#কলকাতা: সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনের বিকেলবেলা, আলিপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তখন কর্মব্যস্ততার ছবি সুস্পষ্ট। শুরু হয়েছে বালিগঞ্জ কাণ্ডের অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করার প্রক্রিয়া। প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগেই তার গাড়ির বেপরোয়া গতি কেড়ে নিয়েছে এক নিরপরাধ মানুষের প্রাণ। দুপুরের দিকেই আলিপুর আদালতের কলকাতা পুলিশ লক-আপে নিয়ে আসা হয় অভিযুক্তকে। মুখ ঢাকা, তাই সুপ্ত অনুশোচনা বা অন্যান্য কোনও অভিব্যক্তি ছিল কিনা বোঝার কোনও উপায় ছিল না। নিয়মমাফিকই শুরু হয় আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া। অভিযুক্তের আইনজীবী শুরু করেন মহামান্য আদালতের সামনে তার মক্কেলের হয়ে সওয়াল করতে।
একেবারে প্রাথমিক স্তরে অভিযুক্ত এই দুর্ঘটনার সময় কোন পরিস্থিতিতে ছিলেন তা তিনি জানান আদালতকে। প্রথমে BMW গাড়িকে ধাক্কা মারার পরেই খুলে গিয়েছিল জাগুয়ার গাড়িটির এয়ারব্যাগ। এয়ারব্যাগ খুলে যাওয়াতেই তার পক্ষে আর সামনে কি রয়েছে তা দেখা সম্ভব হয়নি। সেই মুহূর্তে সামনে চলে আসেন সেই হতভাগ্য মহিলা এবং ঘটনাস্থলে তিনি প্রাণ হারান। ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন যে অভিযুক্ত সামনে চলে আসা মহিলাকে দেখার মতো পরিস্থিতিতেই ছিলেন না, সেই কথা আদালতকে বোঝাতে চাইছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন না, কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না, তার সঙ্গে সেই মহিলার, কিংবা কোনওভাবে চিনতেনও না তাঁকে। তাই আইনের হিসাব কষে কীভাবে জামিন অযোগ্য ধারা থেকে জামিনযোগ্য ধারার আওতায় অভিযুক্তকে আনা যায় সেই চেষ্টাই করছিলেন অভিজ্ঞ এই আইনজীবী। এই গোটা তর্ক-বিতর্কের মাঝে হঠাৎ করেই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল ২০১৩ সালের জলি এলএলবি সিনেমার একটি সংলাপ, যেখানে অভিযুক্তের আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করা বোমান ইরানি বলেছিলেন, ‘লেকিন আগর আপ ফুটপাথ পে সোয়েঙ্গে, তো মরনে কা রিস্ক তো রহেগা।’
রিলের সঙ্গে রিয়েল জগতের প্রাসঙ্গিকতার কারণ, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের আইনজীবী বললেন, “মানুষ ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটলেও, দোষ হয় গাড়ির’। সত্যিই তো, ভাবুন তো, কেন হাঁটবেন ষষ্ঠী দাস রাস্তা দিয়ে, ফুটপাথ ছেড়ে? বিকেলে জয় রাইডে বেরোনো কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিলাসবহুল গাড়ি তো ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টার বেশি গতিবেগে তাকে ধাক্কা তো মারতেই পারে। স্বাভাবিকভাবেই এই সহজ বিষয়টির বিপক্ষে যুক্তি খাড়া করলেন অপর পক্ষে থাকা পাবলিক প্রসিকিউটর। তিনি মহামান্য আদালতের কাছে সওয়াল করলেন, BMW-কে ধাক্কা মারার আগের এই গতি এত কেন ছিল? বাকি যে তিনজন গাড়িতে ছিল, যারা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই পালায়, তাদেরকে ডেকে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পুলিশকে দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। আদালতের তরফেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে অভিযুক্তকে জামিন না দিয়ে ১২ তারিখ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপর্বে ষষ্ঠী দাসের পরিবার আদৌ ন্যায় পাবে কিনা, সেটা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনা আরো একবার মনে করিয়ে গেল একই সিনেমার সেই সংলাপ, ‘Gareeb Ki Jaan Ameer Ki Gaadi Se Sasti Hoti Hai’।
(Source: news18.com)