#নয়াদিল্লি: হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে দিতে হয় পরিষেবা চার্জবা সার্ভিস চার্জ (Service Charge)। সাধারণত হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ার পর তার বিলে সরাসরি যোগ হয় এই চার্জ। সেই নিয়ে সম্প্রতি এক নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয় যে, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের উপর সরাসরি পরিষেবা চার্জ কাটা যাবে না। এ-বার সেই নির্দেশিকার উপর আগামী ২৫ নভেম্বর অর্থাৎ পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করল দিল্লি হাইকোর্ট।
এই বিষয়ে মামলা দায়ের করেছিল ভারতের জাতীয় রেস্তোরাঁ সংগঠন (National Restaurants Association of India) বা এনআরএআই (NRAI)। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করার পাশাপাশি স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আদালত। সেন্ট্রাল কনজিউমার প্রোটেকশন অথরিটি (Central Consumer Protection Authority) বা সিসিপিএ (CCPA)-এর ৪ জুলাইয়ের নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনপত্র দাখিল করে এনআরএআই (NRAI) এবং ফেডারেশন অফ হোটেলস অ্যান্ড রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া। সেই আবেদন পর্যালোচনা করার সময় বিচারপতি যশোবন্ত ভার্মা জানান যে, এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে সিসিপিএ-কে তার জবাব জানানোর নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি ভার্মা।
পরিষেবা কর: এখনও পর্যন্ত যা যা ঘটেছে
পরিষেবা চার্জে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে সিসিপিএ:
গত ৪ জুলাই সিসিপিএ-র তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয় যে, খাবারের বিলে গতানুগতিক ভাবে অথবা স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিষেবা চার্জ যোগ করতে পারবে না হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলি। শুধু তা-ই নয়, অন্য নামে কিংবা অন্য ভাবেও আদায় করা যাবে না পরিষেবা চার্জ। আর এই বিষয়ে গ্রাহকের উপর জোরও খাটাতে পারবেন না রেস্তোরাঁ কিংবা হোটেল কর্তৃপক্ষ। বরং জানাতে পারেন যে, পরিষেবা চার্জ যদি গ্রাহক দিতে চান, তা-হলে স্বেচ্ছায় তিনি তা দিতে পারেন। অর্থাৎ এটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে গ্রাহকের ইচ্ছের উপর।
ওই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে যে, প্রবেশ অথবা পরিষেবা চার্জ সংগ্রহের ভিত্তিতে পরিষেবাগুলির উপর কোনও বিধিনিষেধ গ্রাহকদের উপর আরোপ করা যাবে না। আর খাবারের বিলের মধ্যে যোগ করে কিংবা বিলের মোট পরিমাণের উপর জিএসটি বসিয়ে গ্রাহকদের থেকে পরিষেবা কর আদায় করা যাবে না।
কী বলেছে দিল্লি হাইকোর্ট?
আদালতের নির্দেশ, এই বিষয়টা বিবেচনা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এর পাশাপাশি ৪ জুলাই ২০২২-এর নির্দেশিকার সাত নম্বর অনুচ্ছেদে যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা তালিকাভুক্ত করার পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হবে। টেক-অ্যাওয়ে আইটেমের উপর যাতে পরিষেবা চার্জ না-কাটা হয়, সেই দায়িত্বও নেওয়া হয়েছে। বিচারপতি ভার্মা বলেন যে, “আপনারা যদি পরিষেবা কর দিতে না-চান, তা-হলে রেস্তোরাঁয় যাবেন না। এটা আসলে নিজের-নিজের পছন্দের প্রশ্ন। আর এই দুই শর্তসাপেক্ষেই আমি নির্দেশিকার ৭ অনুচ্ছেদের উপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছি।”
এনআরএআই জারি করল বিবৃতি:
দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বুধবার এনআরএআই একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে, পরিষেবা চার্জ কাটা বেআইনি নয়, বরং এটা ভীষণই স্বচ্ছ একটা ব্যবস্থা। আর কর্তৃপক্ষ সব সময় নিজেদের এই দাবিতেই অটল রয়েছে। রেস্তোরাঁর এই সংগঠন আরও জানিয়েছে যে, “মাননীয় দিল্লি হাইকোর্ট এই বিষয়টিকে বহাল রেখেছে এবং এই দৃষ্টিভঙ্গিকে নিশ্চিত করেছে, তার জন্য আমরা খুবই আনন্দিত। দায়িত্বশীল রেস্তোরাঁ সংগঠন হিসেবে এনআরএআই আদালতের এই শর্তাবলী সংক্রান্ত পরামর্শ খুব শীঘ্রই তার সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে সদস্যরা যাতে এই শর্ত সামগ্রিক ভাবে মেনে চলে, সেই পরামর্শও দেওয়া হবে তাদের।” ওই সংগঠন আরও জানিয়েছে যে, এই নির্দেশ পাশ হওয়ায় এনআরএআই ভীষণই স্বস্তি পেয়েছে। না-হলে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপর এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ত।
আমাদের কি পরিষেবা চার্জ দিতে হবে?
ডিএসকে লিগ্যাল-এর অংশীদার হরবিন্দর সিং জানিয়েছেন, ৪ জুলাই ২০২২ এর সিসিপিএ নির্দেশিকার ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের উপরেই শুধুমাত্র স্থগিতাদেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ডিপার্টমেন্ট অফ কনজিউমার অ্যাফেয়ারস (Department of Consumer Affairs)-এর তরফে ২০১৭-র ২১ এপ্রিল প্রকাশ করা নির্দেশিকা-সহ পূর্বোক্ত নির্দেশিকা বিবেচনা করে আইনি অবস্থান এখনও একই রয়েছে। আর সেটা হল- গ্রাহকদের পছন্দ এবং তাঁরা এই ধরনের চার্জ দেবেন কি না, সেটা বিবেচনা করার অনুমতি না-দিয়েই বিলে অনিচ্ছাকৃত ভাবে পরিষেবা চার্জ যোগ করা যাবে না।
প্রাইভি লিগ্যাল সার্ভিস এলএলপি-র ম্যানেজিং পার্টনার মোইজ রফিক (Moiz Rafique) বলেছেন যে, স্থগিতাদেশ যেহেতু প্রণয়ন করা হয়েছে, তাই আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত পরিষেবা কর নিতে পারে হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলি। অর্থাৎ তত দিন পর্যন্ত রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং খাবারের দোকানগুলি খাবারের বিলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সার্ভিস চার্জ বসাতে পারবে।
পিএসএল অ্যাডভোকেটস অ্যান্ড সলিসিটরস-এর ম্যানেজিং পার্টনার সমীর জৈন (Sameer Jain)-এর কথায়, আদালতের স্থগিতাদেশের অর্থ হচ্ছে রেস্তোরাঁগুলি এখন বিলের উপর পরিষেবা চার্জ কাটতে পারে। নির্দেশিকার উপর এই স্থগিতাদেশের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ চলাকালীন এর অধীনে অভিযোগের ব্যবস্থাও নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হল।