#তেহরান: শক্তিশালী একাধিক ভূমিকম্পে শনিবার কেঁপে উঠেছে দক্ষিণ ইরান! ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত পাঁচজন নিহত, ৯০ জনেরও বেশি আহত এবং একটি আস্ত গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, হরমোজগান প্রদেশের প্রধান বন্দর শহর বন্দর আব্বাসের পশ্চিমে ৬.০ রিখটার স্কেল মাত্রার দু’টি সহ মোট ৩ টি ভূমিকম্প ঘটে।
প্রথমটি ঘটে রাত্রি ২ টোয়, দেজগান শহরের উত্তরে একটি এলাকা কেঁপে ওঠে। এর দুই ঘণ্টা পরে ৫.৭ মাত্রার ভূকম্পন এবং তারপর দ্রুত দ্বিতীয়টি ঘটে যার মাত্রা ৬.০, USGS জানিয়েছে। হরমোজগানের রাজ্যপাল মেহেদি দৌস্তি, সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা সায়েহ খোশ গ্রামটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
জাতীয় জরুরি পরিষেবার মুখপাত্র মোজতবা খালেদি বলেন, “৯৩ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে মাত্র সাতজনই এখনও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রয়েছেন।” স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গিয়েছে সায়েহ খোশ অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়েই জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে কোনও কোনও পরিবারকে। অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য যানবাহনগুলি ধ্বংসস্তূপে ঢাকা রাস্তায় উদ্ধারে নেমেছে।
প্রাদেশিক রাজধানী বন্দর আব্বাসের জনসংখ্যা ৫,০০,০০০-এরও বেশি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রের প্রায় ১০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই বন্দর আব্বাসের গ্যাস স্টেশনগুলিতে সারি দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি হরমোজগান প্রদেশ পরিদর্শন করে জানিয়েছেন জল ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা সরকারের এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এদিন সকালেই জানিয়েছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান প্রায় শেষ। প্রাদেশিক হেরিটেজ কর্মকর্তা IRNA কে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে উপকূলের ঠিক কাছে অবস্থিত কেশম দ্বীপের ৫০ টি ঐতিহাসিক বায়ুকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের অবস্থান বেশ কয়েকটি বড় টেকটনিক পাতের সীমান্তে এবং একারণেই ঘন ঘন ভূকম্পন অনুভূত হয় এখানে। সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পটি ঘটেছিল ১৯৯০ সালে, ৭.৪-মাত্রার কম্পনে ৪০,০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ২০০৩ সালে, দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে ৬.৬-মাত্রার ভূমিকম্পে ৩১,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশে একটি ৭.৩-মাত্রার ভূমিকম্পে ৬২০ জন নিহত হন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে দু’টি ভূমিকম্প হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পশ্চিম ইরানে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। গত বছরের নভেম্বরে এই হরমোজগান প্রদেশেই ৬.৪ এবং ৬.৩ মাত্রার দু’টি ভূমিকম্পে একজন নিহত হন।