বাংলাদেশঃ টাঙ্গাইলে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি অযত্নে অবহেলায় বেহাল দশায়

বাংলাদেশঃ টাঙ্গাইলে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি অযত্নে অবহেলায় বেহাল দশায়

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার সিরাজকান্দি (নেংড়া বাজার) এলাকায় যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এই জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু এখন অযত্নে অবহেলায় স্মৃতিস্তম্ভটি বেহাল দশায় পড়ে আছে, কোন সংস্কারে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

কথা হয় মুক্তিযুদ্ধোদের সাথে তারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ এই দুইটি জাহাজে বহন করা অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জ্বালানি ও রসদসহ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধাগণ। প্রায় ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। বীরবিক্রম হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেগুলো উদ্ধার করার পর জাহাজ দুটিকে ধ্বংস করে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। গত ২০১৩ সালে সিরাজকান্দি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য স্থানে (পাঁচ কোটি টাকা) ব্যয়ে এই জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন (ভূঞাপুর-গোপালপুর) এর সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান এমপি। সিরাজকান্দি জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ করে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) উপজেলার সিরাজকান্দি (নেংড়া বাজার) এলাকায় জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের গাছ পালা,আগাছা জন্মে ঢেকে গেছে এই স্তম্ভটি। স্মৃতিস্তম্ভে বাংলাদেশের মানচিত্র নকশা তৈরি করা হয়েছিল সেটিও আগাছায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে রাতে আলো জ্বালানোর জন্য ৬টি ল্যাম্পপোস্ট লাগানো হয়েছিল এর মধ্যে একটি ল্যাম্পপোস্টও নেই। স্মৃতিস্তম্ভের দুইপাশে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, স্মৃতিস্তম্ভের সামনে প্রায়ই মাছ, কাঁচামাল ও অনন্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়।

অনেক সময় বালুবাহী ট্রাক রাখা হয়। বন্যার কারনে স্মৃতিস্তম্ভের গাইডওয়াল পুকুরে ধসে পড়ছে। পুরো স্মৃতিস্তম্ভটির মধ্য লতাপাতা গাছ গাছালি দিয়ে ভরে গেছে। অনেক সময় গরু, ছাগল প্রবেশ করছে ও ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে ও সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা খানায় পরিনত হয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপজেলা এলজিইডি স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকার প্রকল্প নিয়ে সংস্কার কাজ করে। কিন্তু তাতেও টেকসই হয়নি।

১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ এই দুইটি জাহাজে বহন করা অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জ্বালানি ও রসদসহ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধাগণ। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের সাহসিকতার নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” ও “জাহাজমারা হাবিব” উপাধিতে ভূষিত করেন। জাহাজমারা ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে সিরাজকান্দি এলাকায় নির্মাণ করা হয় এই স্মৃতিস্তম্ভটি। এই জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি ইতিহাসের পাতায় চির স্বরনীয় হয়ে থাকবে।

ভূঞাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের সাবেক সম্মানিত সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন কমান্ডার মোঃ আঃ সাত্তার বলেন, এই স্মৃতিস্তম্ভটি অযত্নে অবহেলায় পরে আছে, প্রশাসন এটা সম্পর্কে অবহিত তবুও এর সংস্করনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সান নিউজ/এমআর