আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মারবার্গ , সামান্য ছোঁয়াতেই সংক্রমণ, মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মারবার্গ , সামান্য ছোঁয়াতেই সংক্রমণ, মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি

নয়াদিল্লি :  মারবার্গ , নতুন আতঙ্ক।  পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায়  অফিসিয়ালি জানানো হল মারবার্গ ভাইরাসের (Marburg virus ) অস্তিত্ব।   ঘানার স্বাস্থ্য দফতর (Ghana Health Service ) থেকে ১৮ জুলাই এই কথা ঘোষণা করা হয়েছে।  মারবার্গ ভাইরাসটি ইবোলার মতোই  অত্যন্ত সংক্রামক ।

জুলাইয়ের শুরুতে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হন দুজন। তাঁদের পরবর্তীতে মৃত্যু হয়।  এটি ঘানার মারবার্গ ভাইরাস রোগের প্রথম প্রাদুর্ভাব।

10 জুলাই  দুই ব্যক্তর শরীরে  মারবার্গ ভাইরাস ধরা পড়ে।  তবে, ঘানার করা এই রিপোর্ট সঠিক কিনা তা যাচাই করতে  বিশ্ব স্বাস্থ্যের সংস্থা (WHO) পশ্চিম আফ্রিকার আরেকটি দেশ সেনেগালের (Senegal)  বিশেষ পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে।

দুই রোগীর প্রত্যেকের নমুনা ডাকার ইনস্টিটিউট পাস্তুরে ( Institute Pasteur in Dakar ) পাঠানো হয়েছিল। সম্পর্কহীন দুই রোগীর মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর, বমি বমি ভাব সহ নানা উপসর্গ দেখা গেছে।

World Health Organization -র মতে, সেনেগালের পরীক্ষাগার নোগুচি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চও জানায় , ফলাফল ঠিকই । দুই রোগীই মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত।

রোগীদের মধ্যে একজন ছিলেন ২৬ বছর বয়সী । তাঁর ২৬ জুন করোনা ধরা পড়ে এবং ২৭ জুন তিনি মারা যান। অন্য ব্যক্তি ৫১ বছর বয়সী । তিনিও একই দিনে মারা যান .।

মারবার্গ ভাইরাস রোগটি কী?

মারবার্গ ভাইরাস ডিজিজ (MVD),  পূর্বে মারবার্গ হেমোরেজিক ফিভার ( Marburg haemorrhagic fever) নামে পরিচিত ছিল।  মারবার্গ  গুরুতর অসুস্থতা ডেকে আনে। 88 শতাংশ  মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।  তবে ঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে রোগী সুস্থও হয়ে উঠতে পারেন।  মৃত্যুর হার নির্ভর করে ভাইরাসের স্ট্রেন এবং চিকিৎসার উপর।

মারবার্গ ভাইরাস রোগ প্রথম ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে (Marburg and Frankfurt) ছড়িয়ে ছিল। তারপর তা ছড়ায় সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। মারবার্গ এবং ইবোলা ভাইরাস উভয়ই Filoviridae family (filovirus) র। উভয় রোগই বিরল এবং মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। সে-সময় কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর দেওয়া  তথ্য অনুসারে,  তখন ৩১ জনের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষাগারের কর্মীরা অসুস্থ হয়ে ছিলেন। এর পরে, তাদের যত্ন নেওয়ার সময় সংস্পর্শে এসে আরও কয়েকজন চিকিত্সা কর্মী এবং পরিবারের সদস্যরাও অসুস্থ হন। এর থেকে সাতজনের মৃত্যুও হয় বলে জানা যায়।

এছাড়াও অ্যাঙ্গোলা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উগান্ডায় এই রোগ ছড়ায়।

কাভাবে  এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়? ( How Is The Marburg Virus Transmitted )

African fruit bat ,  Rousettus aegyptiacus থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ডব্লিউএইচওর মতে, মারবার্গ ভাইরাসটি ফলের বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। তারপর একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই ভাইরাস কীভাবে প্রথম  বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়,  তা জানা যায়নি। ২০০৮ সালে, উগান্ডা সফরকারী দুই পর্যটক মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। সংক্রামিত বাদুড়ের মলের ছোঁয়া থেকেই আক্রান্ত হন তাঁরা। যিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত , তাঁর শরীরের তরল বা রক্ত বা রক্তমাখা জিনিসের সংযোগ থেকেই এই রোগ ছড়ায়। রক্ত বা শরীরের তরল যেমন প্রস্রাব, লালা, ঘাম, মল, বমি, বুকের দুধ, অ্যামনিওটিক তরল এবং মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত বা মারা যাওয়া ব্যক্তির বীর্যের মাধ্যমে ভাইরাসের সরাসরি সংক্রমণ ঘটতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষত থেকে সংক্রমণ হতে পারে।

মারবার্গ ভাইরাস রোগে অসুস্থ বা মারা গেছেন এমন ব্যক্তির শরীরের তরল দ্বারা দূষিত বস্তুর মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটতে পারে, যেমন কাপড়, বিছানা, সূঁচ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য আক্রান্ত হতে পারে । তাই দূরত্ববিধি কঠোর ভাবে মানতে হবে। সেই সঙ্গে কঠোর সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে।

(Source: abplive.com