সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে উপচে পড়ছে মাল্টি-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন

সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে উপচে পড়ছে মাল্টি-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন

পড়াশোনা করতে অথবা চাকরি সূত্রে ঘরের ছেলেমেয়েরা পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। কিন্তু দেশেই থাকতে হয় মা-বাবাদের। কখনও-সখনও ছেলে-মেয়েরা বাড়ি ফেরে। কিন্তু কাজ এবং খরচের চাপে নিয়মিত ফেরাও হয় না ঘরে। আবার ভিসা জটের জেরে মা-বাবাদের পক্ষেও ছেলেমেয়েদের কাছে মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাহিদা বাড়ছে মাল্টি-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার!

বিষয়টা বুঝিয়েই বলা যাক। আসলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (UAE) ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক সংস্কার শুরু হয়েছে। যার ফলে তারা সম্প্রতি ঘোষণা করে যে, মাল্টি-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার (Multi entry Tourist Visa) একটা ট্রায়াল হবে। আর এর পরেই দেখা যায়, এই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন উপচে পড়ছে। আর সেখানকার বাসিন্দারাও পাঁচ বছরের এই মাল্টি-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে, এতে তাঁরা নিজেদের মা-বাবা এবং পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর সুবিধা পাচ্ছেন। আর মা-বাবারা যাতে সহজেই ওই দেশে ভ্রমণ এবং প্রবেশের অধিকার পান, তার জন্যই এই সুবিধা কাজে লাগাচ্ছেন বেশিরভাগ আবেদনকারী।

এই ভিসা নীতির জেরে ওই দেশে বসবাসকারী ছেলে-মেয়েদের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠেছে। এমনটাই দাবি করছেন খোদ ওই বাসিন্দারাই। তানিয়া ইলিয়াস (Tanya Ilyas) নামে আবু ধাবিতে বসবাসকারী এক তরুণীর বক্তব্য, “আমার বাবা-মা কর্মসূত্রে এখানেই থাকতেন। ফলে আমরা এখানেই বেড়ে উঠেছি এবং আমি ও আমার বোনেরা এখনও এখানেই থাকি। তাই মাঝেমধ্যে মা-বাবাও আমাদের কাছে এসে থাকেন। কিন্তু প্রতি বার আসার সময় ভিসার জন্য আবেদন করাটা একটা ঝক্কির কাজ। তাই তো আমি এই বছর মা-বাবার জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি এই প্রসঙ্গে আরও জানান যে, “এই ধরনের ভিসার সমস্ত ডকুমেন্টেশন অনলাইনেই হয়ে যায়। যেটা খুবই সহজ-সরল। আর এর জন্য লেগেছিল শুধু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, ৩ মাস বসবাসের প্রমাণ এবং বিমা।”

এই বছরের গোড়ার দিকেই পাঁচ বছরের মাল্টিপল-এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করার কথা ঘোষণা করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। কারণ এই দেশে যাতে আরও তরুণ প্রতিভা আসতে চান, তার জন্যই ভিসা সংস্কারের অধীনে এই পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই বিশেষ ভিসা থাকলে সেলফ স্পনসরশিপে পর্যটকরা একাধিক বার এই দেশে প্রবেশ করতে পারবেন। আর প্রতি বার তাঁরা ৯০ দিন মতো সেখানে থাকার অধিকার পাবেন।

আর শুধু তানিয়াই নন, আবু ধাবিরই আর এক বাসিন্দা জিশাম লতিফ (Jisham Latheef)-ও নিজের মা-বাবার জন্য এই ভিসা নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমরা তিন ভাই। আর আমরা প্রত্যেকেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে থাকি। ফলে আমাদের মা-বাবা মাঝেমধ্যেই আমাদের কাছে আসেন। আর এই ভিসা সেই পথটাই আরও সহজ করে তুলেছে। আসলে ডকুমেন্টেশন এবং প্রক্রিয়াটা খুবই সহজ ছিল।”

এর থেকে আর কী কী সুবিধা মিলবে, সেই বিষয়টাও আলোচনা করে নেওয়া যাক। যাঁরা এই ভিসা নিচ্ছেন, তাঁরা ৯০ দিন থাকার পাশাপাশি সেখানে থেকেই ওই ভিসার মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়িয়ে নিতে পারবেন। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আসলে দেশে বসবাসকারী ছেলেমেয়েদের পরিবার তো বাইরেই থাকে। ফলে তারা যাতে পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে পারেন, সেই জন্যই এই ভিসা আনা হয়েছে। আর মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার জন্য যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁদের গত ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট (৪ হাজার ডলার ব্যালেন্স থাকা আবশ্যক), সংযুক্ত আরব আমিরশাহির স্বাস্থ্য বিমার প্রমাণপত্র, বিমানের টিকিটের কপি এবং বসবাসের প্রমাণ সংক্রান্ত নথি জমা করতে হবে।

এআই মাস বিজনেসমেন সার্ভিস (Al Mas Businessmen Service)-এর জেনারেল ম্যানেজার আবদুল গফুর (Abdul Gafoor) জানাচ্ছেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এই ধরনের ভিসা নিতে আগ্রহী হয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে নিজেদের মা-বাবাদের জন্যই নেওয়া হচ্ছে মাল্টি-এন্ট্রি ভিসা। আসলে এটা সুবিধাজনক, কারণ তাঁদের মা-বাবারা পাঁচ বছর মেয়াদের যে কোনও সময় ইচ্ছে মতো যাতায়াত করতে পারবেন। আর এটা তাঁদের জন্য খুবই সুবিধাজনক, যাঁরা কাজের চাপে সময়ের অভাবে নিজের দেশে ফিরতে পারেন না।”

এই ভিসা প্রসঙ্গে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত আর এক আবেদনকারী শেহনা মনসুরও (Shehna Mansoor)। তিনি বলেন, “আমি এটা আমার মায়ের জন্যই নিচ্ছি। আগে আমাকে মায়ের জন্য রেসিডেন্স ভিসা নিতে হত। আর ওই ভিসা বজায় রাখতে আমার মাকে প্রতি ছয় মাসে এক বার করে এখানে আসতে হত। আর এটা সব সময় সম্ভবও না। কারণ আমার মা-কে নিজের বেশির ভাগ সময়টাই এখানে এবং ভারতে কাটাতে হয়। আসলে আমার বোন ভারতেই থাকে। ফলে এই বিষয়টার উপর সব সময় নজর রাখতে হত আর মা যাতে ওই সময়সীমার মধ্যে এখানে আসতে পারেন, সেটাও দেখতে হত।”

এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় নাগরিক শেহনা আরও জানান যে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দুবাই না পৌঁছতে পারার জেরে বহু বার তাঁর মায়ের ভিসা বাতিল হয়ে গিয়েছে। আর এর জেরে টাকা তো জলে গিয়েছেই, সেই সঙ্গে অন্য ভিসা পেতেও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “এই মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে আমি ও আমার স্বামী সমস্ত নথি প্রস্তুত করছি। আশা করছি যে, খুব শিগগিরিই আমরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারব।”

Published by:Arpita Roy Chowdhury

(Source: news18.com)