মোহালি হামলা হয়েছিল রকেট-চালিত গ্রেনেডে, কীভাবে এমন মারণ অস্ত্র পায় জঙ্গিরা?

মোহালি হামলা হয়েছিল রকেট-চালিত গ্রেনেডে, কীভাবে এমন মারণ অস্ত্র পায় জঙ্গিরা?

নয়াদিল্লি: সোমবার গভীর রাতে মোহালিতে পঞ্জাব পুলিশের (Punjab Police) গোয়েন্দা সদর দফতরে রকেট-চালিত গ্রেনেড (Rocket Propelled Grenade) বা আরপিজি (RPG) হামলা হয়েছে।

ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হয়নি। রাত প্রায় ৮টা নাগাদ সুরক্ষিত বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় এই হামলা চালানো হয়। হামলার পরেই রকেট-চালিত গ্রেনেড আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

একটি আরপিজি ঠিক কী? এর উৎস কী এবং এটি কী কী ক্ষতি করতে পারে? এইরকম নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। আমরা এই প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।

রকেট চালিত গ্রেনেড কী?

আরপিজি হল সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি একটি অস্ত্র এবং এর পুরো নাম হল রুকনয় পিওটিভোটানকোভি গ্রানারোমিওটের (Rucknoy Peotivotankovvy Granaromyot), যার মোটামুটি অনুবাদের অর্থ হ্যান্ডহেল্ড অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গ্রেনেড লঞ্চার (Handheld Anti-Tank Grenade Launcher)। এটি একটি কাঁধে বহনযোগ্য অস্ত্র, যা ব্যবহার করা সহজ। সাঁজোয়া যান বা বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। আরপিজি-র বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে, যা অস্ত্রের ব্যবহার অনুযায়ী ওয়ারহেডের বিভিন্ন ক্ষমতা, পরিসীমা এবং তীক্ষ্ণতার মাত্রা অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে।

আরপিজি-র উৎপত্তি কোথায়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (World War I) সময়কালে আধুনিক সামরিক যুদ্ধেই মধ্যে আরপিজি-র উৎপত্তি। পশ্চিমা সামরিক শক্তিগুলির দ্বারা এই ধরনের বিভিন্ন হ্যান্ডহেল্ড অস্ত্র তৈরি করা হয়েছিল, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসারিত হল আরপিজি, যা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এই অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে বা হচ্ছে।

সোভিয়েত জমানার আরপিজিগুলি ভিয়েতনাম যুদ্ধের পাশাপাশি আফগানিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইরাক এবং এমনকী জম্মু ও কাশ্মীরেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কাশ্মীরে মোতায়েন থাকা নিরাপত্তা বাহিনী অতীতে নিহত সন্ত্রাসবাদীদের কাছ থেকে আরপিজি উদ্ধার করেছে এবং এর ব্যবহারের প্রমাণও পেয়েছে।

মোহালি হামলার আগে ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের (British Secret Intelligence Service) সদর দফতরে হামলা চালানোর জন্য RPG-22 ব্যবহার করা হয়েছিল। হামলার পরে এটি জানা গিয়েছিল যে প্রথমবারের মতো এই অস্ত্রটি উত্তর আয়ারল্যান্ড বা ব্রিটিশ মূল ভূখণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল।

মোহালিতে হামলায় কী ধরনের আরপিজি ব্যবহার করা হয়েছিল?

যদিও মোহালিতে কী ধরনের আরপিজি-র ব্যবহার করা হয়েছিল, তা বিশদ ফরেন্সিক বিশ্লেষণই বলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক ভাবে এটিকে RPG PG-22 Netto সংস্করণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে করেছেন। এই ধরনের আরপিজিতে একটি ফ্রন্ট-লোডিং টিউব থাকে, যেখান থেকে এটি ফায়ার করা হয়। এটি ২০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, আর এটির মোট কার্যকর পরিসীমা ২৫০ মিটার।

এটি প্রায় ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ফায়ার করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এটি ৭২.৫ ক্যালিবারের ফিন-স্ট্যাবিলাইজড হিট রকেট ফায়ার করে। এই গ্রেনেড ৪০০ মিমি বর্ম, ১.২ মিটারের ইট বা ১ মিটার কংক্রিটের চাদর ভেদ করতে পারে।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আরপিজি রকেটের মতো কার্যকর নয়, তবে হ্যান্ড গ্রেনেডের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সঙ্গে আঘাত হানে। RPG-22 সাতের দশকের শেষ দিকে তৈরি করা হয়েছিল।

এর আগের সংস্করণটি হল RPG-18। এই ধরনের অস্ত্র শুধুমাত্র একবারই ব্যবহার করা যায়, সহজেই লুকিয়ে রাখা যায় এবং দ্রুত চালানো যায়। এই অস্ত্রটি ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে এবং এটি সারা বিশ্বে সহজেই পাওয়া যায়।

এই ধরনের অস্ত্র কি সন্ত্রাসবাদীরা সহজেই হাতে পেতে পারে?

আরপিজি-র মতো সোভিয়েত জমানার অস্ত্রের একটি ক্রমবর্ধমান অবৈধ বাজার রয়েছে, এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। অস্ত্র চোরাচালানকারীদের কাছে এই ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ করা কঠিন নয়। আর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হলে তো কোনও কথাই নেই।

নানা অস্ত্র পাওয়ার রাস্তা ঠিক পেয়ে যায় জঙ্গি দলের মাথারা। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি, বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্লকের দেশগুলি এই অস্ত্র কেনা-বেচার জন্য সুপরিচিত বাজার। অনেক দেশের গোয়েন্দা সংস্থা অন্যান্য দেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে বা তাদের এমনিতেই দেয়।

এমন ভাবে অস্ত্র চালান করা হয়, যাতে কেউ টিকি পর্যন্ত খুঁজে না পায়। কারণ, এই ধরনের লেনদেনের কোনও নথি রাখা হয় না, সবটাই হয় গোপনে। জানা যাচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই হামলার পিছনে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যুক্ত খালিস্তানি চরমপন্থী গোষ্ঠীর সন্দেহভাজন ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের ভূমিকা খুঁজে পেয়েছে।

Published by:Suman Majumder

(Source: news18.com)