‘জিন্দেগী কে সাথ ভি, জিন্দেগীকে বাদ ভি’, শ্রুতিকথা হয়ে যাবে না তো! সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় কোটি

‘জিন্দেগী কে সাথ ভি, জিন্দেগীকে বাদ ভি’, শ্রুতিকথা হয়ে যাবে না তো! সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় কোটি

ঝিলম করঞ্জাই, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অরিত্রিক ভট্টাচার্য: আদানিদের সংস্থায় (Adani Group) বিপুল লগ্নি আছে এলআইসি-র (LIC Exposure to Adani Group)। ঋণ দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ফলে চিন্তায় পড়েছেন এলআইসি-র পলিসি হোল্ডার থেকে এসবিআই-এর গ্রাহকরা (SBI Exposure to Adani Group)। দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। বলছেন অর্থনীতিবিদ এবং বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, লাভ এবং ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ এবং ঋণদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে SBI এবং LIC।

দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে, বলছেন অর্থনীতিবিদ এবং বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ

জীবন বিমা শব্দের সঙ্গেই অনেক নিশ্চয়তা এবং ভরসা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু গৌতম আদানির সাম্রাজ্য়ের উদ্বেগের সঙ্গে LIC-র নাম জড়িয়ে যাওয়ায়, এখন কোটি কোটি সাধারণ মধ্য়বিত্তের মনে আশঙ্কার কালো মেঘ। আদানির ব্য়বসার কিছু হয়ে গেলে, এলআইসিতে গচ্ছিত টাকা পাওয়া যাবে তো?

যেমন, লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা, পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টট্যান্ট রাগেশ্রী চৌধুরী LIC পলিসি হোল্ডার। তিনি বলেন, “এলআইসি এখনও পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য ভাবতাম, পাশাপাশি ট্যাক্স সেভিংসের জন্য বিনিয়োগ করতাম, একদিকে আদানি নিয়ে যে ঘটনা, তাতে চিন্তিত রিটার্নগুলি ঠিকঠাক পাব কিনা, পাশাপাশি যে ৫ লক্ষের উপর রিবেট পাওয়া যাবে না, সেগুলিও চিন্তার মধ্যে পড়ছে।”

আদানিদের নিয়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর, লাইফ ইনসিওরেন্স কর্পোরেশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করা হয়েছে,
৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীতে LIC-র মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪৭৪ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা।

কিন্তু আদানি ডুবলে, কি এলআইসিতে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকাও জলে চলে যাবে? এই আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে অন্য়তম হলেন ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা সুমন্তিকা চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমার ও মাযের প্রচুর এলআইসি আছে, গন্ডগোল থেকে সত্যিই চিন্তা হচ্ছে, বন্ধ হয়ে যাবে না তো? পলিসিগুলি তো ভাঙাতেও পারব না, তাই চিন্তা হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে বাজার বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলেন, “বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তায় ধাক্কা খেয়েছে। LIC যেহেতু সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত, তাই আতঙ্কটা আরও বেড়েছে।”

LIC যেমন আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার হোল্ডার, তেমনই স্টেট ব্য়াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা SBI হচ্ছে আদানির গ্রুপকে ঋণদানকারী সংস্থার মধ্যে অন্যতম। দেশের সব চেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এখনও পর্যন্ত গৌতম আদানির সংস্থাকে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ফলে LIC-র আমানতকারীদের সঙ্গে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের একটা বড় অংশ।

অর্থনীতিবিদ মালবিকা রায় বলেন, “এলআইসি-র নাম জড়িয়েছে, সবচেয়ে বড় জীবন বিমা হচ্ছে এলআইসি। তারা বিনিয়োমগ করেছে ও এসবিআই ঋণ দিয়েছে। ভগবান না করুর লোন যদি নন পার্ফর্মিং অযাসেটে পরিণত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের চিন্তার অনেক কারণ আছে। কারণ আমাদের সঞ্চিত টাকাই শেয়ার মার্কেটে খাটছে, সুতরাং এই লোকসান আম জনতার চিন্তার কারণ।”

একই মত অর্থনীতিবিদ রজত আচার্যর। তিনি বলেন, “এলআইসি ও এসবিআই বিনিয়োগ করেছে, এটা শঙ্কার কারণ। আমাদের প্রচুর মানুষ এসবিআইতে সঞ্চয়। আমাদের আরও একটা আশঙ্কা, শুধু এলআইসি বা এসবিআই নয়, পেশনকে ঘিরেও, কারণ পেনশনের সুদের উপর আমাদের সঞ্চয় চলে। চিকিৎসা হয়, এই সুদের হার দিন দিন ধরছে। কারণ এদের উদ্দেশ্যে পনেশনে না রেখে মার্কেট ফান্ডে ট্রান্সফার করা বা বাজারে খাটানো। আদানির সঙ্কট বড় সংখ্যক মানুষের সমস্যা কারণ আছে।”

লাভ এবং ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ, দাবি দুই সংস্থার

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ অবশ্য় আশ্বাসের সুরে দাবি করেছেন, SBI এবং LIC উভয় সংস্থাই আদানি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবৃতি দিয়েছে। তারা বাড়িয়ে কোনও তথ্য দিচ্ছে না। তারা খুব স্পষ্টভাবে বলেছে যে, তারা লাভ এবং ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ এবং  ঋণদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদানি গোষ্ঠীও ইতিমধ্যেই হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রেকর্ড বলছে, এ যাবৎ ভুল প্রমাণিত হয়নি তারা। আদানি গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছে তারা। তাতেই আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে আরও।

(Feed Source: abplive.com)