Human Reproduction: বিশ্ব জুড়ে শুক্রাণু উৎপাদনের হার তলানিতে! অচিরেই কি তবে থেমে যাবে সভ্যতার রঙিন জয়যাত্রা?

Human Reproduction: বিশ্ব জুড়ে শুক্রাণু উৎপাদনের হার তলানিতে! অচিরেই কি তবে থেমে যাবে সভ্যতার রঙিন জয়যাত্রা?

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? কিন্তু সে তো ব্যক্তি-মানুষের ক্ষেত্রে! মানবজাতির মৃত্যু ঘটলে? সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, সামগ্রিক ভাবে পুরুষের শুক্রাণুর উৎপাদন-হার ইদানীং কমছে। আর তার জেরেই আগামী দিনে সন্তানের জন্মদানে সংকটের মুখে পড়তে পারে দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই মানবজাতি। শেষ হয়ে যাবে মানবসভ্যতার চাকা গড়ানো? জানা গিয়েছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষের শুক্রাণুর হার অর্ধেকের বেশি কমেছে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে এক পত্রিকায়। সেখানে একদল গবেষক বলেছেন, পুরুষের শুক্রাণুর উৎপাদন-হার কমা রোধ করার জন্য এখনই কোনও পদক্ষেপ করা না হলে মানবজাতি আগামী দিনে সন্তানের জন্মদানে সংকটে পড়বে। বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই জাতি!

‘হিউম্যান রিপ্রোডাকশন আপডেট’ নামে ব্রিটেনের এক পত্রে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। নিজেদের শুক্রাণু উৎপাদনক্ষমতার বিষয় নিয়ে তেমন সচেতন ছিলেন না এমন ১৫৩ জন পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে গবেষণাটি হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে– ১৯৭৩ সালে থেকে ২০১৮ সাল এই সময়ে-পর্বে শুক্রাণুর ঘনত্ব গড়ে ৫১.৬ শতাংশ কমেছে। এই সময়ের মধ্যেই, মানে এই ৪৫ বছরে শুক্রাণুর উৎপাদন-হার কমেছে ৬২.৩ শতাংশ! ২০১৭ সালে এই গবেষকেরাই শুক্রাণুর উৎপাদন-হার নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। গবেষণায় তখন দেখা গিয়েছিল, গত চার দশকে পুরুষের শুক্রাণুর  উৎপাদন-হার কমে অর্ধেকে নেমেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে থেকে প্রাপ্ত এ-জাতীয় তথ্য না থাকায় গবেষণার ফল শুধু ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল। তবে এবার গবেষকেরা ৫৩টি দেশের পুরুষদের শুক্রাণু নিয়ে গবেষণাটি করেছেন। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলির পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদন কমার বিষয়টি তাই এবার উঠে এসেছে।

১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে সব মহাদেশ থেকে সংগৃহীত এ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, এই সময়-পর্বে শুক্রাণু উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গবেষকেরা দেখছেন, প্রতিবছর পুরুষের শুক্রাণুর  উৎপাদন-হার কমেছে ১.১৬ শতাংশ করে। তবে এ শতকে শুক্রাণুর  উৎপাদন-হার কমছে সব চেয়ে বেশি। কারণ, ২০০০ সালের পরের তথ্যে দেখা যায়, এই সময়ে প্রতিবছর পুরুষের শুক্রাণুর  উৎপাদন-হার গড়ে ২.৬৪ শতাংশ কমেছে!

গবেষণা-নিবন্ধটির অন্যতম লেখক এপিডেমিয়োলজির অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পাবলিক হেলথ গবেষক হাগাই লেভিন বলেছেন, ‘বিশ্ব যে ভুল পথে আছে, এ তারই আরও একটি ইঙ্গিত। এ নিয়ে আমাদের কিছু করতে হবে। এটা একটা সংকট। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছনোর আগে এখনই এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের পদক্ষেপ করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, পুরুষের শুক্রাণুর হার কমার বিষয়টি স্পষ্টতই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার বিষয়টিকেই তুলে ধরেছে।

পাশাপাশি, এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এখানে পুরুষের বয়স, বীর্যপাত না হওয়ার সময়সীমা, শুক্রাণু উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলি বিবেচনায় নেওয়া হলেও শুক্রাণুর মান যাচাইয়ের অন্য বহু বিষয় বিবেচনার মধ্য আনা হয়নি।

কিন্তু কেন পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদনের হার এভাবে কমছে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধূমপান, মদ্যপান, ওবেসিটি বা স্থূলতা এবং দীর্ঘদিন ধরে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার না খাওয়ার মতো বদভ্যাস পুরুষের শুক্রাণুর উৎপাদন-হার কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি জীবনযাপনগত নানা বিষয়ও এই সংকটের জন্য পরোক্ষ ভাবে দায়ী।

কোনও ভাবেই কি এর হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে না?

অবশ্যই পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই এর মোকাবিলার হাতিয়ার হতে পারে। বাড়াতে সাহায্য করতে পারে শুক্রাণুর উৎপাদন-ক্ষমতা।

আর এটা কোনও ভাবে ঘটাতে না পারলে, সামনে অপেক্ষা করে আছে ধ্বংস আর চিরমৃত্যুর বিভীষিকা!

(Feed Source: zeenews.com)