‘Cinema Is True 24 Frames Per Second’, পর্দার বাস্তবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছবির ভাষা খুঁজতেন গোদার

‘Cinema Is True 24 Frames Per Second’, পর্দার বাস্তবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছবির ভাষা খুঁজতেন গোদার

জেনিভা: ‘এন্ড-ক্রেডিট’ (End Card) দেখিয়ে দিল জীবন! চলে গেলেন কিংবদন্তী (legendary) চিত্রপরিচালক (filmmaker), ফরাসি নবতরঙ্গের (french new wave) দিকপাল জঁ-লুক গোদার (Jean Luc Godard)। রেখে গেলেন ‘জাম্প কাট’ (jump cut), ‘হ্যান্ড হেল্ড’ (hand held) ক্যামেরার বিপ্লব-সহ একঝাঁক ঐতিহ্য। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তাবড় চলচ্চিত্রদুনিয়া। ট্যুইটারে শোকবার্তা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট (french president) এমান্যুয়েল মাক্রঁ। কিন্তু এভাবেও চলে যাওয়া যায়? পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, কালজয়ী চিত্রপরিচালককে শেষ বিদায় জানাতে ‘অ্যাসিস্টেড সুইসাইড’ (assisted suicide) বেছে নেওয়া হয়েছিল। সুইৎজারল্যান্ডে এই পদ্ধতি আইনসিদ্ধ। তবে কোনও আনুষ্ঠানিক শেষকৃত্য হবে না তাঁর। নীরবেই সমাধি হবে গোদারের।

ফিরে দেখা…
ষাটের দশক। তোলপাড় ফেলে দিল একটি ছবি। ইংরেজিতে যার নাম ‘ব্রেথলেস’। গল্পকার, আর এক কালজয়ী চলচ্চিত্রকার–ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো। পরিচালনা? জঁ-লুক গোদার। তার আগে পর্যন্ত ফিল্ম ক্রিটিক হিসেবে কাজ করেছেন। ক্যামেরার পিছনে সেই প্রথম। আর প্রথম ছবিতেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন গোটা চলচ্চিত্র জগতে। ছবির ভাষা যে নতুন ধারার হতে পারে, হলিউডি ছবির দাপট কাটিয়ে মেলে ধরেছিলেন ‘বিপ্লবী’ তরুণ। তার আগে পর্যন্ত হলিউডে ছবির ঠাসবুনোট, সম্পাদনা এ-সবের টানটান ‘জাদুতে’ একেবারে মগ্ন থাকত দর্শক। কিন্তু গোদার দেখালেন ক্যামেরায় তোলা ছবি কাঁপতে পারে। মসৃণ সম্পাদনার ঐতিহ্যে বড়সড় ধাক্কা দিল তার ‘জাম্প কাট’। নতুন অস্ত্র পেলেন এডিটররা। সামান্য বিনিয়োগে বিপুল সাফল্য পেল ব্রেথলেস। তবে তার গুরুত্ব শুধু আর্থিক মাপকাঠিতে ধরা সম্ভব নয়। দুনিয়াজুড়ে আজও চলচ্চিত্রের ছাত্রছাত্রীদের কাছে অন্যতম শিক্ষণীয় ছবি এটি।

অনন্য গোদার…
ছবির নতুন ভাষা খুঁজতে চেনা কৌশল বার বার ভেঙেছেন। যেমন, দস্তুর ভেঙে শুটিং লোকেশনে নতুন করে চিত্রনাট্য লেখাটা কার্যত নিজের ‘সিগনেচার’ করে নিয়েছিলেন তিনি। শোনা যায়, পরবর্তীকালে এই জন্য বহু তারকা তাঁর উপর অসন্তুষ্টও হতেন। কারণ যে কোনও মুহূর্তে বদলে যেতে পারে চিত্রনাট্য, ফলে আগে থেকে সংলাপ দিয়ে মহড়া করে এসে লাভ হত না। সম্ভবত এই ভাঙা-গড়ার প্রবণতা থেকেই A Woman Is A Woman, Alphaville, Weekend, All’s Well-র মতো একের পর এক ছবি তৈরি করে গিয়েছেন তিনি। পরিসংখ্য়ান বলছে, তথ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘের ছবি, টিভি সিরিজ ও পূর্ণ দৈর্ঘের কাহিনিচিত্র নিয়ে প্রায় একশোরও বেশি ছবি রয়েছে গোদারের। তবে সংখ্যা দিয়ে এই সৃষ্টির অবদান বিচার করা কঠিন। কোয়েন্টিন টারান্টিনো থেকে মার্টিন স্করসেজির মতো ডাকসাইটে চিত্রপরিচালকরাও অন্ধ ভক্ত তাঁর কাজের।
তবে চেনা-পরিচিতরা বলতেন, রগচটা বলেও বদনাম ছিল গোদারের। এক বার কাছের বন্ধু ত্রুফোর সঙ্গেও ঝামেলা হয়েছিল। বিবাহিত জীবনও খুব সুখের হয়নি। যদিও গোদার মানেই যে প্রত্যাশার বাইরে কিছু, সেটা কম-বেশি সকলেই জানেন। কাজের পরতে পরতে সেই ছাপ রেখে গিয়েছেন ফরাসি নবতরঙ্গের দিকপাল। মৃত্যুতেও খানিকটা সেইরকমই রয়ে গেল।