জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষে, বুধবার মণিপাল হাসপাতাল কলকাতায় আয়োজন করেছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠানের, যেখানে ধূমপান ত্যাগ ক্লিনিক এবং পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন ও ভ্যাকসিনেশন ক্লিনিকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ও দীর্ঘমেয়াদি যত্নকে আরও শক্তিশালী করতে এই নতুন পরিষেবাগুলি যুক্ত হওয়ায় হাসপাতালের সামগ্রিক পালমোনারি কেয়ার আরও উন্নত হল।

শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতায় ভরপুর এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ, ফুটবল কিংবদন্তি গৌতম সরকার, সাংসদ সায়নী ঘোষ, বিধায়ক সুজিত বসু সহ বহু আইএএস, আইপিএস কর্মকর্তা এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের উপস্থিতি দিনটিকে আরও অর্থবহ করে তোলে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মণিপাল হাসপাতালে পালমোনোলজি বিশেষজ্ঞরা সিওপিডির কারণ, লক্ষণ, ভুল ধারণা এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। ধূমপান ত্যাগ ও ভ্যাকসিনেশনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিকিৎসকরা জানান, বেশিরভাগ মানুষই ফুসফুসের সমস্যা বুঝতে দেরি করেন, আর সেই কারণেই প্রাথমিক সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। উপস্থিতদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ডাক্তারদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রোগীদের প্রতি তাঁদের আন্তরিকতা পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে।

নতুন ধূমপান ত্যাগ ক্লিনিকে কাউন্সেলিং, আচরণগত সহায়তা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও নিয়মিত ফলো-আপের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়তে আগ্রহীদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে। চিকিৎসকদের মতে, সঠিক দিশা ও মানসিক সমর্থন পেলে ধূমপান ছাড়ার সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে নতুন রিহ্যাবিলিটেশন ও ভ্যাকসিনেশন ক্লিনিকে রোগীর শারীরিক অবস্থানুযায়ী তৈরি পুনর্বাসন পরিকল্পনা, শ্বাস–প্রশ্বাসের থেরাপি এবং বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারিত ভ্যাকসিন সিডিউল রোগীদের দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

প্যানেল আলোচনায় ডা. দেবরাজ জাশ জানান, ‘ভারতে বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর প্রায় ১২% বাস করেন এবং প্রতিবছর ধূমপান-জনিত কারণে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।’ তাঁর মতে, সুপরিকল্পিত কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা সহায়তা পেলে ধূমপান ত্যাগ করা অনেক সহজ হয় এবং সিওপিডির ঝুঁকি কমে যায়।
ডা. অর্ণব বেড়া বলেন, ফুসফুসের সমস্যা অনেক সময় এতটাই নিঃশব্দে বাড়ে যে রোগীরা বুঝতেই পারেন না। তাই সঠিক বয়সে ভ্যাকসিন নেওয়া এবং প্রতিরোধমূলক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মণিপাল হাসপাতাল পূর্বাঞ্চলের রিজিওনাল সিওও ডা. অয়নাভ দেবগুপ্ত জানান, আইসিএমআর তথ্য অনুযায়ী ভারতে মোট মৃত্যুর প্রায় ১০%-এর জন্য সিওপিডি দায়ী। তাই প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ও দ্রুত সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই নতুন ক্লিনিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাঁর কথায়, মানুষ যাতে এক জায়গায় পূর্ণাঙ্গ শ্বাসযন্ত্র-পরিচর্যা পান, সেটাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
দিনের শেষে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ধূমপান ত্যাগ, রিহ্যাবিলিটেশন এবং ভ্যাকসিনেশন-এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা একসঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রোগীরা এখন আরও মানবিক, বৈজ্ঞানিক এবং দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস-যত্নের সুযোগ পাবেন। মণিপাল হাসপাতালের এই পদক্ষেপ শুধু চিকিৎসা পরিষেবা নয়, বরং এক স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।
(Feed Source: zeenews.com)
