
#কলকাতা: দেশ জুড়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ধুমধাম করে জন্মাষ্টমী (Sri Krishna Janmashtami) পালন করা হচ্ছে। শাস্ত্রে তাঁকে ১৬ কলায় পারদর্শী একমাত্র ঈশ্বরের মর্যাদা দেওয়া হয়। মহাভারত যুদ্ধের আগে কুরুক্ষেত্রে তিনি অর্জুনকে যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তাকে ম্যানেজমেন্ট এবং নীতির সবচেয়ে বড় শিক্ষা বলে মনে করা হয়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধুমাত্র রাজনীতি বা ধর্ম নয়, আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের বাণী মেনে চললে জীবনে অনেক উন্নতি করা যায়। এই প্রতিবেদনে তাঁর এমন ৭টি বাণী নিয়ে আলোচনা করা হল, যা ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা ভাল রিটার্ন আয় করতে পারবেন।
লক্ষ্য নির্ধারণ:
মহাভারতের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পাণ্ডবদের বিজয়ের লক্ষ্য থেকে সরে যেতে দেননি। ঠিক একই ভাবে বিনিয়োগকারীদেরও নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত এবং লক্ষ্যে অটল থাকলে তবেই সাফল্য আসবে। বিনিয়োগ সব সময় লক্ষ্য ভিত্তিক হওয়া উচিত, যা বিনিয়োগকারীকে নিজের পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে।
প্রত্যেক ছোট বিনিয়োগ বড় লক্ষ্যের সিঁড়ি:
শৈশব কালে বিভিন্ন মানুষেের বাড়ি থেকে মাখন চুরি করার জন্য বৃন্দাবনে প্রসিদ্ধ ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। চুরির হাত থেকে মাখন বাঁচাতে গোপীরা মাখনের পাত্রটি উপরে বেঁধে রাখতেন। তা সত্ত্বেও কৃষ্ণ নিজের বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে একটি মই তৈরি করে হাঁড়ি থেকে মাখন চুরি করে খেতেন। এর থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, এক জন বিনিয়োগকারীর লক্ষ্য যতই বড় হোক না-কেন, প্রতিটি বিনিয়োগকেই ছোট ছোট পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। এসআইপি (SIP)-র মাধ্যমে ছোট ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
লোভ করা উচিত নয়:
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, আগুন যেমন ধোঁয়ার নিচে চাপা পড়ে যায়, ঠিক তেমনই লোভও আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করে। বিনিয়োগকারী যদি বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন, তবে লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তা তুলেও নেওয়া উচিত। যদি নিরাপদ বিনিয়োগেই লক্ষ্য পূরণ হয়, তবে লোভের কারণে স্টক মার্কেটে গিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার কোনও দরকার নেই।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ:
কুরুক্ষেত্রের ময়দানে প্রিয়জনদের দেখে অর্জুন আবেগে আপ্লুত হয়ে যান এবং যুদ্ধ না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একই ভাবে, বিনিয়োগ করার সময় আবেগের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত নয়। আর্থিক সিদ্ধান্ত আবেগ দ্বারা নয়, মানসিক দৃঢ়তার সঙ্গেই নেওয়া উচিত। পোর্টফোলিও-য় অন্তর্ভুক্ত বিনিয়োগের বিকল্পগুলিতে অংশীদারিত্ব বাড়ানো বা কমানোর সময় আবেগের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
ঝুঁকি নেওয়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক:
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন ও কর্ণের সমান ক্ষমতা ছিল। শুধু তা-ই নয়, কর্ণের কাছে ইন্দ্রের কবচও ছিল। যার সাহায্যে তিনি সহজেই অর্জুনকে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই ঝুঁকি থেকে বাঁচান এবং অবশেষে অর্জুন কর্ণকে হত্যা করে জয়লাভ করেন। এক জন বিনিয়োগকারী হিসেবে অর্থ এমন জায়গায় বিনিয়োগ করা উচিত, যেখানে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নেই। যদি বিনিয়োগকারী স্মল ক্যাপ থেকে ভালো রিটার্ন পাচ্ছেন, তবে লার্জ ক্যাপ স্টকে বিনিয়োগ করার কোনও প্রয়োজন নেই। যদি লার্জ ক্যাপ শেয়ারে ঝুঁকি তুলনামূলক কম হয়, তবেই এই পদক্ষেপ করা উচিত।
বিনিয়োগের পরিকল্পনা পরিবর্তন:
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন যে, মানুষ যে-ভাবে পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন পরিধান করে, ঠিক তেমনই আত্মাও পুরাতন শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীরে প্রবেশ করে। এক জন বিনিয়োগকারীর এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, বাজারের অস্থিরতাকে মাথায় রেখে কৌশলও পরিবর্তন করা প্রয়োজনীয়। পোর্টফোলিওতে নতুন বিকল্প যোগ করা আবশ্যক। ঝুঁকি রয়েছে, এমন স্টকগুলি থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে কম তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্পের সন্ধান করতে হবে।
নিজের আর্থিক জ্ঞান বৃদ্ধি করা বাঞ্ছনীয়:
এক শত কৌরব এবং তাঁদের বিশাল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র পাঁচ জন পান্ডব এবং তাঁদের ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী যুদ্ধে নেমেছিল। তবুও শেষ অবধি পঞ্চপাণ্ডবই জয়লাভ করেন। কারণ তাঁদের সঙ্গে ছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞানের ভাণ্ডার। তিনি চতুর এবং বুদ্ধিমান। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের পথ দেখিয়েছিলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই। একই ভাবে এক জন বিনিয়োগকারীর শেয়ার বাজারে প্রবেশের আগে মার্কেট সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে জ্ঞান লাভ করা উচিত। বিনিয়োগ এবং স্টক মার্কেট নিয়ে যত বেশি জ্ঞান থাকবে, লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যাবে।