ওড়িশা , সপরিবারে ছুটি কাটাবার জন্য একটি দারুণ জায়গা। এখানকার মানুষজন ,পরিবেশ, স্থানীয় খাবার সবকিছুই আমাদের মধ্যে এই রাজ্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। এখানকার রন্ধনপ্রণালী , খাবারের স্বাদ নিঃসন্দেহে আপনার মুখে জল আনবে।
এখানকার সুস্বাদু মানসা ঝোলা, চেন্না পোদা, সাঁতুলা, গাজা, খাজা খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাদে অতুলনীয়। এখানকার লোকেদের মধ্যে ভাত খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি যা তাদের প্রধান খাদ্য। ওড়িশাতে বেশিরভাগ রান্না সর্ষের তেলে হয়।এছাড়া সুস্বাদু মিষ্টি বানাতে ছানার ব্যবহার এখানে খুব বেশি। ওডিয়াদের কাছে দই খুবই উল্লেখযোগ্য উপাদান। ভোজনরসিকদের কাছে এখানকার খাবার খুবই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর কারণ অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানকার খাবার কম তৈলাক্ত এবং কম মসলাদার। রোশাশালার মাস্টারশেফ বিজয়ী এবং কর্পোরেট শেফ অবিনাস নায়ক ওড়িশার ৭টি জনপ্রিয় খাবারের রেসিপি শেয়ার করেছেন।
আপনার যদি রান্নার শখ থেকে থাকে তবে অবশ্যই বাড়িতে এই পদগুলি ট্রাই করে দেখুন –
পাখালা :ওড়িশার খুবই জনপ্রিয় খাবার এই পাখালা। বিশেষ করে গরমকালে এই খাবারটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং গরমের তাপকে হ্রাস করতে খাওয়া হয়ে থাকে। এমনকি ২০ সে মার্চ বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খাবার উদযাপনের জন্য ‘পাখালা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। রান্না করা ভাতকে ওড়িশা ভাষায় পাখালা বলা হয় যা সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে হালকাভাবে গাঁজানো হয়। এই গাঁজানো ভাতের স্বাদ বাড়ানোর জন্য তাতে দই, শসা, কারি পাতা এবং জিরা যোগ করা হয়। ১০ শতকের কাছাকাছি সময়ে এই পাখলা জগন্নাথদেবের মন্দিরে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওড়িশাতেই প্রথম শুরু হয়েছিল এই পাখলা খাওয়ার ব্যাপারটি। ঐতিহ্যবাহী এই সুস্বাদু পদটি ভাজা মাছ, মাখা আলু, ভাজা বেগুন এবং ভাজা আলু দিয়ে খেলে তা এক অতুলনীয় স্বাদে আপনার মনকে ভরিয়ে দেবে।
ডালমা :একইভাবে ওড়িশার ডালমা এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম। গরম ভাতে মুসুর ডালের মতোই একই প্রণালীতে হলুদ মুসুর ডালে জিরা, হিং ,আদা, লাল মরিচ, ঘি ইত্যাদি মিশিয়ে পুষ্টিকর গ্রেভি তৈরি করা হয় এবং গরম ভাতের সঙ্গে তা পরিবেশন করা হয়। অপূর্ব স্বাদে ভরা এই পদটি জগন্নাথ ভগবানের উদ্দেশ্যেও নিবেদন করা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে প্রাচীন ওড়িশার সবচেয়ে শক্তিশালী উপজাতি সাভারাসদের কাছ থেকেই এই ডালমা নামক খাবারের পদটি এসেছে। এরাই আগে প্রভু জগন্নাথকে নীলা মহাদেব/মহাদেব রূপে পূজা করত।
রসগোল্লা :বাঙালির কাছে যেমন রসগোল্লা ছাড়া যে কোন অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ , ওডিয়াদের কাছেও রসগোল্লার গুরত্ব কিছু কম না। ১২ শতকে পুরীর মন্দিরের ভগবান জগন্নাথের নৈবিদ্য হিসাবে রসগোল্লার স্থান ছিল। কটক এবং ভুবনেশ্বরের মধ্যে একটি ছোট জায়গা পাহালা “ওডিশার রসগোল্লা জেলা” নামে সুপরিচিত। এখানে রাস্তার দুই পাশে প্রায় ৫০ টি মিষ্টির দোকানে আপনি বিভিন্ন ধরণের এবং আকারের রসগোল্লা পাবেন। এখানকার রসগোল্লার চিনির রসে বানানো হয় বলে এগুলো বিশেষত বাদামি রঙের হয়।
আম্বিলা :মৌসুমি শাকসবজি, বাঁশের ডাল (কড়াডি) এবং শুকনো আম দিয়ে তৈরি আম্বিলা ওড়িশার পশ্চিমাঞ্চলের লোকেদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এটি প্রস্তুত করতে সব উপাদানগুলোকে ভালো করে সিদ্ধ করে তারপর তাতে খুব অল্প মশলা মিশিয়ে স্যুপের মতো বানানো হয় , এবং একে আরো সুস্বাদু বানাতে উপরে ভাঙা চাল গুঁড়ো করে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এটি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদে একটু ট্যাঙ্গি হয়। গরম ভাতের সঙ্গে আম্বিলা ওখানকার লোকেদের কাছে খুবই প্রিয় খাবার।
দহি বেঙ্গানা :ওড়িশা এবং বাংলার খুবই সুপ্রসিদ্ধ খাবার এই দহি বেঙ্গানা অর্থাৎ দই বেগুন। বেগুন ভালো করে ভেজে নিয়ে বিভিন্ন মশলা এবং দই দিয়ে তৈরি করা হয় এই রেসিপিটি। দুপুরে এবং রাতে গরম ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে এই খাবারটি খাওয়া হয়ে থাকে।
এন্ডুরি পিঠা :এন্ডুরি পিঠা ওড়িশার খুব প্রিয় এবং সুস্বাদু একটি পদ যা বিশেষ করে প্রথমাষ্টমীর মতো উৎসবের সময় প্রস্তুত করা হয়। হলুদের পাতায় সুগন্ধি চাল দিয়ে এই ধরণের পিঠা বানানো হয়, উড়াতে দল , নারকেল এবং গুড় পুর দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিট ভাপিয়ে গরম গরম পরিবেশন করা হয়। স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারটি জিভে জল আনার মতো লোভনীয়।
সাঁতুলা:সাঁতুলা ,খুবই পুষ্টিকর একটি পদ যা ওডিয়ারা বিশেষ করে রাতের খাবারের জন্য ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন শাকসবজি সেদ্ধ করে খুব অল্প তেল এবং মশলা (যেমন হলুদ) দিয়ে তৈরি করে তাতে রসুন, সরষে , লাল মরিচ এবং পাঁচফোড়ন মেশানো হয়। এই খাবারটি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং সহজপাচ্য এবং ওজন কম করতে খুবই সহায়ক। এই খাবারটি ওডিশার দক্ষিণাঞ্চলে খিরা সাঁতুলা নামে পরিচিত।
আপনি যদি ভোজনরসিক হয়ে থাকেন , তাহলে অবশ্যই ওড়িশা ঘুরে আসুন এবং এখানকার জিভে জল আনা , জনপ্রিয় সব খাবারগুলির স্বাদ গ্রহণ করুন। ভিন্ন গুন এবং স্বাদযুক্ত ওড়িশার বৈচিত্র্যময় খাবার আপনার ওড়িশা ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখবে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।