বিজেপি-কে বেকায়দায় ফেলতে মমতার মোক্ষম চাল! বিধানসভায় এবার ‘বড়’ প্রস্তাব

বিজেপি-কে বেকায়দায় ফেলতে মমতার মোক্ষম চাল! বিধানসভায় এবার ‘বড়’ প্রস্তাব

কলকাতা: পঞ্চায়েতের আগে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে বিজেপি-কে বেকায়দায় ফেলতে এবার মমতার মোক্ষম চাল! আদিবাসী সমাজের দাবি মেনে, সারি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে সরকারি ভাবে প্রস্তাব আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গকে নিশানায় রেখে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধেও প্রস্তাব আনতে চলেছে রাজ্য। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি, বিধানসভায় এই প্রস্তাবের উপরে আলোচনার সম্ভাবনা।

বিগত ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ও ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে আদিবাসী সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে বিজেপি। রাজ্যের আদিবাসী প্রধান জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর ও  ঝাড়গ্রামের বেশিরভাগ আসনই এসেছে বিজেপির দখলে। একইভাবে, উত্তরবঙ্গের আদিবাসী প্রধান আলিপুরদুয়ার, মালদহ, দুই দিনাজপুরে ভাল ফল করেছে বিজেপি।

তাই এবার আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গে বিজেপি গড়ে থাবা বসাতে মরিয়া তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই সারি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিকে সমর্থন করে, আদিবাসী সমাজের আবেগকে ছুঁতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। বিধানসভায় তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়ারও সম্ভাবনা থাকছে ১০০ শতাংশ। সূত্রের খবর, এরপরেই সারি ও সারনা ধর্মের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিটি কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাবে রাজ্য। এদিকে, বিজেপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি-কে আদিবাসী বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে তৃণমূলের।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির আদিবাসী মুখ দ্রৌপদী মূর্মুকে মন্ত্রী অখিল গিরির কটাক্ষ করায় বিষয়টিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে ‘আদিবাসী বিরোধী’ হিসাবে দেগে দিয়েছিল বিজেপি। জোরদার প্রচারও চলেছিল। এবার, পঞ্চায়েতের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে সেই আদিবাসী-অস্ত্রতেই শান দিতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের তৃণমূল।

একুশের বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের মানুষের সমর্থন পেতে রাজ্যের বিরুদ্ধে বঞ্চনার তত্ত্বকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। সেই অস্ত্রে উত্তরবঙ্গের ৬০টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে জয়ীও হয়েছিল তারা। কিন্তু, ওই সমলস্ত জেলার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, গত ২ বছরে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি বিজেপি। ফলে, ধীরে ধীরে বিজেপি-কে সেখানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ভোটে জিতেও স্থানীয় এলাকার উন্নয়ন করতে না পারায়, বিজেপি ছেড়ে শাসকদলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলেও সূত্রের খবর। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের তৃণমূলে যোগ দেওয়া তারই প্রমাণ।

রাজনৈতিক মহলের মতে, এই পরিস্থিতিতে জমি ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিকে পিছন থেকে মদত দিচ্ছে বিজেপি। যদিও, রাজ্যভাগের দাবিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছে না। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের মুখে, রাজনৈতিক কারণেই রাজ্যভাগে মদত দেওয়ার জন্য বিজেপি-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায় তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধেও প্রস্তাব আনার কথা তৃণমূলের তরফে।

যদিও, শাসকদলের এই প্রস্তাবকে পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছে বিজেপি। বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, “আদিবাসী ভোট ফিরে পেতে তৃণমূল এসব নাটক করছে। আমরা কখনওই রাজ্যভাগের পক্ষে নই।” বরং, টিগ্গার দাবি, রাজ্যভাগে মদত দেওয়ার জন্য দায়ী তৃণমল। গোর্খা টেরিটোরিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ তৈরির সময়েই সাংবিধানিক ভাবে গোর্খাদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি মেনে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। অভিযোগ টিগ্গার।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারি দলের এই দুই প্রস্তাবে ভোটের বাক্সে কতটা লাভ হবে তা এখনই বলা কঠিন, তবে, আদিবাসী ইস্যু ও বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় আনা দুই প্রস্তাবের জেরে আগামী বাজেট অধিবেশন যে আবার সরগরম হতে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

(Feed Source: news18.com)