প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজো করা নিয়ে মতানৈক্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্দরেই

প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজো করা নিয়ে মতানৈক্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্দরেই

আবীর ঘোষাল, কলকাতা: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাগদেবীর আরাধনা করা নিয়ে দাবি আর পাল্টা দাবি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্দরেই।

‘‘হঠাৎ সেখানে প্রতিমা পূজা করার জন্য জেদ অশোভন।’’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই লাইন লিখে ট্যুইট করেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয় চন্দ। সুপ্রিয় আবার প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী৷ এর কিছু সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্সির আর এক প্রাক্তনী সন্দীপন মিত্র ট্যুইট করে লেখেন, “সিটি কলেজ ব্রাহ্মদের, এবং ব্রাহ্মরা প্রতিমাপূজক নন, এ-কথা প্রত্যেক ছাত্রই জানেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার ৫০ বৎসর পরে হঠাৎ সেখানে প্রতিমা পূজা করার জন্য জিদ অশোভন।”

‘‘Being a student of history, you should have quoted both the sentences in order to give a clear idea of the context.” এই ট্যুইট যুদ্ধের মধ্যেই, “প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাগদেবীর আরাধনা হবে।” এই শীর্ষক ট্যুইটার ভোটিং শুরু করেন অরিত্র মণ্ডল। ফলে বাগদেবীর আরাধনা নিয়ে রীতিমতো লড়াই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্দরেই।

প্রসঙ্গত, রবিবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিটের পেজে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বারবার অনুমতি চাইলেও তাদের সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইউনিটের দাবি, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো হবে, দেবী সরস্বতীর আরাধনা হবে এর মধ্যে নেতিবাচক কোনও মতামত থাকতে পারে না। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতভাবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা সম্ভব নয়, এমনই জানিয়েছেন আমাদের ডিন অফ স্টুডেন্টস। অথারিটি স্পষ্টভাবে যে পয়েন্টটি তুলে ধরেছেন- প্রেসিডেন্সি সেক্যুলার ক্যাম্পাস। অথারিটি হয়ত সেক্যুলার শব্দের সঠিক সাংবিধানিক অর্থ জানেন না। সংবিধানে বলা আছে Secularism is a positive concept, সেখানে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজেদের মতো আচার- অনুষ্ঠান-উৎসব পালন করতে পারবে। সেক্যুলারিজম একটি সদর্থক ভাবনা। সেখানে কোথাও বলা নেই কোনও মানুষ তার নিজস্ব ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারবে না। আমাদের প্রশ্ন অথারিটির কাছে তারা কি সেক্যুলার ক্যাম্পাসের ধোঁয়াশার আড়ালে বাম সংঠনের চাপে নতিস্বীকার করেছেন? কারণ এরকম উদাহরণ ইতিহাসে আমরা দেখতে পেয়েছি যেখানে সুভাষ চক্রবর্তী মহাপীঠ তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বলে তাঁকে সিপিআইএম দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

অথারিটি কখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবিরুদ্ধ আচরণ করতে পারেন না ৷ আমরা মনে করি অথারিটি হয়তো চানও না। দীর্ঘ ২০৬ বছরের ইতিহাসে বাম একনায়কতন্ত্রের অত্যাচারকে আসলে অথারিটি ভয় পাচ্ছে। এরকম ভয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী অযথা পায়। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে বলছি ওদের দিন চলে গেছে, আর ফিরবে না, নিজেরা ঘুরে দাঁড়াও, সত্যের জন্য দাঁড়াও। অকারণে ওদের অযৌক্তিক মানসিকতাকে, কাজকে সমর্থন করা বন্ধ করো। তোমরা পালটা প্রশ্ন করো দেখবে উত্তর দিতে পারবে না ওরা, মুখ বন্ধ। শিক্ষাঙ্গনে সরস্বতী পুজো কেউ আটকাতে পারবে না। অথারিটিকে অসংখ্য চিঠি, মেইল করা হয়েছে, রিপ্লাই হিসেবে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিরুদ্ধ আচরণ পেয়েছি আমরা। প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজো বহু প্রাক্তনীরাও চায়, কিন্তু ওই যে মুখ ফুটে কেউ বলতে সাহস পায় না। তাদের প্রত্যেকের প্রতিনিধি হয়ে আমরা, প্রেসিডেন্সির সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা, জোর গলায় বলছি PUTMCP সরস্বতী পুজো করে দেখাবে। যেহেতু ছাত্রসংসদ এই পদক্ষেপ নিতে অক্ষম সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কথা ভেবে তাই PUTMCP এই শুভ উদ্যোগে হাত লাগালো। শুভ সূচনায় সকলকে আমরা পাশে চাই। প্রেসিডেন্সির ভাইবোনেদের, পশ্চিমবঙ্গের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাইবোনেদের। প্রত্যেকের কাছে আমাদের প্রশ্ন- শিক্ষাঙ্গনে সরস্বতী পুজো করা কি অপরাধ? বামপন্থার অবিবেচক, অযৌক্তিক, অত্যাচারী মানসিকতাকে যদি এখনো প্রশ্রয় দাও তাহলে বুমেরাং হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসতে বেশি সময় লাগবে না। অথারিটিকেও একই কথা বলছি। যত আমাদের বাধা দেওয়া হবে তত আমরা লক্ষ্যের দিকে এগবো। ২৬-এর সকালে বাগদেবীর আরাধনা হবে প্রেসিডেন্সির বুকে ইতিহাসে প্রথমবার।’’

যদিও বাম ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তোলা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

(Feed Source: news18.com)