চাঁদের বালি দিয়েই ইট তৈরি হবে? চলছে গবেষণা, সেটা দিয়ে উপগ্রহে হবে রাস্তা!

চাঁদের বালি দিয়েই ইট তৈরি হবে? চলছে গবেষণা, সেটা দিয়ে উপগ্রহে হবে রাস্তা!

চাঁদের ধুলো দিয়ে তৈরি ইট- কোলন শহরে এয়ারোস্পেস সেন্টারে চলছে এ নিয়ে গবেষণা৷ ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে দালান, রাস্তা ও যন্ত্রপাতি বসানোর ভিত তৈরির কাজে লাগবে এই ইট৷

জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের মাটিয়াস স্পার্ল ঠিক এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন৷ এসব ইট একদিন চাঁদের বুকে দালান তৈরি করবেন৷ এসব অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে- আবাসিক ভবন, গ্রিনহাউস, গুদাম, কিংবা পাকা পথ৷ এগুলো দিয়ে বানানো হবে সুরক্ষা দেওয়াল, রেডিয়ো টেলিস্কোপ বা আরও বড় আকারের যন্ত্রের ভিত্তি৷

মহাজাগতিক বিকিরণ ও তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য, যেমন প্লাস ১০০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ১০০ ডিগ্রি, এমন চরম পরিবেশে অবকাঠামো বানাতে হবে৷ চাঁদে অবকাঠামো উপাদান পরিবহণ একটা বিরাট খরচের ব্যাপারও৷ তাই সেখানে পাওয়া যায় এমন উপাদান দিয়ে কাজ করা যুক্তিযুক্ত হবে, যেমন চাঁদের বালি৷

গবেষকরা এখানে আগ্নেয় ছাই ব্যবহার করছেন৷ এগুলোর শারীরিক ও রাসায়নিক গঠন চাঁদের বালির মতোই৷

গবেষক মাথিয়াস স্পার্ল বলেন, ‘পাথরগুলো দেখতে এখনও নিখুঁত হয়নি৷ শেষপর্যন্ত একেবারে নিখুঁত হবেও না৷ কিন্তু বড় ব্যাপার হল যে পদ্ধতি আমরা ব্যবহার করছি তা সহজ, সুলভ ও টেকসই৷ অল্প উদ্যোগে দ্রুত সময়ে বিদ্যুতের সরবরাহ নেই এমন পরিবেশে করা যায়৷’

কারণ, সূর্যের আলো ইট পোড়ানোর মতো যথেষ্ট তাপ উৎপাদন করে৷ চাঁদে যেমন করে, তেমনই জার্মান এয়ারোপস্পেস সেন্টারের এই সোলার ফার্নেসেও৷এই হেলিওস্ট্যাট বা বিরাট আয়নাটি সূর্যরশ্মির প্রতিফলন ঘটায় এবং একীভূত করে৷ সেই আলো গিয়ে পড়ে ১৫৯টি আয়নার এই মৌচাকের মতো কনসেন্ট্রেটরে৷ সেখানে এটি পাঁচ হাজার গুণ ঘনীভূত হয়ে সোলার ফারনেসের ভেতরে গিয়ে পড়ে৷

এক একটি ঘনীভূত রশ্মি থেকে আড়াই হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ উৎপন্ন হয়৷ স্তরে স্তরে চাঁদের বালিকে সেঁকা হয় এই তাপ দিয়ে৷ অনেকটা থ্রিডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়ার মতো ইটটি একটি বিশেষ টেবিলের ওপর তৈরি করা হয়৷ ঘনীভূত আলো সেখানে প্রিন্ট হেডের কাজ করে৷

মাথিয়াস স্পার্ল বলেন, ‘এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আমি এটি থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মতো স্তরে স্তরে তৈরি করি৷ আমার হাতে অনেক নিয়ন্ত্রণ থাকে৷ ঘটনাস্থলে ঠিক যেমনটি চাই, তেমনটি তৈরি করতে পারি অল্প উপাদান ব্যবহার করে৷’

চাঁদে সহজে দালান তৈরির জন্য গবেষকরা একে অপরকে সাহায্য করে এমন জ্যামিতিক আকারগুলো ব্যবহার করছেন৷ তবে সব উপাদানকে চাঁদে নিয়ে যেতে হবে৷

তবে পৃথিবীর পরিবেশে যেভাবে কাজ হয়, চাঁদেও কি একইভাবে কাজ করা সম্ভব? মাথিয়াস স্পার্লের ভাষায়, ‘চাঁদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এর ভ্যাকুয়াম৷ সে কারণে আমরাও এখানে ভ্যাকুয়াম চেম্বার-সহ সোলার ফার্নেস ব্যবহার করে কিছু পরীক্ষা করি৷ এই ভ্যাকুয়াম চেম্বারগুলো দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বোঝার চেষ্টা করি, অক্সিজেনের উপস্থিতির ওপর চাঁদের বালি সেঁকা কতটা নির্ভরশীল৷’

পরীক্ষার ফলাফল হল, চাঁদের পরিবেশে এই পদ্ধতি কাজ করবে৷ আর চাঁদের বালি ব্যবহার করে প্লাস্টারের মতো শক্ত ইট বা পাথর তৈরি করা সম্ভব৷ এই ইট দিয়ে চাঁদের বুকে এমন দেওয়াল তৈরি করা সম্ভব যাতে মহাকাশচারীরা মহাযাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা পায়৷

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)