মহাজাগতিক বিকিরণে কি ক্ষতিগ্রস্ত মঙ্গলগর্ভ! রোভারের অনুসন্ধানে ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত

মহাজাগতিক বিকিরণে কি ক্ষতিগ্রস্ত মঙ্গলগর্ভ! রোভারের অনুসন্ধানে ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত

#নয়াদিল্লি: মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়ে এখনও অনুসন্ধান চালাচ্ছে পৃথিবীর মানুষ। একটা কথা স্পষ্ট যে মঙ্গল গ্রহে পৃথিবীর মতো প্রাণের অনুকূল পরিবেশ নেই। তবে বিজ্ঞানীরা এখনই এ কথা বলতে পারছেন না যে, মঙ্গল গ্রহে কোনও প্রাণী নেই বা আগেও কখনই ছিল না! আসলে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহ নিয়ে যত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন ততই বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

এর মধ্যেই নাসার ‘কিউরিওসিটি রোভার’ আরও একটি জটিল বিষয় সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। জানা গিয়েছে মঙ্গল গ্রহের উপর মহাজাগতিক বিকিরণ এত বেশি যে তার ক্ষতিকারক প্রভাব শুধু মাটির উপরেই নয়, মাটির নীচেও পড়তে পারে।

মঙ্গলগর্ভে প্রাণ স্পন্দন!—
নাসার (NASA)-র পাঠানো স্বয়ংক্রিয় যান মঙ্গলের মাটির নীচে হারানো জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে চলেছে। কিন্তু তার পাঠানো তথ্য বলছে এখনও মঙ্গল গর্ভে কোনও প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। নাসার তরফের জানানো হয়েছে, এ জন্য মঙ্গলের মাটির আরও গভীরে পৌঁছাতে হবে। সে জন্য আরও বেশি করে মঙ্গলের মাটি খোঁড়া দরকার। হয়তো সেখানে পাওয়া যেতে পারে অবলুপ্ত প্রাণীর শরীরের অংশ!

কতটা খোঁড়া দরকার—
বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গিয়েছে যে মঙ্গল গ্রহের মাটির নীচে কম করে প্রায় ৬.৬ ফুট অর্থাৎ প্রায় ২ মিটার খনন করা প্রয়োজন। হিসেব বলছে ওই দূরত্ব পর্যন্ত মঙ্গলের মাটির নীচে মহাজাগতিক রশ্মি পৌঁছনো সম্ভব নয়। তার ফলে আশা এখনও রয়েছে যে, এই অংশে প্রাণের সাড়া পাওয়া যেতেও পারে।

আরও পড়ুন: রেকর্ড-রেকর্ড-রেকর্ড! শুরু হতেই তাক লাগিয়ে দিল পদ্মা সেতু! কী হল জানেন?

মঙ্গলপৃষ্ঠে ক্ষতিকর বিকিরণ—
আসলে দীর্ঘ সময় ধরে মঙ্গল গ্রহে কোনও ‘ম্যাগনেটিক ফিল্ড’ বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নেই। এর ফলে সেখানকার বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে তাই মঙ্গল গ্রহের উপর অনেক বেশি মাত্রায় মহাজাগতিক রশ্মি বিকিরণ হয়। যার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে মাটিতে এবং মাটির গভীরে অনেকটা জায়গা জুড়ে। এই বিকিরণ অ্যামিনো অ্যাসিড পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়, ফলে প্রাণের সঞ্চার হতে পারে না।

দ্রুত নষ্ট হচ্ছে মঙ্গলের মাটি—
গবেষকরা আরও দেখেছেন যে, এই পুরো প্রক্রিয়াটি মহাজাগতিক কালানুক্রম অনুযায়ী খুব কম সময়ের মধ্যে ঘটে গিয়েছে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের পদার্থবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার পাভলভ (Alexander Pavlov) বলেছেন, মহাজাগতিক বিকিরণের প্রভাবে মঙ্গলগ্রহের শিলা এবং মাটি থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড দ্রুত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাঁরা যতটা ধারণা করেছিলেন তার থেকেও দ্রুত।

দুই কোটি বছর সময় –
নাসা প্রেরিত রোভার মঙ্গলপৃষ্ঠে মাত্র দুই ইঞ্চি অর্থাৎ পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরতায় খনন চালাতে পেরেছে। এই গভীরতায় সমগ্র মঙ্গলপৃষ্ঠে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড পুরোপুরি নষ্ট হতে প্রায় দু’কোটি বছর সময় লাগবে। তবে জল এবং মাটির ছিদ্র সেই সময়কে আরও এগিয়ে আনতে পারে।

বিকিরণ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড –
পৃথিবীর তুলনায় মহাজাগতিক বিকিরণ মঙ্গলপৃষ্ঠে প্রায় ৭৫০ গুণ বেশি। এর ফলে সূর্যের সুপারনোভা-সহ অন্য ক্ষতিকারক রশ্মিগুলি মঙ্গলপৃষ্ঠের পাথরের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। আয়োনাইজ করে জৈব অংশগুলি ধ্বংস করে। যদিও অ্যামিনো অ্যাসিডের অস্তিত্ব থাকা মানেই জীবনের চিহ্ন নয়। তবে এটি জীবনের ভিত্তি। জীবনের এই সব সঙ্কেতের উপর মহাজাগতিক রশ্মি বিকিরণের প্রভাব নিয়েই এখন গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

(Source: news18.com)