পায়ের তলায় সর্ষে! মুদি দোকানের রোজগারেই দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান কেরলের মলি!

পায়ের তলায় সর্ষে! মুদি দোকানের রোজগারেই দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান কেরলের মলি!

#নয়াদিল্লি: বদ্ধ ঘরে থাকার অভ্যেস তাঁর দীর্ঘদিনের। সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি ছোট বেলায় কখনও স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গেও কোথাও বেড়াতে যায়নি। বিয়ের পরও ঘর সংসার করে আর মুদির দোকান চালিয়েই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। হঠাৎই ভ্রমণের নেশা চেপে বসে তাঁর মাথায়। ২০১২ থেকে ২০২২—দশ বছরে ১১টি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন তিনি। প্রথম বার বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে যখন তিনি চেপে বসলেন আন্তর্জাতিক বিমানে তখন তাঁর বয়স ৫১ বছর। আর এ সবই হয় তাঁর মুদি দোকানের আয় থেকে।

কেরলের এর্নাকুলাম জেলার ইরুমপানামের চিত্রপুঝার বাসিন্দা মলি জয়ের জন্ম তিরুভানকুলমে, আয়ের একটা বড় অংশ যিনি ব্যয় করে ফেলেছেন বিদেশ ভ্রমণে। মলি বলেন, ‘ছোটবেলায় কখনও বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষামূলক ভ্রমণেও যেতে পারিনি। আমার বাবা-মায়ের অত টাকা ছিল না। এখনও যে আমার অঢেল টাকা রয়েছে তা নয়। তবে আমার ইচ্ছের কাছে অভাব হার মেনেছে।’

সংসারের সব দায়িত্ব শেষ করে মলি প্রথমবার ঘুরতে যান তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে। প্রাথমিক ভাবে তিনি ঘুরেছিলেন রাজ্যের আশে-পাশেই- পালানি, মাদুরাই, উটি, কোডাইকানাল, মাইসুরু এবং কোভালামের মতো জায়গায়। কিন্তু নেশাটা চেপে বসে। তাই ২০১০ সালেই আবেদন করে দেন পাসপোর্ট ভিসার। ২০১২ সালে প্রথম উড়ান।

মলির স্বামী জয় মারা গিয়েছেন ১৮ বছর আগে। প্রায় ২৬ বছর আগে মুদি দোকানটি খুলেছিলেন তিনিই। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন বলে বেশির ভাগ সময়ই সংসার সামলে দোকান দেখাশোনা করতে হত মলিকে। তাঁদের ছেলে-মেয়ে যখন ২০ ও ১৮ বছরের তখনই মারা যান জয়। সব দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে মলির। তবে বেশি দিন নয়। ভাল চাকরি পেয়ে বিদেশে চলে যান মলির ছেলে। বিয়ে হয়ে যায় মেয়েরও। এ দিকে মলির দোকান হয়ে ওঠে পাড়ার ছোট খাট ‘সব পেয়েছি’র আখড়া। একার সংসারে সঞ্চয় বাড়তে থাকে। তখনই প্রথমবার প্রতিবেশীদের হাত ধরে ভ্রমণে বেরোন মলি। আর তার পর প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মেরির ডাকে তৈরি করে ফেলেন পাসপোর্ট।

প্রথম ইউরোপ সফর

মারির ডাকেই বিদেশ সফরে রাজি হয়ে যান মলি। ১০ দিনের ইউরোপ সফরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল শুধুই বিস্ময়। একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে এই সফর দারুন উপভোগ করেছেন তিনি, জানিয়েছেন নিজেই। মলি বলেন, ‘সেই প্রথম আমার চোখ খুলে গেল। কল্পনাই করিনি ও সব দেশ, ওই সব জায়গা কখনও চোখে দেখতে পাব। পৃথিবীটা কত বড় সে দিন উপলব্ধি করলাম।’

মলির ছেলে মেয়েরা তাঁর এই ভ্রমণের নেশাকে সমর্থন করেন। কিন্তু মলি বলেন, তাঁর ভ্রমণ পরিকল্পনা সবটাই তাঁর নিজস্ব। ছেলেমেয়ের পরামর্শ তিনি নেন না।

ইউরোপ সফরের পর একই ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ-সহ উত্তর ভারত ভ্রমণ করেন। তারপর মলি ১৫ দিনের সফরে ঘুরে এসেছেন যুক্তরাজ্য। নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডাম থেকে ইতালির রোম পর্যন্ত ক্রুজ লাইনারের অভিজ্ঞতা স্মৃতির মণিকোঠায় তুলে রেখেছেন তিনি।

গত নভেম্বরে ফের সেরেছেন ১৫ দিনের একটি সফর। এ বার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ফিলাডেলফিয়া, নিউ জার্সি ঘুরে এসেছেন হারিকেন ট্যুরে। বিস্ময়কর নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখেছেন ৬১ বছরের মধ্যবিত্ত ভারতীয় মলি জয়।

উৎসাহ আসে কোথা থেকে?

মলি জানিয়েছেন, তিনি মাত্র দশম শ্রেণী অবধি পড়াশোনা করতে পেরেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে নিজের অধ্যবসায়ে শিখে নিয়েছেন ইংরিজি বলা। কারণ, এক এবং একমাত্র ভ্রমণ। বিদেশ সফরে যাতে অসুবিধা না হয়।
মলি জানান, তাঁর দোকানে পাওয়া যেতে নানা ধরনের ম্যাগাজিন। বিক্রি হত কিছু। আর তিনি সেই বিক্রিবাটার মাঝে বসেই পড়তে ওই সব পত্রিকার ভ্রমণ বৃত্তান্ত। মনে মনে পুষে রাখতেন বাসনা। পত্রিকার পাতাতেই তাঁর চোখে পড়ে চা বিক্রেতা দম্পতি বিজয়ন ও মোহনার বিশ্ব ভ্রমণের ছবি। মনের ইচ্ছে আরও জোরাল হয়ে ওঠে।

পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি বলে এতটুকু হতাশ নন মলি। বরং তিনি বলেন, ‘চাকরি করলে হয়তো এ ভাবে ঘুরে বেড়াতে পারতাম না। আমার স্বাধীন ব্যবসা। নিজের মতো চালাই। ঘুরে বেড়াই।’

মলি তাঁর ভ্রমণের জন্য ঋণ করেন না। সঞ্চিত অর্থেই ভ্রমণ সারেন। কখনও হয়তো গয়না বন্ধক দিতে হয়, স্বীকার করেছেন মলি। তবে শুধু ভ্রমণই তাঁর নেশা। বিদেশে গিয়ে কেনাকাটা করেন না। তবে হ্যাঁ, পরিচিত শিশুদের জন্য চকোলেট আনতে ভোলেন না।

গত কয়েক বছরের ভ্রমণে মলি খরচ করে ফেলেছেন ১০ লক্ষ টাকা। তাই আপাতত স্থগিত রয়েছে তাঁর বিদেশ ভ্রমণ। মলি অবশ্য আশাবাদী। তিনি স্পনসরদের কথা শুনেছেন বলেও জানিয়েছেন। তবে আপাতত তিনি যেতে চান কেরলের নানা অদেখা জায়গায়। আলাপুঝার শান্ত ব্যাকওয়াটারে নৌকা সফর বা কোল্লাম ও ওয়ানাডে যেতে চান মলি। তিনি জানান, কেরল যেমন সুন্দর তেমন সস্তা। তাই ঘরের কাছেই আপাতত শান্তি খোঁজের তিনি।

Published by:Teesta Barman

(Source: news18.com)