উনকোটিঃ পাহাড়িয়া ভাস্কর্য

জায়গাটার নাম উনকোটি। উনকোটি মানে এক কোটি থেকে এক কম। এখানে পাহাড় কেটে কেটে অনেকগুলি মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল আনুমানিক অষ্টম-নবম শতাব্দীর মধ্যে। কেউ কেউ আবার বলেন এগুলি দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি। এখানে তৈরি করা মূর্তিগুলির জন্য এটা একটা শৈবিক পীঠস্থান বলে চিহ্নিত। বৌদ্ধ ধর্ম পরবর্তী যুগে সমগ্র ভারতবর্ষেই একসময় শৈবিক ধর্মের প্রভাব দেখা দিয়েছিল। মনে হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও তখন শৈবিক ধর্মের প্রভাবটা ছড়িয়ে পড়েছিল। মণিপুরি অরিবা ভাষার কাহিনিগুলির উল্লেখ করা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আরিবা হচ্ছে বর্তমান মণিপুরের মৈতেই ভাষার পূর্বসূরী। এই আরিবা ভাষায় লেখা অনেক কাহিনিতেও আমরা শৈবিক ধ্যানধারণার প্রভাব দেখি। আসাম-উড়িষ্যা-বঙ্গে তো শৈবিক সম্প্রদায়ও তৈরি হয়েছিল। শৈবিক পীঠস্থান উনকোটি তখনকার সময়েরই ফসল।
উনকোটির অবস্থান আগরতলা থেকে ১৭৮ কিলোমিটার দূরে। কাছের বিমানবন্দর হচ্ছে আগরতলা। কাছের সুবিধাজনক রেলস্টেশান হচ্ছে ধর্মনগর। ধর্মনগর থেকে উনকোটির দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। আবার উনকোটি থেকে কৈলাশহর শহরের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। কৈলাশহরের কাছের রেলস্টেশান কুমারঘাট। কিন্তু কুমারঘাটে সব ট্রেন থামে না।
পাহাড় কেটে কেটে তৈরি এখানের মূর্তিগুলি দেখার মতো। সংরক্ষণের অভাবে উনকোটির মূর্তির অনেকগুলিই ধ্বংসের মুখে। কোন কোন আর্কিওলজিস্ট আবার এ জায়গাটাকে বৌদ্ধধর্মের ধ্যানকেন্দ্র ছিল বলে উল্লেখ করেছেন, যেটাকে পরে শৈবিক পীঠস্থানে পরিণত করা হয়েছিল। এটা বাস্তব যে উনকোটি নিয়ে প্রকৃত গবেষণা এখনও ঠিক হয়ে উঠেনি।
উনকোটি নিয়ে শিবের একটা মিথ এখানে চালু আছে। শিব সহ এক কোটি দেব-দেবী নিয়ে শিব বারাণসী যাবার সময় এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। রাত্রে শোবার সময় সবাইকে বলে দিয়েছিলেন খুব ভোরে ওঠার জন্যে। কিন্তু পরদিন শিব দেখলেন সবাই নিদ্রায় মগ্ন। শিবের রোষে উনকোটি দেব-দেবী পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।
তবে স্থানীয় আদিবাসীদের বিশ্বাস যে কাল্লু কুমোর নামক এক ব্যক্তি, যিনি মনেপ্রাণে ছিলেন পার্বতী দেবীর উপাসক, একদিন স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পাহাড় কেটে এই মুর্তিগুলির তৈরি শুরু করেছিলেন।
প্রতি বছর এপ্রিল মাসে আশোকাষ্টমীতে এখানে উৎসব পালিত হয়। এছাড়াও জানুয়ারী মাসে এখানে একটা মেলা হয়।
বর্তমানে আর্কিওলজিকাল সারভে অব ইন্ডিয়া উনকোটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন। ভারত সরকার ইউনেসকো-র কাছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য আবেদন করেছেন।