নোনতা খাবার বেচে কোটিপতি! হলদিরাম ভাইয়েদের গল্প অবাক করবে আপনাকেও!

নোনতা খাবার বেচে কোটিপতি! হলদিরাম ভাইয়েদের গল্প অবাক করবে আপনাকেও!

#কলকাতা: দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, তাবড় রাজনৈতিক নেতার মুখেই শোনা গিয়েছে চপ বিক্রির কথা। স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের কথা বলতে গিয়েই তাঁরা এ সব কথা বলেছেন। কিন্তু তা নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে— রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই।

কিন্তু সত্যিই নিমকি, চানাচুর বিক্রি করে যে এমন পর্যায়ে রোজগার করা যায় যে, সারা দেশে পরিচিতি হয় তা হয় তো অনেকেই ভাবতে পারেন না। সেই কাজটাই করে দেখিয়ে দিয়েছে বিকাজি।

ভারতীয় স্ন্যাক ব্র্যান্ড বিকাজি সম্প্রতি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়েছে। CNBC-TV18 –এর তরফ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিকাজির প্রবর্তক শিব রতন আগরওয়ালের ভাই আগামী ১৮ মাসের মধ্যে একটি আইপিও চালু করার পরিকল্পনাও করছেন। আসলে, হলদিরাম ব্র্যান্ড একটি পারিবারিক ব্যবসা। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এক সময় এই সংস্থার প্রসার ঘটতে শুরু করলে, হলদিরাম সাম্রাজ্যের আঞ্চলিক ও ট্রেডমার্ক অধিকার নিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

বর্তমানে হলদিরামের তিন ছেলে মূলচাঁদ, রামেশ্বর লাল ও সতীদাস এবং তাঁদের ছেলেরাও বিভিন্ন নামে ভারতীয় নোনতা খাবারের বাজারের দখল নিয়েছেন। এই সব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে হলদিরাম অ্যান্ড সনস, বিকাজি, হলদিরাম নাগপুর, হলদিরাম ভুজিয়াওয়ালা প্রভৃতি।

এই ভাইয়েরাই ভারতের বৃহত্তম স্ন্যাক ব্র্যান্ড ‘হলদিরাম’স চালান। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম জাতিগত স্ন্যাকস কোম্পানি তৈরি করতে দিল্লি এবং নাগপুরে তাদের কাজ একত্রিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ নাগপুর-ভিত্তিক হলদিরাম ফুডস ইন্টারন্যাশনাল পরিচালনা করেন বড় ভাই শিব কিসন আগরওয়াল, আর দিল্লি-ভিত্তিক হলদিরাম স্ন্যাকস পরিচালনা করেন ছোট ভাই মনোহর এবং মধুসূদন আগরওয়াল। কিন্তু এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে একটি অত্যন্ত মনোজ্ঞ কাহিনী, যা অবশ্যই অনুপ্রেরণা দিতে পারে।

১৯১৯ সালে পথ চলা শুরু—

ছোলার বেসন দিয়ে তৈরি ‘ভুজিয়া’ হল বিকানেরের সবচেয়ে প্রিয় জলখাবার। বিকানেরের বাসিন্দা, ১১ বছর বয়সী এক বালক তার বাবার ভুজিয়া ব্যবসায় আগ্রহী হতে শুরু করে। ছেলেটির ভাল নাম গঙ্গা বিষাণ আগরওয়াল। বাড়ির সবাই তাকে আদর করে হলদিরাম বলে ডাকত।

এই আদরের হলদিরাম নামেই ব্যবসা শুরু করার কথা ভেবে বসে গঙ্গে। সেটা ১৯১৯ সালের কথা। তিনি বেসনের পরিবর্তে আটা দিয়ে ভুজিয়া তৈরি করতে শুরু করেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে, তার ব্যবসা শুরু হয় এবং তিনি অল্প সময়ের মধ্যে অনেক সাফল্য অর্জন করেন। একটি দোকান থেকে শুরু হওয়া ব্যবসা ২০২২ সালের মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

গঙ্গা বিষণের তিন পুত্র— মূলচাঁদ, সত্যনারায়ণ এবং রামেশ্বরলাল। মূলচাঁদের চার ছেলে ছাড়াও এক মেয়ে সরস্বতী দেবীও রয়েছেন। বর্তমানে এই প্রজন্ম তাঁর উত্তরাধিকার সামলাচ্ছে।

১৯৫০ সালে কলকাতায় পৌঁছয় ‘হলদিরাম’—

১৯৫০ সালে, গঙ্গা বিষণ তাঁর পুত্র সত্যনারায়ণ এবং রামেশ্বরলালের সঙ্গে কলকাতায় আসেন এবং ‘হলদিরাম ভুজিয়াওয়ালা’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় তাঁর বড় নাতি শিব কিষাণও সঙ্গে ছিলেন। ২০১৬ সালে পবিত্র কুমারের লেখা ‘ভুজিয়া ব্যারনস: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ হাউ হলদিরাম বিল্ট এ ফাইভ থাউস্যান্ড ক্রোর এম্পায়ার’ বইয়ে বলা হয়েছে পঞ্চাশের মূলচাঁদ, তাঁর স্ত্রী এবং তিন ছেলে বিকানের দোকান চালাতেন। এ দিকে কলকাতার ব্যবসাও দ্রুত বেড়েছে।

১৯৬০ থেকে ১৯৯০, সম্পদ বৃদ্ধি—

রামেশ্বরলাল এবং সত্যনারায়ণের হাতে কলকাতার ব্যবসার ভার দিয়ে গঙ্গা বিষণ বিকানেরে ফিরে যান। কিন্তু পরে পরিবারে ফাটল দেখা দেয়। ‘হলদিরাম অ্যান্ড সন্স’-এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। তিন পুত্র পিতার সাফল্য এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। রামেশ্বরলাল তাঁর ভাই মূলচাঁদের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন, যার কারণে কলকাতা ও বিকানের ব্যবসা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

১৯৮০-এর দশকে, শিব কিষাণ আগরওয়াল এবং তাঁর বোন সরস্বতী নাগপুর থেকে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। নতুন রাজ্য মহারাষ্ট্রে সম্প্রসারিত হয় তাঁদের ব্যবসা।

১৯৮৪ সালে, মূলচাঁদের ছোট ছেলে মনোহরলাল এবং মধুসূদন তাদের ব্র্যান্ড ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিয়ে যান। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। মূলচাঁদের ছেলে শিব রতন বিকানেরের ব্যবসার দায়িত্ব নেন এবং এর নাম দেন বিকাজি।

বর্তমান পরিস্থিতি—

মনোহরলাল এবং মধুসূদন ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে ‘হলদিরাম ভুজিয়াওয়ালা’-এর অধীনে ব্যবসা করার অধিকার নিয়ে তাঁদের খুড়তুতো ভাই প্রভু-র সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে নামেন। ভুজিয়া ব্যারনস বই অনুসারে, এই আইনি ঝামেলার মধ্যেই দিল্লি ব্যবসার নাম পরিবর্তন করে ‘হলদিরাম’ করা হয়েছিল।

বর্তমানে ব্যবসা এ ভাবে বিভক্ত—

দিল্লি ইউনিট: মনোহরলাল এবং মধুসূদন আগরওয়াল দ্বারা পরিচালিত

নাগপুর ইউনিট: শিব কিষাণ আগরওয়াল দ্বারা পরিচালিত

বিকানের ইউনিট: শিব রতন আগরওয়াল দ্বারা পরিচালিত

কলকাতা ইউনিট: রামেশ্বরলালের ছেলে প্রভু আগরওয়াল দ্বারা পরিচালিত

এখন সকলেই স্বাধীন ব্যবসা চালান। তবে এর মধ্যে সব থেকে ধনবান দিল্লির ইউনিটটি, তাদের সম্পত্তি পাঁচ হাজার কোটি টাকার। তারপরে নাগপুর চার হাজার কোটি এবং বিকানের ১৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।

বিকাজি-র উন্নতির সঙ্গে সঙ্গেই তিন ভাই ফের তাঁদের ব্যবসা একত্রিত করার এবং আগামী দেড় বছরে একটি আইপিও ফাইল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

(Feed Source: news18.com)