন শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়করা। ইস্তফার ঘোষণা করে, ফেসবুক লাইভে উদ্ধব ঠাকরে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়ার কোনও আফশোস নেই। আমার কাছে শিবসেনা আছে। আমার থেকে শিবসেনা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”
গ্রাফিক্স আউট

এ দিকে, বিদ্রোহী শিন্ডেও বুধবার দাবি করেন, তাঁরাই আসল শিবসেনা বলে। তাঁর দাবি, সঠিক অর্থে বালা ঠাকরের আদর্শ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরাই। কিন্তু, শেষমেশ শিবসেনার রাশ কার হাতে থাকবে?

সংখ্যার হিসেবে, বর্তমানে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় শিবসেনার মোট বিধায়ক সংখ্যা ৫৫।  নিয়ম অনুযায়ী, দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৭ জন বিদ্রোহী শিবিরে থাকলে, তারা দলের প্রতীক দাবি করতে পারে।শিন্ডের দাবি, তাঁর দিকে ৩৯ জন শিবসেনা বিধায়ক রয়েছেন।

তাই বাস্তবে এমন হলে একনাথ শিণ্ডের কাছে শিবসেনার অধিকারও হারাবেন উদ্ধব। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, দেবেন্দ্র ফড়নবীশের নেতৃত্বে বিজেপির সরকার তৈরি হলে শিন্ডে বিদ্রোহের কী পুরস্কার পাবেন? তাঁকে কি মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে?

গত সপ্তাহে সোমবার রাতে মহারাষ্ট্র ছেড়েছিলেন, একনাথ শিন্ডে-সহ বিদ্রোহী বিধায়করা। প্রথমে তাঁরা যান বিজেপি শাসিত গুজরাতে। সেখানে একদিন পাঁচতারা হোটেলে থেকে চার্টার্ড বিমানে চড়ে পৌঁছে যান আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমে। সেখানেও এই পাঁচতারা হোটেলে প্রায় এক সপ্তাহ থাকেন বিদ্রোহীরা।

বুধবার রাতে ফের চার্টার্ড বিমানে চেপে প্রথমে গুজরাত, তার পর আর এক বিজেপি শাসিক রাজ্য গোয়ায় গিয়ে ওঠেন সকলে। সেখানেও তাঁরা উঠেছেন পাঁচতারা হোটেলে। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছেন বিদ্রোহী শিন্ডে। তার আগে বুধবার রাতে, মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে, উদ্ধব ঠাকরে বলেন, “যাঁদের কাছের ভেবেছিলাম, তাঁরাই বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। আর যাঁরা দূরে সরে যাবে ভেবেছিলাম (কংগ্রেস-এনসিপি), তাঁরাই শেষ অবধি পাশে থাকলেন। সনিয়া গাঁধী এবং শরদ পাওয়ারকে ধন্যবাদ।”

শিবসেনায় নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত!

এরই মধ্যে শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়ক দীপক কেশরকর নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “এদিকে, রাতেই আবার শিণ্ডে-ঘনিষ্ঠ আরেক বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়ক দীপক কেসরকর ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, “উদ্ধব ঠাকরেই আমাদের নেতা। সঞ্জয় রাউতের জন্যই আজ এই পরিস্থিতি।” তাহলে কি আগামীদিনে শিবসেনার দুই গোষ্ঠী ফের এক হয়ে যেতে পারে? নাকি এর মধ্যে কি কোনও বিশেষ কৌশল আছে? সময়ই কথা বলবে।

(Source: abplive.com)