মহিলারা শুনছেন? অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেবে এই উপায়গুলো, টাকার অভাব কখনও হবে না!

মহিলারা শুনছেন? অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেবে এই উপায়গুলো, টাকার অভাব কখনও হবে না!

#নয়াদিল্লি: ভারতে নারী স্বাধীনতা বিষয়টি একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এর ইতিহাস বেশ জটিল। এমন একটা সময় ছিল, যখন সমাজে নারীর স্থান বেশ সম্মানজনক ছিল। এমনকী এই সমাজের একটা স্তরে নারী পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্বও পালন করে থাকেন। রোজগার করা তাঁরই কাজ। তবু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না একটি বৃহদাংশের মহিলা।

গত কয়েক দশকে এ দেশে নারী উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকারও বেশ কিছু পরিকল্পনা ও কর্মসূচি চালু করেছে। তবু ভারতীয় মহিলারা এখনও আর্থিক অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই যদিও একমাত্র স্বাধীনতা নয়, তবে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হলে কারও উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের জীবন কাটানো সম্ভব। কাঙ্ক্ষিত জীবন যাপন ও আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকা জরুরি। সে ক্ষেত্রে শুধু নিজের খরচ নিজে বহন করাই একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং বিনিয়োগ, ঋণ, আয়কর ইত্যাদি বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়াও এক ধরনের স্বাধীনতা।

যদিও আর্থিক স্বাধীনতা রাতারাতি অর্জন করা যায় না। এ জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা দরকার। রইল সাতটি টিপস, যা সহজ করতে পারে প্রগতির পথ।

১. নিজস্ব সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট:
ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রাথমিক পদক্ষেপ অবশ্যই একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট (Savings Account)। এ দেশের বেশির ভাগ মহিলার সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যৌথ ভাবে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই অ্যাকাউন্টের কার্য ভার পরিচালনা করার ক্ষমতা ওই মহিলার হাতে থাকে না। একজন উপার্জনকারী মহিলার অবশ্যই একটি নিজস্ব সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা দরকার। নগদ জমা এবং টাকা তোলার পাশাপাশি কী ভাবে আপনার জমার সুদ, গড় মাসিক ব্যালেন্স এবং বিভিন্ন চার্জ গণনা করা হয় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। এই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে একটি লকারটি পাওয়া যেতে পারে। সেখানে নিজের কোনও সম্পত্তি নিরাপদে রাখা যায়। বিনিয়োগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একটি রেকারিং ডিপোজিট বা ফিক্সড ডিপোজিট খোলা যেতে পারে। সেভিংস অ্যাকাউন্ট সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং বিভিন্ন সরকার-সমর্থিত বিনিয়োগ এবং ঋণ প্রকল্পের সুবিধা দিতে সাহায্য করে।

২. তথ্য নিষ্ঠ থাকতে হবে:
নিজের আর্থিক বিষয়গুলির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে রাখতে হবে। আজকাল, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং (Internet Banking) এবং ই-স্টেটমেন্টের (E-statement) সাহায্যে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখে নেওয়া অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। মাসিক ভিত্তিতে সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ই-ওয়ালেট ইত্যাদির পরিস্থিতি একবার দেখে নেওয়া দরকার। এতে কোথায় কত টাকা খরচ হচ্ছে তার একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। যা নিজের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও ভাল ভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। বাজেট এবং খরচের বিষয়টির উপর নজরদারি রাখার জন্য কোনও অ্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. বিনিয়োগের প্রথম পদক্ষেপ:
প্রত্যেক মানুষেরই কিছু আর্থিক লক্ষ্য থাকে। কেউ টাকা জমান বিবাহের জন্য, সন্তানের শিক্ষা, তাঁর বিবাহ, নিজস্ব বাড়ি অথবা গাড়ি কেনার জন্য। সবের জন্য সঞ্চয় প্রয়োজন। সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ সঞ্চয় করা এবং ফিক্সড ডিপোজিট এবং রেকারিং ডিপোজিটের মতো নির্দিষ্ট আয়ের আর্থিক উপকরণগুলিতে বিনিয়োগ করা হল আর্থিক লক্ষ্যগুলির দিকে ছোট পদক্ষেপ।
এর সাহায্যে অর্জিত সুদ যথেষ্ট নয়। একবার বিনিয়োগে মনোনিবেশ করলে, মিউচুয়াল ফান্ড, সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIP), সোনা, সরাসরি ইক্যুইটি, রিয়েল এস্টেট, সরকারি সিকিউরিটিজ ইত্যাদির মতো বিনিয়োগের উপায়গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, এই বিনিয়োগ হতে হবে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য, ঝুঁকি এবং বিনিয়োগের সীমার উপর ভিত্তি করে। এ সব বিষয়ে সঠিক তথ্যের জন্য প্রয়োজনে পেশাদার কোনও ব্যক্তির সাহায্য নিতে হতে পারে।

৪. ঋণ করা ভাল
ঋণমুক্ত থাকার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ঋণ থাকা ভাল বিষয়। আসলে, কোনও নাগরিকের নামে ক্রেডিট (Credit) থাকা অন্য যে কোনও আর্থিক পদক্ষেপের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কোনও ক্রেডিট ইতিহাস (Credit History) না থাকলে ঋণদাতারা সাধারণত ঋণ অনুমোদন করতে গড়িমসি করেন। ঋণ-আয়ের অনুপাত এবং ভাল পরিশোধের রেকর্ড থাকলে ভাল ক্রেডিট স্কোর (Score) করা যায়। যাতে ভবিষ্যতে আকর্ষণীয় সুদের হারে ঋণ পাওয়া যায়।
ভাল ক্রেডিট ইতিহাস তৈরি করার জন্য স্বল্প-মূল্যের লোন বেছে নেওয়া উচিত এবং উচ্চ-মূল্যের স্বল্প-মেয়াদী ঋণ গ্রহণ করা এড়িয়ে চলা, যেমন পে-ডে লোন, অ্যাপ-ভিত্তিক ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ, ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত।

৫. উচ্চ মূল্যের ঋণ পরিশোধ করা দরকার:
উচ্চ-মূল্যের ঋণ থাকলে তা আর্থিক গতি হ্রাস করতে পারে। কারণ, এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে আয়ের একটি বড় অংশ EMI দিতেই চলে যায়। দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিলে ঋণ মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ দিতে হয়। অতএব, আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ধরনের ঋণগুলি মিটিয়ে ফেলা ভাল। ফোরক্লোজার (Forecloser) বা আংশিক-পেমেন্ট (Part Payment) বেছে নেওয়ার আগে, জেনে নিতে হবে এর জন্য কোনও অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে কিনা! দিতে হলে তা আয়ের অনুপাতে কী প্রভাব ফেলছে তাও বুঝে নিতে হবে।

৬. দুর্ঘটনার জন্য সঞ্চয়:
জীবন সব সময়ই অনিশ্চিত। প্রবীণ মহিলারাও আপদকালীন সময়ের জন্য তণ্ডুল সঞ্চয় করতেন, টাকা জমাতের লক্ষ্মীর ভাঁড়ে। ঠিক সে ভাবেই কন্টিনজেন্সি ফান্ড (Contingency Fund) খুলে রাখা দরকার। এগুলি আপদকালীন সময়ে কাজে দিতে পারে, যেমন পরিবারে চিকিৎসা, গৃহ ঋণের ডাউন পেমেন্ট বা শিশুর টিউশন ফি পরিশোধের জন্য অর্থের অভাব ইত্যাদি। আদর্শভাবে, কমপক্ষে ১২ মাসের সঞ্চয় করা উচিত।

৭. বিমার সুরক্ষা:
ভারতে জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই বিমা পরিষেবার ক্ষেত্রে ভারতীয় মহিলাদের যোগদান বেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। অনেক মহিলা এবং এমনকী অনেক পুরুষও তাঁদের স্ত্রীয়ের জন্য বিমা কেনার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন না। একজন উপার্জনকারী মহিলার জন্য এটি খুব জরুরি। কারণ যে কোনও দুর্ঘটনায় তাঁর উপার্জন বন্ধ হলে পরিবার বিপদে পড়তে পারে। প্রভাবিত হতে পারে জীবনযাত্রা। এমনকী একজন গৃহবধূও আদতে প্রচুর পরিশ্রম করেন। সপ্তাহে সাত দিনই প্রায় কোনও রকম ছুটি ছাড়া দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। তিনি তাঁর পরিবারের কাজের যত্ন নেন, সন্তানদের শিক্ষকতা করেন, আরও কত কী! এ সব পরিষেবার মাপ অর্থ মূল্যে করা হয় না। সবই ভালবাসার জন্য করা হয়। সবূ থেকে বড় কথা এ সব পরিশ্রম একেবারে অলক্ষিত থেকে যায়। এ সব কারণেও একজন মহিলার জন্য বিমা করিয়ে রাখা প্রয়োজন।

ভারতীয় মহিলার এমনিতেই অপুষ্টিতে ভোগে। তাঁদের অনিয়মিত রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, স্তন ক্যান্সার, হাড়-সম্পর্কিত নানা ব্যাধিতে গুরুতর অসুস্থতার প্রবণতা বেশি৷ সব থেকে বড় কথা মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মহিলাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। ফলে একজন ছাত্রী থেকে শুরু করে কর্মজীবী মহিলা, বা গৃহকর্মী— বয়স নির্বিশেষে, যে কেউ এবং যে কোনও সময় একটি ‘মেডিকেল ইমার্জেন্সি’ (Medical Emergency)-র সম্মুখীন হতে পারেন।

তাই, একজন মহিলার জন্য জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা কভার কেনা শুধুমাত্র ওই মহিলার জন্য নয়, তাঁর পরিবারে আর্থিক সুরক্ষা জন্যও জরুরি। শুধু তাই নয়, এই বিশেষ সুরক্ষা বলয় এনে দিতে পারে অনেকটা মানসিক শান্তিও।

জ্ঞানী মানুষেরা বলেন নারী শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। একজন নারীকে শিক্ষিত করার অর্থই হল একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মকে শিক্ষিত করা। কারণ মা-ই হল সন্তানের প্রথম শিক্ষক। ঠিক একই ভাবে একজন আর্থিক ভাবে সাবলম্বী মহিলা কেবল তাঁর নিজের আর্থিক সিদ্ধান্ত বা দায়িত্বই যে নিতে পারেন, তা-ই নয়। বরং তাঁর পরিবারকে তাঁদের আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শক হিসেবে সাহায্য করতে পারেন। ভারতীয় সমাজে একজন মহিলাকে ‘বাড়ির লক্ষ্মী’ নামে ভূষিত করা হয়। বহু বছর ধরেই এমনটা মনে করা হয় সংসারের অর্থনৈতিক প্রগতির উপর গৃহকর্ত্রীর একটা প্রভাব রয়েছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেই মহিলার অবশ্যই আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করা উচিত। এর সাহায্যেই তার পরিবারের ভবিষ্যতে শুভ আলো নিয়ে আসা সম্ভব।

(Source: news18.com)