হাসপাতালের বেডে ভিক্ষুককে পুলিশের নির্যাতন

হাসপাতালের বেডে ভিক্ষুককে পুলিশের নির্যাতন

শওকত জামান, জামালপুর: জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে চিকিৎসাধীন এক ভিক্ষুক ও তার পরিবারের সদস্যদের শারিরিক নির্যাতন ও টেনে হিঁচরে বের করে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের ৪ এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত, ২ কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করেছে পুলিশ সুপার মোঃ নাছির উদ্দীন আহমেদ।

একই সাথে তদন্ত সাপেক্ষে সরিষাবাড়ী থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন পুলিশ সুপার।

জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ৬৫ বছর বয়সী ভিক্ষুক আব্দুল জলিল ২০ শতক জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান সম্প্রতি ওই জমি তাদের দাবি করায় দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালত ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের পক্ষে ডিক্রি দেয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আহত হন আব্দুল জলিল, তার স্ত্রী লাইলী বেগম, বড়ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, মেজো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি, ছোট ছেলে হামদাদুল হকসহ পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়া। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার পর উল্টো মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন ৪ জনসহ ১৫ জনকে আসামী করে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিলসহ ৪ জনকে হাসপাতালের শয্যায় শারিরিক নির্যাতন ও চ্যাংদোলা করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ অন্যদের আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামীদের আটক করা হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে৷ নইলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী জানান, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামীদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপার মোঃ নাছির উদ্দীন আহমেদ জানান, এ ঘটনায় তিনি সরিষাবাড়ী থানার এসআই আলতাব হোসেন, এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই ওয়াজেদ আলী ও এসআই মুন্তাজকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কনস্টেবল মোজাম্মেল হক ও নারী কনস্টেবল সাথী আক্তারকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে পাঠিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে সরিষাবাড়ী থানার ওসি মীর রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

ভিক্ষুকের বসতভিটা জবর দখল করতে তাকে মারধর ও উল্টো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

(Source: sunnews24x7.com)