কলকাতা: উৎসবের মরশুম প্রায় দোরগোড়ায়। দুর্গাপুজোর পরে একে একে আসবে লক্ষ্মীপুজো এবং দিওয়ালি। ফলে ছুটির তালিকা লম্বা। আর এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে যে-দিকে দুচোখ যায়, সে-দিকে বেরিয়ে পড়লেই হল। তা-ছাড়া গত দুই বছর অতিমারীর জেরে সে-ভাবে বেড়াতে পারেনি মানুষ। প্রায় ঘরবন্দি হয়েই কাটাতে হয়েছে প্রতিটা উৎসব। কিন্তু এখন আর সেই বিধিনিষেধ তেমন নেই, তাই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়বে অধিকাংশ মানুষই। তবে দেশে না-ঘুরে এ-বার বিদেশের মাটিতেই কাটানো যেতে পারে ছুটিটা। সাধ্যের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের সাধও পূরণ হয়ে যাবে। তাই আজ আমরা হদিশ দেব, দেশের কাছেই এমন সব চোখ ধাঁধানো জায়গার, যেখানে গেলে স্বপ্ন পূরণ তো হবেই এবং ছুটিটাও দুর্দান্ত ভাবে উপভোগ করা যাবে।
সিঙ্গাপুর (Singapore):
সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গে উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোদঝলমলে আকাশ এবং ঝাঁ-চকচকে চোখধাঁধানো বহুতলের ছবি। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল শপিং মলও। ইউরেশীয়, পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির মেলবন্ধন চোখে পড়ে এই শহরে। সঙ্গে রয়েছে জিভে জল আনা মুখরোচক খাবারের সম্ভারও। এখানে এলে ব়্যামেন কিংবা এখানকার মিষ্টি জাতীয় খাবার ট্রাই করতে ভুললে চলবে না। পর্যটকদের জন্য আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণের জায়গা হল ইউনিভার্সাল স্টুডিওজ (Universal Studios)। এ-ছাড়া পর্যটকরা সিঙ্গাপুর নদীর উপর ক্রুজে কিংবা মিউজিয়াম আর্ট এবং সায়েন্সেও একটা করে দিন কাটাতে পারেন। আর সবথেকে বড় কথা হল, সিঙ্গাপুরের নৈশজীবনের কথা আমরা সকলেই জানি। শহরের লাইভ মিউজিকের সংস্কৃতিও চাক্ষুষ করার মতো।
উড়ানে কত সময় লাগে: কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুর পৌঁছতে লাগে মাত্র ৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়।
ভুটান (Bhutan):
যাঁরা পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য ভুটান একদম আদর্শ। ভারতের প্রতিবেশী ছোট্ট দেশ ভুটান পুরোটাই পাহাড় দিয়ে ঘেরা। আর আমরা বোধহয় সকলেই জানি যে, ভুটানকে ল্যান্ড অফ দ্য থান্ডার ড্রাগন বলা হয়ে থাকে। পাহাড়ের স্বর্গীয় শোভার পাশাপাশি এখানকার সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক স্থাপত্যকর্ম পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ-ছাড়াও ট্রেকিং, রিভার ব়্যাফটিং এবং রক ক্লাইম্বিংয়ের মতো দুর্ধর্ষ রোমাঞ্চকর আকর্ষণ তো রয়েছেই। এ-ছাড়া হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দেশের খানাপিনাও চিত্তাকর্ষক। তাই এখানে এলে ডাম্পলিং ও এমা দাৎশি থেকে শুরু করে জাশা মারু অবশ্যই চেখে দেখতেই হবে। আর এই সুস্বাদু খাবার খেয়ে পেটের পাশাপাশি মনটাও ভরে যাবে। তবে সবথেকে ভাল বিষয় হচ্ছে, এত আনন্দ পাওয়া যাবে খুবই স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে। অর্থাৎ অত্যন্ত কম খরচেই ভুটান ঘোরা সম্ভব।
উড়ানে কত সময় লাগে: দিল্লি থেকে পারো যেতে লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
নেপাল (Nepal):
ভারতের একেবারে পাশেই অবস্থিত আর একটি ছোট্ট দেশ হল নেপাল। আর পাহাড়প্রেমীদের কাছে নেপালকে তো স্বর্গই বলা চলে। কারণ এখানেই রয়েছে বিশ্বের বেশির ভাগ সর্বোচ্চ পর্বতরাজি। ফলে যাঁরা পাহাড়ে চড়তে ভালোবাসেন, তাঁরা এখানে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন। এখানকার মূল আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল পর্বতারোহণ, রিভার ব়্যাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং ইত্যাদি। এখানেই শেষ নয়, পর্বতের শোভার পাশাপাশি এখানে হাতছানি দেয় জঙ্গলের সবুজ সৌন্দর্য্যও। বলা যায়, বন্যপ্রাণীদেরও বাসস্থান নেপাল। এ-ছাড়া রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ভাস্কর্য। আর নেপালে এলে এখানকার জাতীয় খাবার ডাল-ভাত খেতে ভুললে চলবে না। যা লাঞ্চ কিংবা ডিনারে তো বটেই, সেই সঙ্গে ব্রেকফাস্টেও পরিবেশন করা হয়। এ-ছাড়া পাহাড়ি রাস্তার মোড়ে মোড়ে মিলবে মোমো কিংবা ডাম্পলিং। আর ঠাণ্ডার মধ্যে ঝাল-ঝাল স্যসের সঙ্গে গরমাগরম তুলতুলে মোমো কার না-ভাল লাগে!
উড়ানে কত সময় লাগে: নয়াদিল্লি থেকে কাঠমাণ্ডু পৌঁছতে লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (UAE):
ঝাঁ-চকচকে শহর, পরিষ্কার রাস্তাঘাট এবং সুবিশাল বহুতলের দেশ হল সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। বিলাস-ব্যসন যেন উপচে পড়ে এখানে। সাগর তীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের সবথেকে বড় শহর দুবাইয়ের আকাশছোঁয়া বহুতলগুলি। এ-ছাড়া মরুভূমির মজাও এখানে উপভোগ করা যাবে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এলে পাম জুমেইরার উপর স্কাই-ডাইভিং করতে ভুললে চলবে না। আবার আবু ধাবিতে রয়েছে বিভিন্ন বিলাসবহুল রিসর্ট, দুর্দান্ত দ্বীপ এবং মরুভূমিও। আর এখানে এলে দেখে নিতে হবে এফ১ রেস (F1 race)।
উড়ানে কত সময় লাগে: কলকাতা থেকে দুবাই পৌঁছতে লাগে ৫ ঘণ্টা, আর নয়াদিল্লি থেকে আবু ধাবি পৌঁছনো যাবে মাত্র ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটে।
মালয়েশিয়া (Malaysia):
আদিম সৈকতের সৌন্দর্য্য, সবুজ ঘন জঙ্গল থেকে শুরু করে আধুনিক ঝাঁ-চকচকে শহর – সাধারণত এটাই মালয়েশিয়ার মূল আকর্ষণ। আর পর্যটকরা এখানে এলে বাটু কেভস (Batu caves), মানুকান দ্বীপ (Manukan island), গুনুং গাদিং ন্যাশনাল পার্ক (Gunung Gading National Park) এবং মালাকা ক্রাইস্ট চার্চ (Malacca Christ church) ইত্যাদি-সহ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলি চাক্ষুষ করেন। এ-ছাড়াও এখানে এলে অবশ্যই ঘুরতে হবে ল্যাঙ্কায়ি এবং রেনড্যাং। আর সবথেকে বড় কথা হল, বিশ্বের জনপ্রিয় খাবারের জন্য বিখ্যাত দেশগুলির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মালয়েশিয়া। নানা ধরনের সুস্বাদু খাবারের স্বর্গ এই দেশ। ঝলমলে রঙিন এই দেশে শপিং, সৈকতে নির্ভেজাল ছুটি কাটানো ছাড়াও জঙ্গল এক্সপ্লোর করা যেতে পারে।
উড়ানে কত সময় লাগে: কলকাতা থেকে কুয়ালা লামপুর যেতে লাগবে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা।
ওমান (Oman):
রহস্যময় প্রাচীন গুহা থেকে শুরু করে আধুনিক ভার্স্কর্য – সবই চোখে পড়বে পশ্চিম এশিয়ার প্রাচীনতম এই দেশে। শপিংয়ের দিক থেকে এখানকার মূল আকর্ষণ হচ্ছে, এখানে সব ধরনের ফ্যাশনেবল জামা-কাপড়ের সম্ভার দেখা যায়। সাবেকি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ট্রেন্ডি ফ্যাশনেবল ড্রেস এবং হাতে গড়া গয়না এখানে পেয়ে যাবেন ভ্রমণার্থীরা। সবথেকে ভাল, এই দেশে বেড়াতে গেলে রোড ট্রিপে বেরিয়ে পড়াই যায়। কারণ আনাচে কানাচে রয়েছে পাহাড়-পর্বত এবং বালুরাশির হাতছানি। এ-ছাড়াও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম হল এখানকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক দুর্গ, যা প্রাচীন যুগের নিদর্শন বয়ে বেড়াচ্ছে।
উড়ানে কত সময় লাগে: মুম্বই থেকে মাস্কট যেতে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
থাইল্যান্ড (Thailand):
ভ্রমণপিপাসু বাঙালির বোধহয় সবথেকে প্রিয় বিদেশি ভ্রমণস্থল হল থাইল্যান্ড। এখানকার মূল আকর্ষণ হল, দুর্দান্ত নৈশজীবন, সাদা বালির সমুদ্র সৈকত, কম খরচে শপিং এবং খানাপিনা ইত্যাদি। আর এখানে গেলে অবশ্যই ঘুরে দেখতেই হবে ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ (Phi Phi islands)। এ-ছাড়াও ঘুরতে হবে এলিফ্যান্ট স্যাংচুয়ারি, চেখে দেখতে হবে এখানকার স্ট্রিট ফুডও। থাইল্যান্ডে অবশ্য আকর্ষণীয় জিনিসপত্রের লম্বা তালিকা। পর্যটকরা এখানে থাই মাসাজ নিতে পারেন অথবা থাই ফ্লোটিং মার্কেটও ঘুরে দেখতে পারেন।
উড়ানে কত সময় লাগে: কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক যেতে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
ভিয়েতনাম (Vietnam):
শান্ত সমুদ্র সৈকত, সবুজে মোড়া জঙ্গল, ধানের ক্ষেত এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্তম্ভই ভিয়েতনামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ফলে গত কয়েক বছরে ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে এই দেশের নাম। কেউ যদি ট্রেকিং করতে চান, তা-হলে জঙ্গল পেরিয়ে পাহাড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। আবার কেউ যদি শান্ত সৈকতে বসেই সময় কাটিয়ে দিতে চান, তা-হলেও বলব এই দেশ সকলের ঘোরার জন্যই পারফেক্ট। আর এখানকার খাবারও অত্যন্ত সুস্বাদু। আর দামও অনেকটাই কম। তাই এখানে এলে রাস্তার ধারের খাবারের দোকান থেকে খেতে ভুললে চলবে না।
উড়ানে কত সময় লাগে: নয়াদিল্লি থেকে হ্যানয় যেতে লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিট (ভিয়েতজেট-এর মাধ্যমে)।
সেশেলস (Seychelles):
ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এই দ্বীপপুঞ্জ অনেকটা স্বর্গের মতো। কারণ এখানে দেখা যাবে সমুদ্রের সবজে-নীল জলের হাতছানি এবং সাদা বালির ফাঁকা সৈকত। এমনকী ট্রেকিংয়ের জন্য দুর্দান্ত সুন্দর জায়গাও রয়েছে এই দ্বীপে। সেশেলস-এ এলে অবশ্যই ঘুরতে হবে আনসে লাজিও সৈকতেও। আর মাছের ঝোল প্রেমী বাঙালির জন্য এই জায়গা তো একেবারেই আদর্শ। কারণ এখানে চালের নানা পদের সঙ্গে থাকবে ফিশ কারি এবং ল্যাম্ব স্ট্যু। যা অনায়াসে জিভে জল এনে দেবে।
উড়ানে কত সময় লাগে: মুম্বই থেকে মাহে দ্বীপপুঞ্জ যেতে লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
মলদ্বীপ (Maldives)
ভারতীয় সেলেবদের দৌলতে এই জায়গার সঙ্গে বোধহয় সকলেরই পরিচিতি গড়ে উঠেছে। হামেশাই অবসর কাটাকে তারকাদের এখানে উড়ে যেতে দেখা যায়। চারিদিকে শুধু নীল জলে ঘেরা সমুদ্রের জলরাশি। সাদা বালির শান্ত সৈকত, দারুন প্রবাল প্রাচীর, ইতিউতি সবুজের ছোঁয়া যেন এই দ্বীপকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে মলদ্বীপে বেড়াতে গেলে ওয়াটার ভিলাতেই থাকা উচিত। সেই সঙ্গে ট্রাই করা যেতে পারে বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টসও। আর সঙ্গে চেখে দেখতে হবে মলদ্বীপের সুস্বাদু স্থানীয় খাবার।
উড়ানে কত সময় লাগে: মুম্বই থেকে মালে (মলদ্বীপের রাজধানী শহর) যেতে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। বেঙ্গালুরু থেকে আরও কম সময়ে যাওয়া সম্ভব ৷ চেন্নাই এবং দিল্লি থেকেও ডিরেক্ট ফ্লাইট পরিষেবা রয়েছে ৷