#কলকাতা: মদ্যপান করে বনে ঢুকবেন না। বিশেষ করে, বনের যে অংশে হাতির যাতায়াত আছে। পুজোর মুখে ঝাড়গ্রাম বন দফতর নির্দেশিকা দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছে। নির্দেশিকায় আরো বলা হয়েছে, মদ্যপ অবস্থায় কেউ যদি হাতির আক্রমনের শিকার হয়ে মারা যায়,তাহলে তার পরিবারকে কোন ক্ষতিপূরন দেওয়া হবে না।
আচমকা এমন নির্দেশিকা কেন জারি করতে হল ঝাড়গ্রাম বন দফতরকে? বনদফতরের এক আধিকারীক বলছেন, গতবছর পূজোর সময় জঙ্গল লাগোয়া একটি পূজো মন্ডপে আচমকাই হামলা চালায় একদল হাতি। হাতির আক্রমনে লন্ডভন্ড হয়ে গেছিল মন্ডপ। কোনরকমে বেঁচে যান ঐ সময়ে পূজো মন্ডপে থাকা মানুষজন। কারন, অনুসন্ধান করতে গিয়ে বনদপ্তর সেখানে প্রচুর মদের বোতল খুঁজে পায়। উৎসবের আনন্দে সেদিন হয়তো একটু বেশি আয়োজন করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু, মদের গন্ধ পেয়েই মন্ডপে ঢুকে পড়ে হাতির পাল। সে কারনে এবার আগেভাগেই মানুষকে সতর্ক করেছে বনদপ্তর। শুধু নির্দেশিকা জারি করাই নয়, হাতির এই গোপন ভয়ঙ্কর সুরাপ্রেমের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে নানা ধরনের প্রচারের আয়োজনও করেছে বনদফতর।
এমনিতেই প্রতিবছর হাতির আক্রমনে জেলায় মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পার্শবর্তী রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকে খাবারের সন্ধানে দলমা পাহাড় ডিঙিয়ে হাতির পাল চলে আসে ঝাড়গ্রামে। ক্ষেতের ফসল থেকে শুরু করে বসতি এলাকায় ঢুকে পড়ে নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করে। হাতি – মানুষ সংঘর্ষে চলতি বছরে ঝাড়গ্রামে মৃতের সংখ্যা ৪৫। গতবছর যা ছিল ২৭। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় বনদফতরের উদ্বেগের কারণ।
ঝাড়গ্রাম জেলায় কমবেশি পূজোর সংখ্যা প্রায় ২০০টি। এরমধ্যে অন্তত ৬০ টি পূজো জঙ্গল লাগোয়া এলাকায়। এই পূজোগুলো নিয়েই বনদপ্তর বেশি উদ্বিগ্ন। বনদপ্তরের এক আধিকারীকের মতে, ঝাড়খন্ড থেকে দলমা পেরিয়ে যে হাতির পাল এখানে আসে, তার প্রধান কারন ঝাড়খন্ডে খাবারের অভাব। পূজোর সময় এই মন্ডপগুলোয় কমবেশি ফল ও সবজি সহ পূজোর নানা উপাচার মজুত থাকে। মন্ডপগুলোয় হানা দেওয়ার এটাও একটা কারন। তার ওপর , সুরার গন্ধ পেলে আর দেখে কে!
ঝাড়গ্রাম জেলা বনদপ্তরের বিভাগীয় কর্তা শেখ রহিমের মতে, এই বিষয়গুলি বিবেচনার মধ্যে রেখেই আমরা এই নির্দেশিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ” আমরা বলছি, মদ্যপ অবস্থায় সন্ধ্যার পর জঙ্গলে ঢুকবেন না। তাতে হাতির আক্রমনে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাতির হামলায় প্রান হারালে মৃতের পরিবার কোন ক্ষতিপূরন পাবে না। ” রহিমের মতে, জঙ্গলে হাতি চলাচলের রাস্তায় অনেক সময় হাতির দল দেখে পর্যটকরা ছবি তুলতে শুরু করেন। কিন্তু, ক্যামেরার ফ্লাশ বাল্বের আলো হাতির চোখে পড়লে হাতি বিরক্ত হয়ে হামলা করতে পারে। তাই ছবি তুলতে হলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই তা করা উচিত।
সারা পৃথিবীতেই পর্যটনের বাড়বাড়ন্তের ফলে, জঙ্গলের প্রানীদের নিভৃত জীবনে সংকট তৈরি হয়েছে। হস্তি মনস্তত্ববিদদের মতে, হাতিদের লোকালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়া ও হামলা চালিয়ে গ্রামের পর গ্রামকে তছনছ করে দেওয়ার পেছনে হাতির ‘পাল্টা জবাব দেওয়া’ র প্রবনতা কাজ করছে। এর সমাধান করার দায়িত্ব মানুষেরই। আমরা তাই প্রাথমিক ভাবে এসব বিষয়ে সচেতন করতে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় থাকা মানুষজনকে প্রচারের মাধ্যৃে এনে বোঝানোর চেষ্টা করছি। যাতে, বহিরাগত পর্যটকদের তারাই এ বিষয়ে সচেতন করতে পারে। তবে, সুরাপ্রেমের বিষয়টি একেবারে নতুন। গতবছরে মন্ডপ হামলার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে বনদপ্তর এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। নতুন করে যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ।