বাংলাদেশঃ পানির অভাবে ধান খেত ফেটে চৌচির

বাংলাদেশঃ পানির অভাবে ধান খেত ফেটে চৌচির

এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পানির অভাবে আমনখেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির জন্য কৃষকেরা হাহাকার করছেন। এ বছর কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দেওয়াও যাচ্ছে না। কৃষকেরা বলছেন, বৃষ্টি না হলে বা সেচের মাধ্যমে সময়মতো আমনের খেতে পানি দিতে না পারলে ধানের চারা মরে যাবে। ব্যাহত হবে ফসল উৎপাদন।

উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, আমন মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষককে সেচের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে কারণে সেচ কাজ বিঘ্নিত হয়েছিল। তবে এখন আমন ধান চাষের বিবেচনায় রাত বারোটা থেকে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা জানতে পেরেছি। এ সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হলে কৃষির চলমান ক্ষতি কেটে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৯,১২৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টির পানির অভাবে অধিকাংশ জমিই সেচের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে।

পূর্বে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এখন উপজেলায় সেচ কমিটির সাথে মিটিং করে সেচের মাধ্যমে জমিতে পানিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কৃষকদের কথা মাথায় রেখে মাঝ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের কথাও কৃষকদের অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমনের চারা রোপণের পর খেতে এখন পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। কোথাও জমিতে রোপণ করা ধানের চারা রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় শত শত একর জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেচ দিতে বিপত্তিতে পড়েছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, জমি চাষ, শ্রমিক খরচ, ডিজেল, সার ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। ফলে ধান চাষ করে লাভবান হতে পারবেন না তাঁরা। ভাদ্র মাসের শুরুতেই চৈত্রের মতো খরা। রোপণ করা জমির ধান বাঁচাতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন কৃষক।

এই অবস্থায় কৃষকেরা অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ডিজেল শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুচ্চালিত সেচের ওপর ভরসা করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাড়া ডাংরী গ্রামের কৃষক অনিল দেবনাথ, ছোটন মিয়া,দুলাল মিয়া

বলেন, ‘শ্রাবণ গেল, বৃষ্টির দেখা নাই। এখন আবার পানির অভাবে খেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।’

মাইজবাগ ইউনিয়নের মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া বলেন, ‘জীবনভর দেখলাম, শ্রাবণ-ভাদ্র মাস আমন রোপণের সময় জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। সেই পানিতেই আমন আবাদ করি। এবার মেঘ নাই, বিদ্যুৎ নেই, জমি আর বীজতলা তৈরি থাকলেও চারা লাগিয়ে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে জমিতে পানি দিতাম পারতাছি না।’

জাটিয়া ইউনিয়নের ঘাগড়াপাড়া গ্রামের আব্দুল আব্দুল বারেক বলেন, ‘জমি চাষ দিয়া বৃষ্টির আশায় বইসা আছি। ডিজেল, বিদ্যুৎ খরচ দিয়া পোষাইতে পারতাম না বইলা খেত ফালাইয়া রাখছি।’

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর ঈশ্বরগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম অনিতা বর্ধণ বলেন, ‘ বর্তমানে রাত ১২ টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত সেচের জন্য কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রদান করা হচ্ছে। পূর্বে সারা দেশেই বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। সে কারণে ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। এটা শুধু ঈশ্বরগঞ্জেই নয়,এটি ছিল জাতীয় সমস্যা।

তারপরও আমন মৌসুমে কৃষকের কথা চিন্তা করে সেচকাজে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, ‘ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমন মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষককে সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। পূর্বে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচের কাজ বিঘ্নিত হয়েছে।

তবে আমন মৌসুমে কৃষকের কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।’

সান নিউজ/এইচএন