হার্ট অ্যাটাকের প্রায় ১০ বছর আগে ইঙ্গিত দেয় এই উপসর্গগুলি, জানুন বিশদে

হার্ট অ্যাটাকের প্রায় ১০ বছর আগে ইঙ্গিত দেয় এই উপসর্গগুলি, জানুন বিশদে

#কলকাতা: আকস্মিক মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হল হার্ট অ্যাটাক। আসলে এটা অনেকটা নীরব ঘাতকের মতো। ধরা যাক, কেউ রোজকার রুটিন মেনে কাজ করছেন। আচমকাই দেখা গেল, তিনি হয় তো প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলেন। সঙ্গে বুকে অসহনীয় যন্ত্রণা। এমন কি, নড়াচড়ার ক্ষমতা পর্যন্ত থাকে না।

কোনও রকম লক্ষণ ছাড়া বিষয়টা আচমকাই ঘটে যায় বলে একে সাধারণত ‘নীরব ঘাতক’ বলে অভিহিত করা হয়। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কিন্তু অনেক আগে থেকেই প্রকাশ পায়। আসলে সাধারণত অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরিস নামের এক অবস্থার সম্মুখীন হন রোগী। এমনকী প্রায় ১০ বছর আগে থেকেই এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। কিন্তু সবার আগে জানতে হবে যে, এই অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরিস আদতে ঠিক কী?

অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরিস:
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরিস আসলে করোনারি আর্টারি ডিজিজের উপসর্গ মাত্র। সে-ক্ষেত্রে অনেক সময় বুকে চাপ-চাপ ভাব অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি বুকে ব্যথা এবং ভারি-ভাবও অনুভূত হয়। আবার আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বা এএইচএ-র মতে, অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরিস আসলে চার ধরনের হয়ে থাকে। যথা – স্টেবল অ্যাঞ্জাইনা, আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনা, মাইক্রোভাস্কুলার অ্যাঞ্জাইনা এবং ভাসোপেস্টিক বা ভ্যারিয়েন্ট অ্যাঞ্জাইনা।

গবেষণা থেকে কী কী জানা যাচ্ছে?
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ এএইচএ-তে। তাতে জানা গিয়েছে যে, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রায় ১০ বছর আগে এই অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরিস হতে পারে। এই গবেষণায় সাহায্য করেছে এনআইএইচআর অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ কোলাবোরেশন ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস। তারা ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেনারেল প্র্যাকটিশনার (জিপি), হাসপাতাল এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছে। যার মধ্যে ছিলেন প্রায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। যাঁদের বুকে ব্যথা কিংবা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের কোনও ইতিহাস ছিল না।

এই তথ্য থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে, যাঁদের বুকে ব্যথা থাকে, প্রথম বছরেই তাঁদের ১৫ শতাংশেরও বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। আর গোটা ১০ বছরে সেই ঝুঁকিটা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। সেখান থেকে এটাও পাওয়া গিয়েছে যে, শুধুমাত্র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৩০ শতাংশ রোগীকে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের জন্য লিপিড হ্রাসকারী ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
গবেষকদের মতে, যাঁদের কোনও কারণ ছাড়াই বুকে ব্যথা হয় অথবা যাঁরা উচ্চ ঝুঁকির আওতায় থাকেন, তাঁদের উপর আরও বেশি করে নজরদারি চালাতে হবে। যাতে পরবর্তী কালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।

বুকে ব্যথা হলেই জেনারেল প্র্যাকটিশনারের কাছে যাওয়া উচিত:
এই সমীক্ষা প্রকাশের সময় কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিন-এর প্রোজেক্ট লিড এবং বায়োস্ট্যাটিস্টিকস-এর অধ্যাপক কেলভিন জর্ডন জানিয়েছেন যে, বুকে ব্যথা আসলে একটা সাধারণ কারণ, যার জন্য কোনও এক জন জেনারেল প্র্যাকটিশনারের কাছে যেতে হবে। আসলে এই এই ধরনের বুকে ব্যথার নানা কার্যকরী কারণ থাকতে পারে, আর অনেক সময় রোগীদের নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয়ও হয় না। ওই সমীক্ষায় আরও জানা যাচ্ছে যে, এই ধরনের রোগীদেরই পরবর্তী কালে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে।
তিনি আরও বলেন যে, “যে-সব রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে যে সাধারণ ফ্যাক্টরগুলি থাকে, সেগুলিকে চিহ্নিত করাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য। আর এই সব তথ্য জেনারেল প্র্যাকটিশনারদেরও বেশ সাহায্য করবে। যাঁদের বুকে তীব্র ব্যথা হয় এবং যাঁরা উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তাঁরা যাতে প্রথম পর্যায়েই সঠিক ওষুধ পান, সেই বিষয়টাও নিশ্চিত হবে। আর এতে ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমানো যাবে।”

এনআইএইচআর লেস্টার বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর অধ্যাপক মেলানি ডেভিস জানিয়েছেন যে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধির আওতায় থাকা রোগীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সঠিক দিক খুঁজে বার করবে এই গবেষণা। ফলে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া যাবে।

হার্ট অ্যাটাকের সবথেকে সাধারণ কিছু উপসর্গ:
এএইচএ-র মতে, হার্ট অ্যাটাকের কিছু উপসর্গ রয়েছে, যা দেখামাত্রই সাবধান হওয়া উচিত-
বুকে অস্বস্তি
দেহের উপরের অংশে অস্বস্তি
শ্বাসকষ্ট
বমি-বমি ভাব
ঠান্ডা ঘাম
মাথা ঘোরানো বা মাথা হালকা হয়ে আসা
উত্তেজনা, কাশি অথবা শ্বাস নিতে গিয়ে বুকের মধ্যে ঘড়ঘড়ে শব্দ প্রভৃতিও হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে

হার্ট অ্যাটাকের বুকে ব্যথা বনাম বদহজম থেকে হওয়া বুকে ব্যথা – দু’টোকে কীভাবে আলাদা করা যায়?
হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং জানিয়েছে যে, বুকের পাঁজরের কাছে ব্যথার পাশাপাশি সেখানে জ্বালা-জ্বালা ভাব কিন্তু হার্টবার্ন (জিইআরডি)-এর লক্ষণ হতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বা এএইচএ-র মতে, অধিকাংশ হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বুকের ঠিক মাঝবরাবর অস্বস্তি হতে থাকে। যা এক মিনিটেরও বেশি স্থায়ী হয়। এটা এক বার চলে গিয়েও তা আবার ফিরে আসতে পারে। তার সঙ্গে বুকে অস্বস্তিকর চাপ, বুক ভার হয়ে আসা এবং ব্যথা অনুভূত হয়।

এই ধরনের লক্ষণের পাশাপাশি আরও কিছু উপসর্গের উপর নজর দিতে হবে। আবার হার্টবার্নের সঙ্গে থাকে বুকে জ্বালা-জ্বালা ভাব আর মুখে টক-টক বা অ্যাসিডিক স্বাদ। এ-ছাড়াও শুয়ে পড়া কিংবা উঠে বসার সময় বুকে ব্যথা আরও বাড়তে থাকে। আর হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথার সঙ্গে থাকে চোয়াল, ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, হাতে ব্যথা ও অস্বস্তি। এর পাশাপাশি থাকে শ্বাসকষ্টও। এই ধরনের উপসর্গ প্রকাশ পেলেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে রোগ নির্ণয় এমনকী হার্ট স্ক্রিনিং করাতে হবে।

(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)

(Feed Source: news18.com)