সিঙ্গাপুরের পর্যটন ব্যবসাকে জোরদার করতে রোড শো কলকাতায়! পর্যটকদের জন্য কী থাকছে

সিঙ্গাপুরের পর্যটন ব্যবসাকে জোরদার করতে রোড শো কলকাতায়! পর্যটকদের জন্য কী থাকছে

কলকাতা: ভ্রমণপ্রেমী হিসেবে এমনিতেই বাঙালিদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আর ভ্রমণপ্রেমী বাঙালিদের শহর কলকাতাতেই নিজেদের দেশের পর্যটন জোরদার করতে একটি রোড শো-এর আয়োজন করল সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড (Singapore Tourism Board) বা এসটিবি (STB)!

করোনা অতিমারীর দাপট কমে যাওয়ার ফলে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধের গেরো। ফলে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবনও। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে বসে হাঁপিয়ে উঠছিল মানুষ। ফলে ভাইরাসের প্রকোপ যখনই কমেছে, তখনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছে তারা। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণের ইচ্ছে থাকলেও বিধিনিষেধের জেরে তা হয়ে ওঠেনি। তবে এখন কোনও কোনও দেশ বিধিনিষেধ শিথিল করেছে, ফলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এখন ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে। আর যে-সব দেশের সীমান্ত পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল সিঙ্গাপুর। আসলে করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ভারতীয় পর্যটকদের বরাবরই পছন্দের ছিল সিঙ্গাপুর। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর আবার সেই জায়গা ফিরে পেতে শুরু করছে সিঙ্গাপুর।

আর ঠিক এই কারণে ভ্রমণপ্রেমী বাঙালিদের প্রধান শহর কলকাতাতেই একটি রোড শো-এর আয়োজন করেছিল এসটিবি (STB)। এই রোড শো-টির নাম ‘ডিপেনিং কানেকশনস, অ্যাচিভিং টুগেদার!’ (Deepening Connections, Achieving Together!)। শুধু কলকাতাতেই নয়, পাঁচটি শহরের রোড শো-এর এই সিরিজে এসটিবি এনেছে ৪৫টি সিঙ্গাপুর পর্যটন স্টেকহোল্ডার। যাতে তারা ভারতের বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে।

পর্যটন ব্যবসা জোরদার করার এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে কলকাতার প্রায় ২০০টি ট্রাভেল এজেন্ট। এই রোড শো-এ সিঙ্গাপুরের সমস্ত আকর্ষণীয় জায়গা, হোটেল, ট্যুর অপারেটর, ক্রুজ লাইনস এবং ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলিকে এক সারিতে দেখা গিয়েছে।

ভ্যাকসিনেটেড ট্রাভেল ফ্রেমওয়ার্ক (Vaccinated Travel Framework) বা ভিটিএফ (VTF)-এর আওতায় সিঙ্গাপুর পুনরায় খুলে গিয়েছে গত ১ এপ্রিল থেকে। তাতে পুরোপুরি ভ্যাকসিন প্রাপ্ত ভ্রমণার্থীরা বেড়াতে যেতে পারবেন সিঙ্গাপুরে। আর সে-ক্ষেত্রে সেই দেশে পৌঁছে ভ্রমণার্থীদের কোনও টেস্ট অথবা কোয়ারান্টিনের মুখে পড়তে হবে না। তার পর থেকে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে প্রায় ১৫ লক্ষ ভ্রমণার্থী সিঙ্গাপুরে ঘুরতে গিয়েছেন। অথচ গত বছর এই সময়কালের মধ্যে যা পর্যটকের ভিড় দেখেছিল সিঙ্গাপুর, তা এই বছর প্রায় ১২ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। সিঙ্গাপুরে (Singapore) পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত (India) এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১৯ হাজারেরও বেশি।

অতিমারীর পর থেকে সিঙ্গাপুর পর্যটন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড এই মাল্টি-সিটি রোড শোয়ের মাধ্যমে পর্যটনের বার্তা ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় চলতি বছরের গোড়ার দিকেই এসএটিটিই ২০২২ (দিল্লি-এনসিআর), ওটিএম (মুম্বই)-এর আয়োজন করা হয়েছিল। এ-ছাড়াও গত এপ্রিলে মাল্টি-সিটি প্রডাক্ট আপডেট সেশনের আয়োজনও করেছিল এসটিবি।

বিগত দু’বছর ধরে অর্থাৎ করোনার কালে সিঙ্গাপুরে নতুন যে-সব আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র খুলে গিয়েছে, সেই সব জায়গাই ওই রোড শো-এ প্রদর্শন করেছে এসটিবি এবং সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি দল। সেই সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুর মধ্যে অন্যতম মিউজিয়াম অফ আইসক্রিম (Museum of Ice Cream), দ্য স্লিংশট (সিঙ্গাপুর নদীর পাশে তৈরি হওয়া নতুন এক থ্রিল রাইড কনসেপ্ট), স্কাইহেলিক্স সেন্টোসা (SkyHelix Sentosa), সাদার্ন ওয়াটারফ্রন্ট প্রভৃতি। শুধু তা-ই নয়, সমুদ্র ভ্রমণের আরও বিকল্প এখন পাবেন পর্যটকরা। সিঙ্গাপুরের আশপাশের শহরগুলিও ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন তাঁরা।

এই রোড শো প্রসঙ্গে এসটিবি-র ভারত, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার রিজিওনাল ডিরেক্টর জিবি শ্রীধর (Mr. GB Srithar) বলেন যে, প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় পরে বহু সংখ্যক ভারতীয় ভ্রমণার্থীদের সিঙ্গাপুরে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এর মধ্যে কলকাতা হল অন্যতম কেন্দ্র। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের ১৪টি শহরের সরাসরি উড়ান যোগাযোগ রয়েছে এবং কলকাতা ওই সব শহরের মধ্যে অন্যতম। আর এই রোড শো-এর মাধ্যমে আমরা পর্যটকদের মধ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই যে, সিঙ্গাপুর খুলে গিয়েছে। আর ছুটির মজা আরও দ্বিগুণ করতে ভ্রমণার্থীদের ফের স্বাগত জানাচ্ছে সিঙ্গাপুর। কলকাতায় আমাদের অংশীদার বন্ধুদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ গড়ে তুলতে পেরেও আমরা আনন্দিত। সেই সঙ্গে তাদের গ্রাহকদেরও আমরা সিঙ্গাপুরে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

এ বার দেখে নেওয়া যাক, আগামী দিনে পর্যটকদের জন্য কী কী অনুষ্ঠান-উৎসব উপহার দেওয়ার জন্য ডালি সাহায্য সিঙ্গাপুর।

সেন্টোসা দ্বীপ (Sentosa Island):

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেন্টোসা সৈকতের প্রাণকেন্দ্রে সেন্ট্রাল বিচ বাজার (Central Beach Bazaar) লঞ্চ করা হচ্ছে। তাতে থাকবে সেন্টোসা মিউজিক্যাল ফাউন্টেন (Sentosa Musical Fountain), সেন্টোসা স্কাইজেট (Sentosa SkyJet), আন্তর্জাতিক ফুড স্ট্রিট (International Food Street)। প্রায় ৮০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় উঠবে সেন্টোসা স্কাইজেট। আর এটাই হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ ঝর্ণা। আবার ইন্টারন্যাশনাল ফুড স্ট্রিটে গোটা বিশ্বের স্ট্রিট ফুডের স্বাদ নিতে পারবেন পর্যটকরা।

সিঙ্গাপুরের প্রথম অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা এআর (AR) পারফিউম বা সুগন্ধী তৈরির অভিজ্ঞতা একেবারে সামনে থেকে পাবেন সেনটোপিয়া (Scentopia)-তে। এটি বর্তমানে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সেন্টোসার সিলোসো বিচ ওয়াক (Siloso Beach Walk)-এ নিজেদের প্রথম রিটেল স্পেস লঞ্চ করেছে সেনটোপিয়া। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী ফুলের থেকে তৈরি সুগন্ধী। এ-ছাড়াও এখানে বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশ নিতে পারবেন পর্যটকেরাও। এখানে প্রায় তিনশোরও বেশি এআর পারফিউমের বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন পর্যটকরা। এর পাশাপাশি, পারফিউম বারে ডিআইওয়াই (DIY) পারফিউম তৈরির সেশনেও যোগ দেওয়ার সুযোগ মিলবে। আর পারফিউম বারে রয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি সুগন্ধী কাঠি। যেখান থেকে বাছাই করে নিয়ে মনের মতো সুগন্ধী বানিয়ে ফেলা যাবে।

আবার যে-সব পর্যটকরা ওয়াটার স্পোর্টস পছন্দ করেন, তাঁদের জন্যও রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ। হাইড্রোড্যাশ (HydroDash)-সহ পালাওয়ান সৈকতে দারুণ আকর্ষণীয় ওয়াটার অ্যাক্টিভিটির সুযোগ আছে। আবার সিঙ্গাপুরের প্রথম ভাসমান অ্যাকোয়া পার্ক হাইপারড্রাইভ (HyperDrive) আগামী বছরে লঞ্চ হওয়ার কথা। আবার পালাওয়ান সৈকতে রয়েছে ফ্যামিলি বিচ ক্লাব। এই ধরনের কেন্দ্র সিঙ্গাপুরের মধ্যে প্রথম। সেখান থেকে নীল সমুদ্র, সৈকত এবং সূর্যাস্তের অসাধারণ মনোরম দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারবেন পর্যটকরা। আল্ট্রাগল্ফ (UltraGolf) নামে একটি মিনি গল্ফ কোর্স থাকছে ওই সৈকতটিতে।

রিসর্টস ওয়ার্ল্ড সেন্টোসা (Resorts World Sentosa):

অতিমারীর জেরে টানা দুই বছর থেমে থাকার পর নিজেদের দশম-তম সংস্করণ নিয়ে আবার ফিরছে ইউনিভার্সাল স্টুডিওস সিঙ্গাপুর (Universal Studios Singapore)-এর হ্যালোউইন হরর নাইটস (Halloween Horror Nights)। যাঁরা রহস্য-রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য একেবারে আদর্শ এটি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাছাই করা কয়েক দিন রাতে চলবে এই হ্যালোউইন হরর নাইটস।

রিসর্টস ওয়ার্ল্ড সেন্টোসা-র ডলফিন দ্বীপেও থাকছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় উপহার। এখানে ডলফিনদের খুব কাছ থেকে দেখার পাশাপাশি আরও নানা সুযোগ থাকতে চলেছে।

গার্ডেনস বাই দ্য বে (Gardens By the Bay)

গোটা অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে এখানকার ফ্লাওয়ার ডোম (Flower Dome)-এ নানা ধরনের ফুলের মেলা দেখার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন ভ্রমণার্থীরা। ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে হাইড্রাঞ্জিয়া হলিডেজ (Hydrangea Holidays)। এই প্রদর্শনীতে থাকছে প্রায় কুড়ি ধরনেরও বেশি হাইড্রাঞ্জিয়া ফুল। প্যাস্টেল শেডের বিভিন্ন রঙের এই ফুল দেখার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা। শুধু তা-ই নয়, সেই সঙ্গে থাকবে নেদারল্যান্ড কান্ট্রিসাইডের সেই মনোরম দৃশ্যও। যেখানে দেখা যাবে উইন্ডমিল, সরু স্বচ্ছ জলের খাল-বিল, ছোট ছোট বাড়ি, লালা-সাদা রঙের লাইটহাউজ প্রভৃতি। এই লাইটহাউজটি বানানো হয়েছে ওয়েস্ট ছাউয়েন লাইটহাউজের আদলে। আর এটিই হল নেদারল্যান্ডসের সর্বোচ্চ এবং বৃহত্তম লাইটহাউজ।

এর পর আগামী ২০ অগাস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে হ্যাঙ্গিং গার্ডেনস (Hanging Gardens)। থিম ভিত্তিক ল্যান্ডস্কেপ দেখার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। মেক্সিকোর প্রাণবন্ত রঙের ছোঁয়ায় সাজানো থাকবে এই প্রদর্শনী। এখানে থাকবে মোরগঝুঁটি এবং গাঁদা ফুলের মেলা।

আর এ-ছাড়া চলতি বছরের পরের দিকে গার্ডেনস বাই দ্য বে-র ক্লাউড ফরেস্ট (Cloud Forest)-এ অ্য়াভাটার অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে পারবেন পর্যটকরা।

মেরিনা বে স্যান্ডস (Marina Bay Sands):

নিজেদের বিদ্যমান সম্পদের উপরেই একটা বড়সড় পুনঃবিনিয়োগের কর্মসূচি নিয়েছে মেরিনা বে স্যান্ডস। এখানে বাড়ানো হচ্ছে হোটেল রুম এবং স্যুইটগুলিকে। এ-ছাড়াও নতুন খাবার এবং পানীয় সংযোজন-সহ আরও অনেক নতুন বিষয় আনা হচ্ছে। পর্যটন ব্যবসাকে আরও জোরদার করতেই এই উদ্যোগ।

Published by:Siddhartha Sarkar

(Source: news18.com)