পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে মূল স্রোতে ফেরাতে উদ্যোগ এই সংগঠনের

পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে মূল স্রোতে ফেরাতে উদ্যোগ এই সংগঠনের

ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী, কলকাতা-  কোভিড অতিমারীর সময় পেরিয়ে সারা দেশ যখন আলোর উৎসবে মশগুল তখন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত,  পিছিয়ে পড়া শিশুদের একটু অন্য আলোর দিশা দেখাচ্ছে  কলকাতার ‘মাই চিলড্রেন ফাউন্ডেশন’।

পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণীর ছোটো ছোটো শিশুরা যাদের দুই শিক্ষাবর্ষকে কোভিড নষ্ট করেছে, মাই চিলড্রেন ফাউন্ডেশন তাদের জন্য বাংলার বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম যেমন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, মালদা, মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার-সহ নানা জায়গায় কোচিং সেন্টার স্থাপন করে তাদের বিনামূল্যে শিক্ষা দান করছে। ‘মাই চিলড্রেন’-এর চেয়ারম্যান নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশণ, আই আই টি খড়্গপুর, ও আই আই এম কলকাতার প্রাক্তনী দেবাশীষ মজুমদারের কথায়, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে বিগত ২ বছরের অতিমারীর ক্ষত মেরামত করতে  স্কুল শিক্ষার সাথে সাথে এই শিশুদের প্রাত্যহিক কোচিং দরকার। কিন্ত যার খরচ বহন করার ক্ষমতা তাদের মুটে, মজদুর কৃষক, বাবা- মায়েদের নেই। মাই চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের ওইসব শিশুদের ফ্রি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যেক সন্ধ্যায় দক্ষ গৃহ শিক্ষকদের তত্ত্ববধানে নিয়মিত পড়ানো হচ্ছে।’’

এই ফাউন্ডেশনের চিফ অফ কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট  ধ্রুব মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আগামী ১ বছরের মধ্যে এই  বাংলার ১০০ টি সেন্টারের মাধ্যমে ৪০০০ ও আগামী ৩ বছরের মধ্যে আরও ৫০০টি সেন্টারের মাধ্যমে ২০,০০০ শিশুকে ‘রোজ পড়ি, রোজ শিখি’- এই  প্রকল্পের মাধ্যমে  পড়াশোনায় সাবলীল করে তোলা হবে যাতে তারা বড় হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়, ফপসা, পশ্চিম বর্ধমানের রাঙাপাড়া আদিবাসী এলাকা, কুলটি, চলবলপুর, পুরুলিয়ার গোয়ালবেড়িয়া গ্রাম এই সমস্ত জায়গায় আগামী সপ্তাহ থেকেই ক্লাস শুরু হবে।’’

এই উদ্যোগের সফল রূপ দিতে শান্তনু চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ চক্রবর্তীর মতো  রামকৃষ্ণ মিশনের  প্রাক্তনীরাও হাতে হাত রেখে ‘মাই চিলড্রেন ফাউন্ডেশন’-এর সাথে কাজ করছেন। এই সেন্টার গুলিতে পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, সমাজশিক্ষা ও খেলাধুলার পাঠও দেওয়া হবে, নজর দেওয়া হবে তাদের পুষ্টির দিকেও বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মাই চিলড্রেন ফাউন্ডেশনের সুদীপ্ত, সুদেব, তুতুল, ধীমান, উত্তীও, প্রশান্ত  যারা কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা শিক্ষক,তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, সমাজ ও দেশের সার্বিক উন্নতি তখনই সম্ভব হবে যখন আজকের এই পিছিয়ে পড়া শিশুদের আমরা নিজেদের  সন্তানদের মত হাত ধরে সামনের সারিতে এনে দাঁড় করাবো যথার্থ শিক্ষাদানের মাধ্যমে।

এই মহান উদ্যোগটিকে সার্থক করতে হলে সমমানসিকতার বিপুল সংখ্যক মানুষের এগিয়ে আসা দরকার।  তাই এ ব্যাপারে কেউ যদি আগ্রহী হন, কোনও ভাবে নিজেকে এই উদ্যোগে যুক্ত করতে চান, তাহলে ‘মাই চিলড্রেন ফাউন্ডেশন’- এর তরফে একটি মোবাইল নম্বরও জনস্বার্থে প্রচার করা হয়েছে। নম্বরটি হল, ৯৮৩০২৪৩৩৬৮ ৷ প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র এ রাজ্যেরই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ আজ এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য, সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা। ‘শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখাই নয়, রোজগারের টাকার কিছুটা অংশ সমাজের জন্যও খরচ করার প্রয়োজন রয়েছে, এই ভাবনা থেকেই একদিন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কয়েকজন বন্ধু মিলে আড্ডা আর তারপরই পথ চলা শুরু হয় আমাদের এই ফাউন্ডেশনের। পিছিয়ে পড়া শিশুরাও আমাদের সন্তানদের মতোই ওরাও আজ একই পরিবারের সদস্য’। বললেন ধ্রুব মুখোপাধ্যায়।

(Feed Source: news18.com)