বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় আফতাব এর আগেও মারধর করেছে শ্রদ্ধাকে, চাঞ্চল্যকর দাবি !

বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় আফতাব এর আগেও মারধর করেছে শ্রদ্ধাকে, চাঞ্চল্যকর দাবি !

নয়াদিল্লি: গত কাল অর্থাৎ সোমবার থেকেই দেশের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। নেপথ্যে রয়েছে একটা নৃশংস খুনের ঘটনা। রীতিমতো ঠান্ডা মাথায় এই খুনের ছক দেখে হাড়হিম হয়ে গিয়েছে গোটা দেশবাসীর।

অভিযোগ উঠেছে, নিজেরই লিভ-ইন সঙ্গী আফতাব আমিন পুনাওয়ালার হাতে খুন হয়েছেন শ্রদ্ধা ওয়ালকর। দু’জনে মুম্বইয়ের বাসিন্দা হলেও দিল্লিতে চলে এসে তাঁরা লিভ-ইন করতে শুরু করেন। পরিবারের অমতেই এক প্রকার আফতাবের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছিলেন শ্রদ্ধা। দিল্লিতে আসার কিছু দিন পর থেকেই আফতাবকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। আর এর জেরে খুন হতে হয় তাঁকে। শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি আফতাব। এর পর প্রেমিকার দেহের ৩৫ টুকরো করে সে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। খুনের ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ মে। তবে সামনে এসেছে সাম্প্রতিক কালে। শ্রদ্ধার দেহে যাতে পচন না-ধরে, তাই তা স্টোর করে রাখার জন্য একটি রেফ্রিজারেটরও কিনেছিল আফতাব। তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসে পুলিশের। জানা গিয়েছে, মার্কিন অপরাধমূলক ওয়েব সিরিজ ডেক্সটার দেখেই সঙ্গীকে খুনের ছক কষেছিল আফতাব।

শ্রদ্ধার এই মর্মান্তিক পরিণতির কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই মুখ খুলেছেন তাঁর বন্ধুবান্ধবও। তাঁদের দাবি, শ্রদ্ধা-আফতাবের সম্পর্ক কখনওই তেমন ভাল ছিল না। এমনকী শ্রদ্ধাকে নিয়মিত মারধরও করত অভিযুক্ত। তবে চাইলেও সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি শ্রদ্ধা। আর সেটাই কাল হয়েছে বলে আক্ষেপ তাঁর ঘনিষ্ঠদের।

সংবাদ সংস্থা এএনআই থেকে পাওয়া তথ্যে উঠে এসেছে শ্রদ্ধার বন্ধু মহারাষ্ট্রের পালঘরের বাসিন্দা রজত শুক্লার বয়ান। রজতের দাবি, শ্রদ্ধা এবং আফতাব বিগত ২০১৮ সাল থেকেই সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। প্রথম দিকে সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। ভালই ছিলেন দুটিতে। কিন্তু তার পর আচমকাই এক সময় শ্রদ্ধা রজতের কাছে জানিয়েছিলেন যে, আফতাব তাঁর গায়ে হামেশাই হাত তুলছেন। সঙ্গী মারধর করলেও শ্রদ্ধা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না বলেও দাবি। এর পরে দু’জনেই চাকরি সূত্রে দিল্লি শিফট করেছিলেন।

একই সুর শোনা গিয়েছে শ্রদ্ধার আর এক বন্ধু লক্ষ্মণের কথাতেও। তাঁর দাবি, এক দিন তাঁর কাছে মেসেজ করেছিলেন শ্রদ্ধা। সেই মেসেজে ছিল ওই তরুণীর বাঁচার আর্তি। শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন যে, উদ্ধার করা না-হলে ওই রাতেই তাঁকে খুন করে দেবে আফতাব। এই মেসেজ পেয়েই শ্রদ্ধাকে উদ্ধার করেন লক্ষ্মণ। কিন্তু আফতাবের প্রতি ভালবাসার কারণে আর থানা-পুলিশ আর করেননি শ্রদ্ধা। সেই সময় কিছুটা সামাল দেওয়া হলেও কিছু দিন পর থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না শ্রদ্ধার সঙ্গে। লক্ষ্মণের আরও দাবি, জুলাই মাস থেকেই শ্রদ্ধাকে নিয়ে তাঁর মনে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আসলে তিনি বার বার শ্রদ্ধাকে মেসেজ করার পরেও উল্টো দিক থেকে কোনও জবাব আসত না। এমনকী, ফোনেও তিনি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। জানা যায়, শ্রদ্ধার ফোনও স্যুইচড অফ। এর পর তিনি শ্রদ্ধার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে গোটা ঘটনার কথা জানান। এই ঘটনা শুনেই পুলিশের দ্বারস্থ হয় শ্রদ্ধার পরিবার।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিল্লির মেহরৌলি এলাকায় শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে তাঁর লিভ-ইন সঙ্গী। সেই দেহ ৩৫ টুকরো করেছিল সে। আর দেহে যাতে পচন না-ধরে তার জন্য ৩০০ লিটারের একটি ফ্রিজে কয়েক সপ্তাহ ধরে লুকিয়ে রেখে দিয়েছিল। এর পর প্রমাণ লোপাটের জন্য রক্ত কীভাবে পরিষ্কার করতে হয়, সেই বিষয়টার জন্য বার বার গুগল সার্চ করেছিল আফতাব। এখানেই শেষ নয়, কয়েক সপ্তাহ ফ্রিজে দেহাংশ রাখার পর প্রমাণ ধামাচাপা দিতে গভীর রাতের দিকে বিভিন্ন জঙ্গলে গিয়ে তা ফেলে আসতে থাকে। এই ঘটনা সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন তদন্তকারীরাও। এখনও তাঁরা শ্রদ্ধার দেহের বিকৃত অংশ এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের সন্ধান করছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত আফতাব এক জন প্রশিক্ষিত শেফ। অপরাধ করার পরেও ৬ মাস ধরে প্রমাণ লোপাটের ফন্দি এঁটেছিল সে। শনিবার সকালেই গ্রেফতার করা হয় আফতাবকে। পুলিশি জেরার মুখে সে জানিয়েছে, বার বার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকায় তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। আর সেই রাগেই শ্রদ্ধাকে খুন করে সে। আর তাঁকে খুন করার পরে সেই দেহ নিয়ে একই বাড়িতে থাকত সে। এমনকী শ্রদ্ধার পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের যাতে সন্দেহ না-হয়, তার জন্য তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কথা বলতো আফতাব নিজেই। এর পর আমেরিকান টেলিভিশন সিরিজ ডেক্সটার থেকে শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করার ছক মাথায় আসে তার। এর পর আফতাব আরও দাবি করেছে যে, শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখেছিল সে। আর যাতে দুর্গন্ধ না-ছড়ায়, তার জন্য ধূপকাঠি এবং রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করতো সে। এর পর দেহাংশগুলি মাঝ রাতে পলিব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে তা বিভিন্ন এলাকায় ফেলে আসত। দেহের কোন অংশে আগে পচন ধরতে শুরু করেছে, তা দেখে, সেই অনুযায়ী দেহাংশগুলিকে ফেলে আসত আফতাব।

তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত দেহাংশ ছুড়ে ফেলার বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী তল্লাশি চালিয়ে দেহের ১৩টি টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেটা শ্রদ্ধারই দেহাংশ কি না, তা ফরেন্সিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই নিশ্চিত করা সম্ভব। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের এখনও সন্ধান পায়নি পুলিশ।

(Feed Source: news18.com)