
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: তিনি-ই লালকেল্লা, আগরা ফোর্ট ও কুতুব মিনারের মালিক! তাই অবিলম্বে খালি করে দিতে হবে লালকেল্লা, আগরা ফোর্ট ও কুতুব মিনার! মালিকানা দাবি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এমন চিঠি জমা পড়তেই নড়েচড়ে বসে আলিগড় জেলা পুলিস। শুরু হয় তদন্ত।
তদন্তে উঠে এসেছে, উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের বান্নাদেবী এলাকার বাসিন্দা আকবর নামে এক ব্যক্তি ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২৪ নভেম্বর দুটি চিঠি জমা দেন। একটি চিঠিতে তিনি দাবি করেন যে লাল কেল্লা, আগরা ফোর্ট এবং কুতুব মিনার তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং এগুলো অবিলম্বে খালি করে দিতে হবে। তিনি আরও লেখেন, যদি তা না করা হয় তবে তাঁর দাবি করা যে কোনও পরিমাণ অর্থ তাঁকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতেরও আবেদন জানিয়েছেন।
খুনের পরিকল্পনা
আর দ্বিতীয় চিঠিতে আকবর অভিযোগ করেছেন যে বিরোধী দলের নেতারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। এমনকি তাঁর এও দাবি যে, তাঁকে খুন করতে ১ কোটি টাকা সুপারি দেওয়া হয়েছে। তিনি এপ্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি ও আলিগড়ের ১০ জন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার নামও উল্লেখ করেন। যাঁরা তাঁকে খুনের চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেছেন আকবর।
পুলিসি তদন্ত
অভিযোগ পেয়েই হাঁ হয়ে যায় আলিগড় পুলিস। পৌঁছয় গিয়ে তাঁর বাড়িতে। জেলা পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পর, প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস মনে করছে যে, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী পুলিস তার নিজস্ব তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পুলিস জানিয়েছে, তদন্তের পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগরা ফোর্ট
উত্তর প্রদেশের আগরায় অবস্থিত আগরা ফোর্ট মুঘল স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসের এক অসাধারণ নিদর্শন। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত আগরা ফোর্ট একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। আগরা ফোর্ট শুধুমাত্র একটি দুর্গ নয়, এটি হল মুঘলদের ক্ষমতা, সমৃদ্ধি এবং স্থাপত্যকলার এক জীবন্ত দলিল।
অবস্থান: ভারতের উত্তর প্রদেশের আগরা শহরে যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত আগরা ফোর্ট।
নির্মাণ: মূলত মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৬৫ সালে আগরা ফোর্টের নির্মাণ শুরু করেন।
স্থাপত্য শৈলী: লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেলের ব্যবহারে এটি ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যের এক দারুণ নিদর্শন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: আগরা ফোর্ট মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে কাজ করেছিল। সম্রাট শাহজাহান তাঁর জীবনের শেষ আট বছর এই আগরা ফোর্টেই বন্দি ছিলেন। এই আগরা ফোর্ট থেকেই তিনি তাজমহলের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।
আগরা ফোর্টের প্রধান আকর্ষণসমূহ
দিওয়ান-ই-আম (Diwan-i-Am): জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত দরবার কক্ষ। যেখানে সম্রাট বসে সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতেন।
দিওয়ান-ই-খাস (Diwan-i-Khas): ব্যক্তিগত দরবার কক্ষ। যেখানে সম্রাট বসে মন্ত্রী ও বিদেশি দূতদের সঙ্গে বৈঠক করতেন ।
মতি মসজিদ (Moti Masjid): সম্রাট শাহজাহানের তৈরি এই মসজিদটি সম্পূর্ণ সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি। “মুক্তো মসজিদ” নামেও পরিচিত।
খাস মহল (Khas Mahal): মার্বেল পাথরে তৈরি সম্রাটের ব্যক্তিগত প্রাসাদ।
মুসাম্মান বুর্জ (Musamman Burj): অষ্টভুজাকার মিনার। যেখান থেকে বন্দি সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তমা বেগম মমতাজ মহলের সমাধি তাজমহলকে দেখতেন।
জাহাঙ্গীর মহল (Jahangir Mahal): সম্রাট আকবর তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীরের জন্য এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন।
প্রবেশ মূল্য: ভারতীয় এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিন্ন।
কুতুব মিনার
কুতুব মিনার হল দিল্লিতে অবস্থিত বিশ্ব বিখ্যাত একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত একটি দর্শনীয় স্থান। ভারতের ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের এক অন্যতম সেরা নিদর্শন কুতুব মিনার।
অবস্থান: ভারতের নয়াদিল্লির মেহরৌলিতে অবস্থিত।
উচ্চতা: ৭২.৫ মিটার (প্রায় ২৩৮ ফুট) উঁচু, যা ইটের তৈরি বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার।
নির্মাণ: দিল্লি ‘সালতানাতে’র প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবক ১১৯২ সালে কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তাঁর উত্তরসূরি এবং জামাতা ইলতুৎমিস ১২২০ সালে এর নির্মাণ সম্পন্ন করেন।
স্থাপত্য শৈলী: আফগান ও স্থানীয় ভারতীয় শৈলীর মিশ্রণে তৈরি। লাল বেলেপাথর এবং মার্বেল দিয়ে তৈরি কুতুব মিনার।
কুতুব মিনারের কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য
কুতুব মিনার পাঁচটি তলা বা ধাপ বিশিষ্ট। প্রত্যেকটি তলার আলাদা বারান্দা রয়েছে। প্রতি দুটি তলার মাঝে আলংকারিক ব্যান্ডও রয়েছে।
প্রথম তিনটি তলা: প্রথম তিনটি তলা সম্পূর্ণ লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরি।
চতুর্থ ও পঞ্চম তলা: এগুলি মূলত মার্বেল এবং বেলেপাথর দিয়ে তৈরি।
মিনারের গায়ে লিপি: মিনারের গায়ে আরবি লিপিতে কোরানের আয়াত এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক শিলালিপি খোদাই করা আছে।
মিনারে সিঁড়ি: মিনারের ভিতরে ৩৯৭টি সিঁড়ি রয়েছে, যা চূড়ায় ওঠার জন্য ব্যবহৃত হত। তবে নিরাপত্তার কারণে বর্তমানে পর্যটকদের ভিতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
কুতুব মিনার চত্বরে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপত্যও রয়েছে। যেমন কুওয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ। এটি ভারতের প্রথম নির্মিত মসজিদগুলির মধ্যে অন্যতম। এটাও তৈরি করেছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক। মিনারের পাশেই এর ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি আলাই দরওয়াজা মসজিদের প্রবেশ তোরণ। এটি আলাউদ্দিন খিলজির তৈরি। আর আছে লৌহ স্তম্ভ (Iron Pillar)। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে তৈরি এই লৌহ স্তম্ভ এক আশ্চর্যজনক নিদর্শন । প্রায় ১,৬০০ বছর পুরনো হওয়া সত্ত্বেও এতে আজও মরিচা ধরেনি। এই লৌহ স্তম্ভটি প্রাচীন ভারতীয় ধাতুবিদ্যার এক অসাধারণ প্রমাণ।
লালকেল্লা
সতেরোশো শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহান লালকেল্লা নির্মাণ করেছিলেন। এই বিশাল দুর্গটি ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অন্যতম ধারক। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত লালকেল্লা আজও ভারতের স্বাধীনতা ও গৌরবের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
অবস্থান: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পুরনো দিল্লিতে যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত।
নির্মাণ: মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৩৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৬৪৮ সালে সম্পন্ন হয়।
স্থপতি: তাজমহলের স্থপতি ওস্তাদ আহমদ লাহোরি লালকেল্লার নকশা করেন বলে মনে করা হয়।
স্থাপত্যশৈলী: মুঘল, পারস্য এবং ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব মিশ্রণে তৈরি লালকেল্লা।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: প্রায় ২০০ বছর ধরে লালকেল্লা মুঘল সম্রাটদের প্রধান বাসস্থান ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার দিনে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই লালকেল্লাতেই ভারতের তেরঙা উত্তোলন করেছিলেন। সেই রীতি-ঐতিহ্য মেনে আজও প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই দুর্গের লাহোরি গেটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
লালকেল্লা প্রধান আকর্ষণসমূহ
লাহোরি গেট ও দিল্লি গেট: দুর্গের দুটি প্রধান প্রবেশদ্বার। লাহোরি গেট-ই প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দিওয়ান-ই-আম (Diwan-i-Am): জনসাধারণের জন্য দরবার কক্ষ। যেখানে সম্রাট সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতেন। তাঁদের অভিযোগ শুনতেন। রাজকাজ পরিচালনা করতেন।
দিওয়ান-ই-খাস (Diwan-i-Khas): ব্যক্তিগত সভা বা দরবার কক্ষ, যেখানে সম্রাট তাঁর মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের সঙ্গে বা বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতেন।
খাস মহল (Khas Mahal): সম্রাটের ব্যক্তিগত থাকার জায়গা।
রং মহল (Rang Mahal): রাজপরিবারের মহিলাদের থাকার জায়গা। অন্দরমহলের সজ্জা অত্যন্ত রঙিন ও জমকালো।
মতি মসজিদ (Moti Masjid): সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ব্যক্তিগত প্রার্থনার জন্য তৈরি মসজিদ।
নহর-ই-বেহিশত (Nahr-i-Behisht): “স্বর্গের স্রোত” নামে পরিচিত একটি জলধারা। যা দুর্গের বিভিন্ন প্রাসাদের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে।
লালকেল্লা ভ্রমণ
লালকেল্লা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে সন্ধ্যায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-এর মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের সব দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত লালকেল্লা খোলা।
প্রবেশ মূল্য: ভারতীয় পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য তুলনামূলক কম, তবে বিদেশিদের জন্য প্রবেশ মূল্য ভিন্ন।
(Feed Source: zeenews.com)
